২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নদীর তীর সংরক্ষণে কিমিতে খরচ ১০০ কোটি টাকা

নতুন রেট শিডিউল ২৫ শতাংশ বেশি ধরে করা
-

নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের ব্যয় নিয়ে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। এই তীর সংরক্ষণের ব্যয় বছর ঘুরতেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে এই পানিসম্পদ খাতের নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের ব্যয়। ফলে এসব প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে খোদ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েরই আপত্তি থাকে। লক্ষ্মীপুর জেলায় মেঘনা নদীর অংশে তীর সংরক্ষণে খরচ কিলোমিটারে ১০০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা চলমান প্রকল্পের চেয়ে এই ব্যয় অনেক বেশি। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) মো: জাকির হোসেন আকন্দ জানান, এটার প্রাক্কলন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নতুন রেট শিডিউল ধরে করা হয়েছে। যার কারণে চলমান প্রকল্পের চেয়ে খরচ বেশি হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলাধীন বড়খেরী ও লুধুয়াবাজার এবং কাদের পণ্ডিতের হাট এলাকা ভাঙন থেকে রক্ষা করতে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণে তিন হাজার ১৯৭ কোটি ১২ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ের প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে ৩০ দশমিক ৮১৩ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ করার কথা। মেঘনা নদীর বামতীর বরাবর ভাঙনকবলিত প্রায় ৩১ কিলোমিটার স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলাধীন কৃষি জমি, স্কুল, কলেজ, বাজার, মাদরাসা, সড়ক, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অবকাঠামো রক্ষা করা। প্রতি বছর এই এলাকায় ২৫০ থেকে ৩০০ মিটার নদীভাঙন হয়। প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর এলাকা জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানি প্রবেশ রোধ। তীর সংরক্ষণ ছাড়াও প্রকল্পে কাজের মধ্যে রয়েছে ১২৮টি পর্যটক বেঞ্চ বা বৈঠকখানা নির্মাণ, ১৫টি আউটরেট নির্মাণ এবং ১৫টি ঘাটলা নির্মাণ করা। অনুমোদন পেলে তিন বছর ৯ মাসে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা।
প্রকল্পের ব্যয় বিভাজন থেকে দেখা যায়, ৩০ দশমিক ৮১৩ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ১০১ কোটি চার লাখ ৭৯ হাজার টাকা। প্রতি কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণে খরচ হবে ১০০ কোটি ৬৪ লাখ আট হাজার টাকা, যা চলমান প্রকল্পের চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত তীর সংরক্ষণে এত ব্যয়ের কোনো তথ্য নেই। এই তীর সংরক্ষণ কাজ ৩৪টি প্যাকেজে বিভক্ত করা হয়েছে। চলমান অন্য প্রকল্প বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের প্রকল্পে চার কিলোমিটার যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪১ কোটি ৭৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যেখানে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হবে ৬০ কোটি ৪৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। আর গাইবান্ধায় একই ধরনের অপর প্রকল্পে যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রতি কিলোমিটার ৩৯ কোটি ৬৭ লাখ ১১ হাজার টাকা। অন্য দিকে, ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ করার প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। যাতে ব্যয় হবে ৭৭৯ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু তীর সংরক্ষণ কাজে ব্যয় হবে ৬১০ কোটি ৫৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে ৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
আর চলামন চট্টগ্রাম জেলার হালদা নদীর বিভিন্ন স্থানে তীর রক্ষার ১৩ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার কাজের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ২৩৯ কোটি দুই লাখ টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে ১৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের সেচ অনুবিভাগের উপ-প্রধান এ কে এম আবুল কালাম আজাদ তার প্রতিবেদনে বলছেন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্যাকেজের কাজ যথাসম্ভব পরিহার করা দরকার। ডিপিপির সার্বিক ক্রয় পরিকল্পনায় নদী তীর সংরক্ষণ কাজ একাধিক প্যাকেজে বিভক্ত করা হলেও সংশ্লিষ্ট কাজের মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ভিত্তিতে আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ আদেশ অনুযায়ী ক্রয়চুক্তি অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এ ছাড়া ডিপিপিতেও অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।
৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে প্রকল্পে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বাধ্যতামূলক। কিন্তু তিন হাজার ১৯৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পে পরিপূর্ণভাবে সমীক্ষা করা হয়নি। সম্ভাব্যতা সমীক্ষার গ্রহণযোগ্যতার জন্য পানিসম্পদ সেক্টরের অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি হালনাগাদ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন করা যেতে পারে।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী এ এম আমিনুল হকের বক্তব্য জানার জন্য তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও প্রকল্পের ব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো: জাকির হোসেন আকন্দের কাছে এই ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাউবির নতুন রেট শিডিউল ২৫ শতাংশ বেশি ধরে করা হয়েছে। ফলে ব্যয় বাড়বেই। এ ছাড়া আগে বা চলমান প্রকল্পগুলোতে যে ব্লক তৈরি করা হয় তাতে সিমেন্ট ও কক্রিট যে রেশিওতে দেয়া হয় এতে সাত-আট বছর অতিক্রম করলেই ওই সব ব্লকের চামড়া উঠে যায়। আর আগের চেয়ে ব্লকগুলো অনেক বেশি মানসম্পন্ন ও বড় আকারের করা হচ্ছে। আধুনিক হবে এই সব ব্লকগুলো। তিনি বলেন, পানিগুলো কৌশলে ব্লকের ভেতরে ঢুকে পড়ে। আস্তে আস্তে ব্লকের নিচ থেকে বালুগুলোকে সরিয়ে দেয়। এর পরই এমনিতেই ব্লকগুলো সরে যায়। এখন যেভাবে করা হচ্ছে তা অনেক আধুনিক।

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবব্ধ হতে হবে’ গাজাবাসীর প্রধান কথা- ‘আমাদের খাবার চাই’ অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সকল