২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ইআরএফ সেমিনারে সালমান এফ রহমান

অনেকটা জোর করেই চামড়া শিল্পকে সাভারে নেয়া হয়

একক সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়ার দাবি ব্যবসায়ীদের
-

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পকে অনেকটা জোর করেই আদালতের নির্দেশে সাভারে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে চামড়াশিল্প কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, চামড়া শিল্পকে যখন সাভারের শিল্পনগরীতে স্থানান্তর করা হয়েছে তখন তা ট্যানারি শিল্পের জন্য প্রস্তুত ছিল না। অপ্রস্তুত অবস্থায় সেখানে ট্যানারিগুলো স্থানান্তর করার কারণে এই শিল্প অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর বক্তারা বলেছেন, চামড়া শিল্পের জন্য প্রয়োজন বিশেষ নীতিমালা। এ খাতের উন্নয়ন একক সংস্থার ওপর দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানান চামড়া খাতের সংশ্লিষ্টরা।
‘কোভিড পরবর্তী বাংলাদেশের চামড়াশিল্পের ভবিষৎ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনার সেমিনারে সালমান এফ রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো: জাফর উদ্দিন। ইআরএফের সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশেদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে দু’টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে রিচার্স অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (রেপিট) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, বিটিএর চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, বিএফএলএলএফইএ’র সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন প্রমুখ।
সালমান এফ রহমান বলেন, শিল্পের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে চামড়া শিল্পকে আধুনিকায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, সাভারের চামড়াশিল্প নগরী আধুনিকায়ন করতে অবকাঠামোসহ প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে। গত মে, জুন ও জুলাই মাসে সিইটিপি থেকে যে পানি নিষ্কাশন হয়েছে সেটার মান ভালো ছিল। কিন্তু গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এসে তা আবার খারাপ হয়ে গেছে। মূলত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে কাজ বেশি হওয়ায় মান খারাপ হয়েছে।
তিনি বলেন, সাভারের চামড়াশিল্প নগরের জন্য প্রথমে ১২৫ কোটি টাকার প্রজেক্ট নেয়া হয়েছিল। তখন কিন্তু সেখানে সিইপিটির কথা ছিল না। পরে সিইপিটি সংযোজন করার কারণে ১২৫ কোটি টাকার প্রকল্প ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। পরে তা থেকে কিছুটা কমিয়ে ১ হাজার ১৫ কোটি টাকায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সালমান এফ রহমান বলেন, সলিড বেইজই হলো চামড়া শিল্প নগরীর মূল সমস্যা। হাজারীবাগে থাকাকালীন সলিড বেইজ কাঁচামাল হিসেবে ছোট ছোট কুটির শিল্পে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সাভারে চামড়াশিল্প নগরীর চলে যাওয়ার কারণে সলিজ বেইজ সমস্যা বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, চামড়াশিল্পকে নিয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। চামড়া শিল্পে আমাদের যে কাঁচামাল রযেছে তা আমাদের সম্পদ। এই সম্পদ কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, চীন একটি বড় মার্কেট। সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া আমাদের জন্য একটা বড় সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। চামড়াজাত পণ্য যে ধরনের ইনটেনসিভ দেয়া হবে, পাশাপাশি নন-লেদার পণ্যেও আমাদের সমান ইনটেনসিভ দেয়ার কথা ভাবছি। কারণ চামড়াজাত পণ্য ও চামড়াবিহীন পণ্যের প্রযুক্তি প্রায় একই রকম। সারাবিশ্বে ননলেদার পণ্যের চাহিদা বাড়াছে। ফলে সেদিকেও আমাদের নজর দিতে হবে।
অ্যাপেক্স গ্রুপের প্রধান সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, চামড়াজাত পণ্যের কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রত্যাশিত অগ্রগতি করতে পারিনি। অথচ ভিয়েতনাম কাঁচামাল না থাকা সত্ত্বেও এ খাতের রফতানিতে বহুদূর এগিয়ে গেছে। এ খাতের উন্নয়ন একক সংস্থার ওপর দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানান তিনি।
বক্তারা প্রায় এক যুগেও সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর যথাযথ প্রস্তুত না হওয়া, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং বর্জ্য পাশের ধলেশ্বরী নদীতে যাওয়ায় পরিবেশ দূষণ এবং এসব কারণে আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠানের (এলডব্লিওজি) সনদ না পাওয়ার মতো বিষয়টি তুলে ধরে এসব ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রসঙ্গও তোলেন। বিশেষত বর্তমান বাস্তবতায় প্রকল্পটি এখন একটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন কেউ কেউ। এ পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় প্রধান রফতানি খাত হিসেবে এ খাতের ভবিষ্যৎ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে দ্রুত ও যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তারা।
বক্তারা বলেন, চামড়াশিল্প আমাদের নিজস্ব শিল্প, এই শিল্পের ৮০ শতাংশ কাঁচামাল আমাদের দেশ থেকেই সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে এই শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু এই শিল্পকে রক্ষা করতে হবে।
বাণিজ্যসচিব ড. মোহাম্মদ জাফর উদ্দিন বলেন, চামড়াশিল্প দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর রফতানি খাত। এই খাতে প্রত্যক্ষভাবে ৩ লাখ এবং পরোক্ষভাবে ৬ লাখ লোক নিয়োজিত রয়েছে। ২০২১ সালে চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, সাভারের চামড়াশিল্পনগরীর সিইপিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে লকডাউনের সময়েও আমরা কাজ করেছি। এ সময়ে বাংলাদেশ ১১ বিলিয়ন ডলার পণ্য রফতানি করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement