২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সোনারগাঁওয়ের নুনেরটেকে অবাধে মেঘনার বালু তুলছে সিন্ডিকেট

কৃষিজমি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম
-

সোনারগাঁওয়ে বারদীর নুনেরটেক এলাকায় ইজারা ছাড়াই রাতে ৩০-৩৫টি ড্রেজার বসিয়ে দুর্বৃত্তরা মেঘনা নদীর তীরবর্তী স্থান ও কৃষিজমির কাছ থেকে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন মেঘনা তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামের লোকজন। বিভিন্ন বালু মহাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে মেঘনা নদী বেষ্টিত অনেক গ্রাম এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে। ইতোমধ্যে নদীর তলদেশের মাটি সরে গিয়ে উপজেলার খাসেরচর, ভুরভুরিয়া, ভাটিবন্ধর ও সুলতান নগর গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে মালিগাঁও, হাড়িয়া, গোবিন্দি হাড়িয়া, বৈদ্যেপাড়া, সোনামই, নুনেরটেক গুচ্ছগ্রামসহ কয়েকটি গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার মেঘনা নদীর মাঝখানে জেগে উঠা চর নুনেরটেক ও এর তীরবর্তী বালু মহালটির ইজারার স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ স্থগিতাদেশের ফলে প্রশাসন বালু মহালটি ইজারা দিতে পারবে না। ফলে বালু সন্ত্রাসীরা প্রতিদিন রাতে চুরি করে নুটেরটেক এলাকার লাখ লাখ ঘনফুট বালু কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ কৃষকদের কৃষিজমি ও বাড়িঘর নদীতে চলে যাচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লতিফ সরকার, তার ভাতিজা জাহাঙ্গীর, আমির, চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সানাউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাউয়ুমসহ ৫০-৬০ জনের একটি সিন্ডিকেট পৃথকভাবে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রশাসন ও বৈদ্যেরবাজার নৌ-ফাঁড়ি পুলিশের সাথে আঁতাত করে প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে চেয়ারম্যান লতিফ সরকারকে মদদ দিচ্ছেন সোনারগাঁওয়ের বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল হকের ভাই তাইজুল ইসলাম, নুনেরটেক গ্রামের জাকারিয়াসহ প্রায় ২০-২৫ জনের একটি সিন্ডিকেট। প্রতিদিন বালু মহাল থেকে এ সিন্ডিকেট বালু উত্তোলনের টাকা পেয়ে থাকেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
বালু মহাল ইজারা ব্যবস্থা বিধিমালা থেকে জানা গেছে, বালু উত্তোলনের সরকারি বিধি অনুযায়ী ‘সূর্য উদয়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বালু উত্তোলন করা যাবে। তবে কোনো বসতি, স্থাপনা, ব্রিজ বা কালবার্ট থেকে অন্তত এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনোরকম বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’ কিন্তু সরকারি সেই বিধান অমান্য করে বালু সন্ত্রাসীরা প্রতিদিন রাত ১২টা থেকে পরের দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত বালু কাটছে। তা ছাড়াও সন্ত্রাসীরা কৃষিজমি ও গ্রামের পাশ থেকে চুরি করে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে ওই এলাকার গ্রামবাসীর রাত কাটছে এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী চালিভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ সরকার এ ব্যাপারে বলেন, সরকারের কাছ থেকে বৈধভাবে ইজারা নিয়ে আমরা বালু উত্তোলন করে থাকি। আমাদের মহল ছাড়া নুনেরটেক এলাকায় আমরা বালু উত্তোলন করি না। তবে যুবলীগ নেতা সানাউল্লাহ ও কাইয়ুম ইজারা ছাড়া মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন করছে। চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সানাউল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা সোনারগাঁও অঞ্চলে বালু উত্তোলন করি না। মেঘনা উপজেলা অঞ্চলে আমাদের ড্রেজার থাকে।
বৈদ্যেরবাজার নৌফাঁড়ি পুলিশের পরিদর্শক মো: মোস্তফা কামালকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ছয়জনকে সাজা দিয়েছি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে তারা অস্ত্রধারীদের নিয়ে হামলার চেষ্টা করে।


আরো সংবাদ



premium cement