২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গাদের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসঙ্ঘ সফল হয়নি: পরিকল্পনামন্ত্রী

-

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বছরের পর বছর ধরে জাতিসঙ্ঘের প্রতি আমাদের আস্থা কমছে। রোহিঙ্গাদের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসঙ্ঘ সফল হয়নি। তার মতে, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সারা পৃথিবীর মানুষের সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।
গত বৃহস্পতিবার জাতিসঙ্ঘের ঢাকা কার্যালয় এবং নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস স্ট্যাডিজের (সিপিএস) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। ‘মানুষের প্রয়োজনে জাতিসঙ্ঘ ও বহুপাক্ষিকতা’ বিষয়ক ওয়েবিনারের বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) ভিসি অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম ও জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো যৌথভাবে এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। অধিবেশনটির সঞ্চালক ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও এনএসইউর সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্সের (এসআইপিজি) জ্যেষ্ঠ ফেলো শহীদুল হক। জাতিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, অর্জন আর অঙ্গীকারের দিক থেকে বিবেচনা করলে জাতিসঙ্ঘের অনুকরণীয় দৃষ্টান্তের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ। বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার প্রতি যে আস্থা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই পথেই হাঁটছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের সব মানুষের কাছে জাতিসঙ্ঘের পৌঁছানো দরকার।
ভিসি অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, জাতিসঙ্ঘকে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া থেকে উদ্ধারের স্বার্থে সরকার আর নাগরিক সমাজের সহযোগিতা এখন সময়ের দাবি। মহামারীর ফলে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা আর অস্বস্তির পরও অধিকাংশ মানুষ এখনো জাতিসঙ্ঘ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় আস্থা রাখতে চায়।
জাতিসঙ্ঘে আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো বলেন, নাগরিক সমাজের কাজের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সদস্য দেশে নাগরিক সমাজের জন্য কাজের ক্ষেত্র না থাকলে জাতিসঙ্ঘের করিডোরে কীভাবে তারা সুযোগ পাবে?
জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সংস্থার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি জাতিসঙ্ঘকে আরো শক্তিশালী করতে সবপক্ষকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
ওয়েবিনারের প্যানেলিস্ট পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে জাতিসঙ্ঘের ভূমিকার ব্যর্থতায় হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বললে জানবেন জাতিসঙ্ঘের ভূমিকা নিয়ে তারা কতটা হতাশ। জাতিসঙ্ঘ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিলেও মূল সমস্যা সমাধানে স্পষ্ট কোনো পথ নকশা দিতে পারছে না।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাধিকার হোক, আর প্রবল শক্তিধর দেশগুলোর দ্বৈরথই হোক না কেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসঙ্ঘের বর্তমান কাঠামো যথেষ্ট কার্যকর নয়।
জাতিসঙ্ঘের কাছে বাংলাদেশের প্রত্যাশা প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল। তবে আমরা আরো স্বচ্ছ ও দক্ষ জাতিসঙ্ঘ চাই, যেখানে জরুরি প্রয়োজনে বিশ্বসংস্থাটি আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে, যাতে সদস্য দেশের প্রত্যাশা পূরণ হবে।
ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট সামীর সরন বলেন, বর্তমান দুনিয়া হচ্ছে এশিয়ার দুনিয়া। জাতিসঙ্ঘে এশিয়ার সঠিক প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে।
এশিয়ার দেশগুলো তাদের সম্পর্কের জটিলতা দূর করে একসাথে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, চীন, ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলো এক সময়ে সংলাপে বসবে এবং নিজেরাই সমস্যার সমাধান করবে।
দুই দিনের আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে কয়েকটি দেশের বৃত্ত থেকে বের হয়ে বিশ্বসংস্থাকে ‘জনগণের জাতিসঙ্ঘে’ পরিণত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement