১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অতিরিক্ত ফির প্রতিবাদে মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’দিন ধরে বিক্ষোভ; অভিভাবকদের ওপর বাড়তি চাপ
-

শিক্ষাসহায়ক বিভিন্ন ফির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রতিবাদে মাঠে নামছে শিক্ষার্থীরা। অযৌক্তিক এসব ফি আদায় বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপও চেয়েছেন তারা। শিক্ষামন্ত্রী এর আগে করোনার মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টিউশন ফিসহ অন্যান্য খাতের অর্থ আদায়ে নমনীয় এবং আরো মানবিক হতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর আরো কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অতিরিক্ত শিক্ষাসহায়ক ফি আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানের সামনে অভিভাবকরা বিক্ষোভও করেছেন।
গতকাল সোমবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। তারা বলছেন, করোনার মধ্যেও প্রতিষ্ঠান থেকে তারা কোনো প্রকার ছাড় পাচ্ছেন না। প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মেটাতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বাবা-মাকে টাকার মেশিন বানাতে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা ।
গত দু’দিন ধরে রাজধানীর বারিধারাস্থ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এবং পাশের প্রধান সড়কে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, করোনার মধ্যে যেখানে টিউশন ফি কমানোর কথা সেখানে অন্যান্য ফি বরং আরো বাড়ানো হয়েছে। আর এই অর্থ জোগাতে গিয়ে আমাদের অভিভাবকদের বাড়তি চাপের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান থেকেও চাপ দেয়া হচ্ছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, বাড়তি এই অর্থের জোগান দিতে গিয়ে তাদের বাবা-মাকে এখন টাকার মেশিন বানাতে হবে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা শুরু থেকেই টিউশনসহ অন্যান্য ফিতে ৩০ ভাগ ছাড় দাবি করেছি। কিন্তু প্রতিষ্ঠান আমাদের কোনো দাবিই আমলে না নিয়ে বরং আরো কিছু অযৌক্তিক ফি চাপিয়ে দিয়েছে।
আমরাতো সারা বছরই শিক্ষাসহায়ক যাবতীয় ফি পরিশোধ করছি। কিন্তু এখন করোনার কারণে বলেছি, আমাদের কিছু ছাড় দেয়ার জন্য। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা মানতে নারাজ। করোনার মধ্যে যেখানে প্রতিষ্ঠানই বন্ধ সেখানে কোন যুক্তিতে আমরা লাইব্রেরি ফি ২২৫০ টাকা, সাইন্স ল্যাব ফি ৫ হাজার টাকা, কম্পিউটার ল্যাব ফি ৩৭৫০ টাকা দেবো? এসব ফিসের সব মিলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট থেকে ১০ হাজার টাকা করে অযৌক্তিকভাবে দাবি করছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আতিকুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সাথে কথা বলে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সময় নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে ভিসি বলেন, টিউশন ফিসহ অন্যান্য ফি কমানোর এখতিয়ার আমাদের নেই। এটা বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। আশা করছি ২২ তারিখের আগেই বোর্ড একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেবে। আর শিক্ষার্থীদের বলেছি, আন্দোলন বন্ধ করে বোর্ডের সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে।
করোনা মহামারীর মধ্যে প্রতিষ্ঠান বন্ধ অবস্থায় উচ্চতর ক্লাসে প্রমোশনের বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত আসার আগেই শিক্ষার্থীদের বকেয়া টিউশন ফি আদায়ে অভিভাবকদের ওপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ আছে ঢাকার বেশ কিছু নামী বেসরকারি স্কুলের বিরুদ্ধে। এতে অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা, বছরের শেষ দিকে এসে টিউশনসহ বিভিন্ন নামে অন্যান্য ফি সম্পূর্ণ পরিশোধ না করতে পারলে বিদ্যালয়গুলো হয়তো তাদের সন্তানদের পরবর্তী ক্লাসে তুলবে না।
এ দিকে বিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের দাবিÑ টিউশন ফির জন্য কোনো চাপ দেয়া হচ্ছে না। বিদ্যালয় চালানো ও শিক্ষকদের বেতনভাতা পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের বুঝিয়ে টিউশন ফি সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে অভিভাবকরা জানান, ছুটির মধ্যেও স্কুল থেকে বারবার ফোন করে ও এসএমএস পাঠিয়ে টিউশন ফি পরিশোধ করতে বলা হচ্ছে। অভিভাবকরা আরো জানান, রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটসহ আরো বেশ কিছু স্কুল থেকে টিউশনসহ অন্যান্য ফি পরিশোধের চাপ দেয়া হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement