২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ভিসা ও ফ্লাইট জটিলতা

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আজ কথা বলবেন ড. আবদুল মোমেন

-

ভিসা, আকামা (কাজের অনুমতি) ও ফ্লাইট জটিলতাসহ অন্যান্য ইস্যুতে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফায়সাল বিন ফারহান আল সাউদের সাথে আজ টেলিফোনে আলাপ করবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন। পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী বিকেলে এই ফোনালাপ হওয়ার কথা রয়েছে।
করোনা মহামারীর কারণে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রায় ছয় মাস নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ থাকা এবং ভিসা ও আকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় চলতি মাসের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে ফিরতে ইচ্ছুক বাংলাদেশী কর্মীরা বিপাকে আছেন। টিকিটের জন্য বেশ কয়েকদিন ধরে তারা রাজধানীতে সৌদি এয়ারলাইন্স ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অফিসে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। প্রয়োজন অনুযায়ী টিকিট না পাওয়ায় তারা অনেক ক্ষেত্রে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করছেন, যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গতকাল ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশে আটকা পড়া সৌদি প্রবাসীদের আশ্বাস্ত করে জানিয়েছেন, টিকিটের কোনো সমস্যা হবে না। আরবি সফর মাস শেষ হওয়ার আগেই (২৪ অক্টোবর) আটকে পড়া প্রবাসীরা সৌদি আরব যেতে পারবেন। তিনি বলেন, সৌদি প্রবাসীরা সবাই একসাথে টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন বলে ভিড় হচ্ছে। মনে হচ্ছে টিকিটের সঙ্কট রয়েছে, যা সত্য নয়। প্রয়োজনে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হবে। অযথা তাড়াহুড়োর কোনো প্রয়োজন নেই।
প্রতিমন্ত্রী জানান, সৌদি আরবের দাম্মামেও ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে বলেছি এবং এটা করা হবে। কবে থেকে ঢাকা-দাম্মাম ফ্লাইট চালু হবে তা পরে জানিয়ে দেয়া হবে। সৌদি ফিরতে ইচ্ছুক কোনো প্রবাসী বাদ যাবেন না।
ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের নির্দেশনা মেনে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করার জন্য তিনি প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানান।
সৌদি এয়ারলাইন্স বা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট না পেয়ে আটকে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভিসা এবং আকামার মেয়াদ বিনা খরচে আরো তিন মাস বাড়ানোর জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে গত মঙ্গলবার অনুরোধ করেছিল রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। এর পরদিনই সৌদি আরব এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। আজ রোববার থেকে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশী কর্মীদের আকামার মেয়াদ ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত বৈধ থাকবে। এর পরও প্রয়োজন হলে এর বৈধতা বাড়ানো হবে বলে সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে সৌদি আরবে অবতরণের অনুমতি না দেয়ায় সৌদি এয়ারলাইন্সকেও ঢাকায় ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয়া হচ্ছিল না। গত বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন জানান, সৌদি কর্তৃপক্ষ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে অবতরণের অনুমতি দিয়েছে। বাংলাদেশও সৌদি এয়ারলাইন্সকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। এর ফলে এই দুই এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট শিগগির চালু হবে।
আগামী ১ অক্টোবর থেকে রিয়াদ ও জেদ্দায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা। তবে গত মার্চে রিটার্ন টিকিট নিয়ে রাখা যাত্রীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সৌদি এয়ারলাইন্সও টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। কিন্তু টিকিটের জন্য যাত্রীরা প্রতিযোগিতায় নামায় অনিয়মের অভিযোগের পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।
এ দিকে ৫৪ হাজার রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দেয়ার জন্য বাংলাদেশের ওপর সৌদি আরবের চাপ সৃষ্টি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনা চলছে। তা না হলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধের পাশাপাশি সৌদিতে কর্মরত বাংলাদেশীদের বহিষ্কার করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ড. মোমেন বলেছেন, গত শতাব্দীর ’৮০ ও ’৯০-এর দশকে সৌদি বাদশাহ সহানুভূতিশীল হয়ে অনেক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এ সময় রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে সরাসরি অথবা বাংলাদেশ হয়ে সৌদি আরব গেছেন। এসব রোহিঙ্গা পরিবার নিয়ে দীর্ঘ দিন সৌদি আরবে বসবাস করছেন। সন্তানসহ তাদের সংখ্যা এখন প্রায় ৫৪ হাজার। তাদের সন্তানরা আরব সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছে। কথা বলে আরবিতে। এখন সৌদি সরকার তাদের পাসপোর্ট দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে তাগাদা দিচ্ছে। কারণ সৌদি আরব রাষ্ট্রহীন কোনো নাগরিককে রাখতে চাচ্ছে না।
তিনি বলেন, সৌদিতে বসবাসকারী এ রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে গিয়ে থাকলে এবং তাদের কাছে কখনো বাংলাদেশী পাসপোর্ট থাকলে আমরা বিবেচনা করব। কিন্তু কখনো বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে না থাকলে তাদের বিবেচনা করা সম্ভব হবে না। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখার জন্য পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সৌদিতে বসবাসকারী ৫৪ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেয়া হলে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও একই ধরনের দাবি উঠতে পারে। তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়া বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাম্বিয়া গণহত্যার অভিযোগ এনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করেছে। আর ওআইসির নেতৃত্বে রয়েছে সৌদি আরব। তাই দেশটি রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবে নাÑ এমন সিদ্ধান্ত হবে স্ববিরোধী ও অমানবিক। উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সৌদি আরব আনুষ্ঠানিকভাবে ইস্যুটি না তুললে বাংলাদেশের জন্য তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement