২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

কঠোর অবস্থানে এনসিটিবি

বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ের মান
-

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে দেয়া পাঠ্যবইয়ের মান নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বই ছাপার আগে ও পরে চার স্তরের তদারকি করছে পরির্দশন এজেন্সি। শুধু তা-ই নয়, গভীর রাতে ছাপাখানায় নি¤œমানের বই ছাপানো ঠেকাতে প্রত্যেক প্রেসে ২৪ ঘণ্টার মনিটরিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবার। কাগজের ‘বাস্টিং ফ্যাক্টর’ (স্থায়িত্ব), জিএসএম (উজ্জ্বলতা) কম থাকায় এরই মধ্যে এক হাজার টনের বেশি কাগজ ও আর্ট পেপার বাতিল হয়েছে। পরিদর্শন এজেন্সির কড়াকড়িতে অনেক মুদ্রণকারী প্রেস থেকে নি¤œমানের কাগজ সরিয়ে ফেলেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। মুজিববর্ষে বইয়ের মানে কোনোভাবেই যাতে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার না হয় এবং অন্যান্য মানও নিশ্চিত থাকে এমন কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, বইয়ের মান নিশ্চিতে আমরা গতানুগতিক যে মনিটরিং করি সেভাবেই করছি। আমাদের ইন্সপেকশন এজেন্ট (পরিদর্শন টিম) আছে, তারা দেখছে। কাগজের মান ঠিক আছে কিনা, মুদ্রণ ঠিক আছে কিনা। তারপর আমাদের এনসিটিবি মনিটরিং টিম আছে তারা দেখবে।
জানা যায়, চলতি বছর প্রাথমিকে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৫৩৪ এবং মাধ্যমিক স্তরে ২৪ কোটি ৩৩ লাখ ৩৪ হাজার কপি বই ছাপা হবে। এর মধ্যে প্রাথমিক ৯৮টি লট আর মাধ্যমিকে ২১০, ৭৫ ও ১৭৫ লটে ভাগ করে কাজ দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিকে ৫৬টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে। তার মধ্যে ১০টি বড় প্রতিষ্ঠান কাজের বেশির ভাগ করবে। গত ৬ অক্টোবর মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে কাজ করার আনুষ্ঠানিক পত্র দেয়া হয়েছে। এরপর বই ছাপার জন্য তারা প্রাথমিকে নিয়মিত ৯৮ দিন এবং মাধ্যমিকে ৬০ দিন সময় পাবে।
জানা গেছে, এবার মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে প্রচ্ছদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পাতায় মুজিববর্ষ, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন এবং সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের স্থিরচিত্র ক্যাপশনসহ রঙিন করে ছাপানো হবে। সেজন্য বেশ কিছু ছবি বাছাই করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। তা মুদ্রণের জন্য আলাদা খরচের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, চার স্তরের তদারকির প্রথম স্তরে কাগজের মান দেখা হয়। এজন্য পরিদর্শন এজেন্সি ‘ইনডিপেনডেন্ট ইন্সপেকশন সার্ভিসেস বিডি’ প্রেস থেকে কাগজের তিন কপি নমুনা সংগ্রহ করে এক কপি প্রিন্টার্স, এক কপি এনসিটিবি এবং অন্য কপি ল্যাবে পরীক্ষা করে। কাগজের মান ভালো হলে ছাড়পত্র, না হলে তা বাতিল করে প্রেস থেকে সেই কাগজ সরিয়ে ফেলা হয়। কাগজের ছাড়পত্রের পর বই ছাপা পর্যন্ত প্রতিটি রুল তদারকি করতে একজন ২৪ ঘণ্টা ওই প্রেসে অবস্থান করছেন। ছাপার পর ডেলিভারি পর্যন্ত তা নজরে থাকে। এখানেই শেষ নয়, বই উপজেলায় পৌঁছানোর পর সেখানে নমুনা বই সংগ্রহ করা হবে এবং আগের বইয়ের সাথে মান মিলানো হবে।
জানা যায়, এসব স্তরে আগে নানা কারসাজি হতো। পরিদর্শন টিম ও মুদ্রণকারীদের যৌথ কারসাজিতে নি¤œমানের বই ছাপানো হতো এবং তা সরবরাহ করা হতো। এবার যাতে কোনোভাবেই তা না হয় সেজন্য কঠোর অবস্থানে এনসিটিবি। এবার ‘ইনডিপেনডেন্ট’ ৫২টি প্রেসে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে আলাদা ৫২ জন দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যাদের কাজ হবে প্রেসে নি¤œমানের কাগজ-আর্ট পেপার যাতে ঢুকাতে না পারে তা নিশ্চিত করা, ছাপা হওয়ার পর বইয়ের মান চেক করে ডেলিভারির অনুমতি দেয়া। এরপর উপজেলায় বই পৌঁছানোর পর সেখান থেকে স্যাম্পল নিয়ে তা আবার পরীক্ষা করা।
এনসিটিবির তথ্য মতে, সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ কোটি বই ছাপা কাজের তদারকি প্রতিষ্ঠান প্রথম ১৫ দিনে ২০টি প্রেসের প্রায় এক হাজার টন নি¤œমানের কাগজ বাতিল করেছে। তবে এটিকে বাতিল বলতে নারাজ এনসিটিবি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এটা আসলে বাতিল নয়। কাগজ যদি স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী না থাকে তাহলে রিপ্লেস করে আবার দেবে। এটা বাতিল বা ওই রকম কিছু না। এরকম নি¤œমানের কাগজ পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তো রেগুলার হয়। কাগজ আনে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মিল না হলে আবার স্যাম্পল দেয়, আবার আনে। প্রতিনিয়তই হচ্ছে এরকম। বইয়ের মান রক্ষায় যা যা দরকার সবই করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সূত্র মতে, কাগজ বাতিল করায় কোনো কোনো মুদ্রণ ব্যবসায়ী হুমকি-ধমকির মতো কাজও করেছেন। বইয়ের মান ঠিক রাখতে চলতি বছর ‘বাস্টিং ফ্যাক্টর’ (বইয়ের স্থায়িত্ব) ১৪ থেকে ১৬ জিএসএম, ৮৫ শতাংশ (উজ্জ্বলতা), তদারকি পদ্ধতিসহ বেশ কিছু নীতিতে পরিবর্তন এসেছে। ফলে চলতি বছর নি¤œমানের কোনো কাগজে বই ছাপার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, কাগজের ‘বাস্টিং ফ্যাক্টর’ (স্থায়িত্ব) ১৪ হওয়ার কারণে বছরের মাঝামাঝি সময় বইয়ের পাতা বেঁকে এবং লাল হয়ে যায়। এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বাস্টিং ফ্যাক্টর ১৪ থেকে ১৬ করার প্রস্তাব দেন। সেটি আমলে নিয়ে একদিনের একটি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেখানে মুদ্রণ ব্যবসায়ী, শিক্ষা ও প্রাথমিক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বাস্টিং ফ্যাক্টর ১৬ করা হয়।
মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর কাগজের দাম ছিল টনপ্রতি ৯০-৯৫ হাজার টাকা। করোনার কারণে তা প্রায় অর্ধেক কমে ৪৫ হাজার টাকা হয়েছিল। কিন্তু গত মাস থেকে হঠাৎ করে তা বেড়ে গেছে। পেপার মিলগুলো প্রতি টন কাগজ ৬০ হাজার টাকার কমে দিচ্ছে না। গত বছর খোলা বাজার থেকে কেনা কাগজ ছাড়পত্র পেলেও এবার একই মানের কাগজ গণহারে বাতিল হচ্ছে। এর প্রধান কারণ বাস্টিং ফ্যাক্টর ১৬। তবে এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, টনপ্রতি ১০-১২ হাজার টাকা বাঁচাতে গিয়ে মুদ্রণকারীরা নি¤œমানের কাগজ কিনছেন। গত বছর নানা ফাঁক-ফোকর দিয়ে ছাড়পত্র নিলেও এবার পরিদর্শন এজেন্সি তা আটকে দিচ্ছে। ‘বাস্টিং ফ্যাক্টর’ ১৬, ৮০ শতাংশ জিএসএম (পুরুত্ব) এবং ৮৫ শতাংশ উজ্জ্বলতার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে এনসিটিবি।


আরো সংবাদ



premium cement
অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর পাথরঘাটায় বদর দিবস পালনে দেড় হাজার মানুষের ইফতারি আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল ২৫০০ তরমুজ ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান

সকল