২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা পরীক্ষা নিরুৎসাহিত করতে চাইছে সরকার?

-

করোনা পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে (বুথ) ফিরে যাচ্ছেন নমুনা দিতে না পেরে সন্দেহযুক্ত করোনা আক্রান্তরা। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরের মোট করোনা পরীক্ষাও বাড়ছে না। রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে, সন্দেহজনক করোনা আক্রান্তরা ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ নমুনা দিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন হতাশ হয়ে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর হাসপাতালের লোকজন এসে বলছেন, ‘আজ আর কোনো নমুনা নেয়া হবে না। আজ আর কোনো কিট নেই, ইত্যাদি।’
ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, সারা দেশেই বেড়েছে সন্দেহজনক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিন্তু সন্দেহ দূর করার জন্য পরীক্ষা করাতে পারছেন না তারা। তারা বলছেন, ঈদুল আজহার মধ্যে দেশের সর্বত্র যাতায়াত ব্যাপক হারে বেড়েছে। মানুষ হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কিনেছেন, ভিড়ের মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করেছেন। আবার কোরবানির গোশত নিয়ে প্রিয়জনদের বাড়িতে গিয়েছেন অথবা ঈদ উপলক্ষে বেড়াতে গিয়েছেন। এসব কারণে ঈদের পর করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কথা। তা সত্ত্বেও সরকারি পরীক্ষায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরীক্ষাইতো বাড়ছে না অথবা বাড়ানো হচ্ছে না। পরীক্ষা না বাড়ালে আক্রান্ত বাড়বে কী করে। ঈদের পর ১৫ দিন স্বাভাবিকভাবেই চলে গেলো। এই ১৫ দিনে আরো বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার কথা।
রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শনে দেখা গেছে, সেখানে অনেক মানুষ। কিন্তু দিন শেষে তারা পরীক্ষা না করেই ফিরে যাচ্ছেন। কেউ নীরবে ফিরে যাচ্ছেন হতাশা নিয়ে আবার কেউ প্রতিবাদ করতে করতে যাচ্ছেন। অনেকে হট্টগোলও বাধিয়ে ফেলছেন নমুনা দিতে না পেরে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, কিছু মানুষ হাসপাতালের গেটের বাইরে জটলা করে উচ্চৈস্বরে কথা বলছেন, তারা বেশ ক্ষুব্ধ। মিনিট পরই বুঝা গেল তারা করোনা পরীক্ষার নমুনা দিতে পারেননি অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও। যাত্রবাড়ী থেকে খুব ভোরে এসেছিলেন মাসুম আহমেদ (৩৪)। তিনি জানান, কিট নেই বলে নমুনা নিতে পারবে না এটাতো আগেই জানা থাকার কথা। লাইনে যারা দাঁড়িয়েছেন তাদের সংখ্যাটা গুনে আগেই জানিয়ে দিতে পারত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, কিন্তু তারা তা করেনি। তপ্ত রোদে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আমরা যখন বুথের কাছাকাছি চলে এসেছি ঠিক তখনই আমাদের বলা হলোÑ আজ নমুনা নেয়া হবে না, কিট সঙ্কট। আপনারা কাল আসেন।’
এ ব্যাপারে মুগদা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে গেলে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, মিডিয়ার সাথে কথা বলা নিষেধ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়া মিডিয়ার সাথে কথা বলা যাবে না।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা: নাসিমা সুলতানা এ ব্যাপারে জানিয়েছেন, ‘ঢাকায় এমন হওয়ার কথা না। কারণ এখানে অনেক বুথ রয়েছে।’ লোকজন তাহলে নমুনা দিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন কেন জানতে চাইলে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘কেন চলে যাচ্ছেন তা না জেনে বলা যাচ্ছে না।’
সারা দেশে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে জেলা ও উপজেলাগুলো থেকে নমুনা আসছে না। লোকজন উদাসীন হয়ে গেছে, তারা পরীক্ষা করাতে আসছেন না।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। এসব কারণে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে না।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেয়া পুরনো রেকর্ড ঘেটে দেখা গেছে, দৈনিক বেশির ভাগ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা গড়ে ১১ থেকে ১৪ হাজারের মধ্যে। কেবল জুলাই ও জুন মাসে নমুনা পরীক্ষা ১৭ অথবা ১৮ হাজারের ঘর অতিক্রম করেছিল কয়েক দিন। যেমন, ৩০ জুন পরীক্ষা করা হয় ১৮ হাজার ৭০৪টি, ২৫ জুন করা হয় ১৭ হাজার ৯৯৯টি। এই দুই দিনে শনাক্ত হয় যথাক্রমে তিন হাজার ৬৮২ এবং তিন হাজার ৯৪৬ জন। এ ছাড়া গতকাল শনিবার পরীক্ষা করা হয় ১২ হাজার ৮৯১টি, ১৪ আগস্ট ১২ হাজার ৮৫৬টি, ১৩ আগস্ট ১৩ হাজার ১৬২টি, ১২ আগস্ট পরীক্ষা করা হয় ১৪ হাজার ৭৫১টি, ১১ আগস্ট পরীক্ষা করা হয় ১৪ হাজার ৮২০টি এবং ১০ আগস্ট নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১২ হাজার ৮৪৯টি।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, গ্রামের মানুষ বাধ্য না হলে পরীক্ষা করতে আসছেন না এটা ঠিক। তারা কেবল জটিল অবস্থা হলেই পরীক্ষা করতে আসছেন। কারণ তাদের দোড়গোড়ায় পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। সেজন্য তারা করোনা পরীক্ষায় তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে করোনা চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা জরুরি নয়। পরীক্ষা জরুরি করোনা আক্রান্তকে আইসোলেশন অথবা কোয়ারেন্টিন করার জন্য যেন আক্রান্তরা অন্য কাউকে সংক্রমিত করতে না পারে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ের সরকারের যে প্রচারণা বিভাগ রয়েছে তারা গ্রামের মানুষের জন্য বোধগম্য করে করোনা বিষয়ে প্রচারণা চালাতে ব্যর্থ হয়েছে। এ বিভাগকে শক্তিশালী করতে পারলে মানুষের মধ্যে আরো বেশি সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাছাড়া গ্রামের মানুষের জন্য পরীক্ষাকে তাদের কাছে নিয়ে যেতে হবে। কারণ দরিদ্র মানুষ পকেটের টাকা খরচ করে অনেক দূর যেতে চাইবে না পরীক্ষার জন্য।

 


আরো সংবাদ



premium cement