বেওয়ারিশ কুকুর অপসারণ নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ ডিএসসিসির

রাজধানী থেকে বেওয়ারিশ কুকুর অপসারণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যেসব ছবি প্রচারিত হচ্ছে তা বিকৃত, বিভ্রান্তিকর ও বানোয়াট বলে দাবি করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তারা বলছেন, ডিএসসিসি কোনো বেওয়ারিশ কুকুরকে হত্যা করেনি বা করছেও না। এরপরও অন্যস্থানের ছবি নিয়ে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে ভাবমর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপতৎপরতা চালালে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও হুমকি দিয়েছে ডিএসসিসি।
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর রাজধানী থেকে বেওয়ারিশ কুকুর কমানোর ঘোষণা দেন। এরপর সম্প্রতি বেশ কিছু কুকুরকে ট্রাকে করে মাতুয়াইলে রেখে আসা হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকে ট্রাকভর্তি কুকুরের ছবি দিয়ে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে এসব করা হচ্ছে বলে বলা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার ডিএসসিসির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: আবু নাছের স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ফেসবুকে প্রচারিত ছবিগুলোর মধ্যে দেখা যায়, কোনো ছবিতে কুকুরকে আটক করে গাড়িতে তোলা হচ্ছে বা কোনো ছবিতে দেখানো হচ্ছে অনেকগুলো কুকুর মেরে নর্দমার পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। আবার কোথাও বা দেখানো হচ্ছে বেওয়ারিশ কুকুর নিস্তেজ করে বা মেরে খোলা ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বর্ণিত ছবিগুলো সর্ম্পূণরূপে বানোয়াট ও বিকৃত। এ ধরনের ছবি প্রচার হতে বিরত থাকার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সচেতন নাগরিকরা একটু মনোযোগসহকারে খেয়াল করলেই বুঝতে সক্ষম হবেন, যে ছবিতে কুকুরকে বধ করে গাড়িতে ওঠানো হচ্ছে, সেই ছবির গাড়িতে পেছনে লেখা রয়েছে ‘...ণালয়’ অর্থাৎ গাড়িটি কোন মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবহন বিভাগ যথেষ্ট সমৃদ্ধ বিধায় করপোরেশন কখনোই কোনো মন্ত্রণালয়ের গাড়ি ব্যবহার করে না বা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নেই। গাডিটি অবশ্যই ডিএসসিসির নয়। এ ছাড়াও কুকুর অপসারণ কার্যক্রমে সাময়িকভাবে অচেতন করার জন্য যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়, সেই ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরপরই কুকুর গাড়িতে তোলা হয়। তাই অনেকগুলো কুকুর ভ্যাকসিন দিয়ে একসাথে করে এক জায়গায় নর্দমার পাশে ফেলে রাখার কোনো অবকাশ থাকে না। এ ধরনের আরেকটি ছবিতে দেখানো হচ্ছে, অনেকগুলো নিস্তেজ বেওয়ারিশ কুকুর একটি খোলা ট্রাকের এক কোণায় সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। একটু মনোযোগসহকারে দেখলেই বোঝা যায়, ব্যবহৃত খোলা ট্রাকটি ‘...ণালয়’ লেখা মন্ত্রণালয়ের সেই গাড়িটির ‘টপ ভিউ’ মাত্র। প্রায় একই রকম আরেকটি ছবিতে অনেকগুলো নিস্তেজ কুকুর নসিমন জাতীয় একটি খোলা গাড়িতে আড়াআড়িভাবে রাখা হয়েছে। পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখলে স্পষ্ট হয় যে, ছবিটি কোনো গ্রামীণ এলাকার। ঢাকা শহরের নয়। তা ছাড়া এ ধরনের গাড়ি ডিএসসিসি ব্যবহার করে না বা ডিএসসিসির মালিকানায় এ ধরনের কোনো গাড়ি নেই। কিন্তু কিছু কিছু ছবি এমনভাবে প্রচার করা হচ্ছে দেখে মনে হয় ডিএসসিসি বেওয়ারিশ কুকুর হত্যা করেছে।
বস্তুত ডিএসসিসি কোনো বেওয়ারিশ কুকুর হত্যা করেনি বা করছেও না। তাই মিথ্যা, বানোয়াট ও বিকৃত ছবির পসরা সাজিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা কোনো সঙ্ঘবদ্ধ চক্র ডিএসসিসির ভাবমর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ করার অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে বলে প্রতীয়মান। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে ঢাকাবাসী ও দেশের জনসাধারণকে অনুরোধ করা হলো। পাশাপাশি যারা এই অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন, তাদেরকে আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, এই অপতৎপরতা অব্যাহত রাখা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’ এর মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।