১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মাদরাসা খোলার দাবি জোরালো হচ্ছে

-

মাদরাসা খুলে দেয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব কমে এসেছে। সরকারও নিয়মিত বুলেটিন বন্ধ করে দিয়েছে। চাকরি, বাজার, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সব কিছু খুলে দেয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে মাদরাসা বন্ধ করে রাখার কোনো মানে নেই। বরং দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সেখানে শিক্ষার পাশাপাশি এ মহামারী থেকে উত্তরণে আল্লাহর কাছে দোয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
করোনা মহামারীর কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সব মাদরাসাও বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় পাঁচ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত হয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে সরকার গত ১২ জুলাই থেকে মাদরাসার হেফজ ও নুরানি বিভাগ চালুর অনুমতি দিয়েছে। এরপর কওমি মাদরাসা সম্মিলিত শিক্ষা বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয় ৮ আগস্ট থেকে কওমি মাদরাসার সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার। অবশ্য পরে তারা এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় শিক্ষক-আলেম-ওলামাদের পক্ষ থেকে দ্রুতই মাদরাসা খুলে দেয়ার দাবি উঠেছে।
এ দিকে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে সরকারও দাবি করছে। এ কারণে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিং বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, বাজার সব কিছুই এখন খুলে দেয়া হয়েছে। এ কারণে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাও দ্রুত খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন আলেমরা। তারা বলছেন, পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এখন মাদরাসা পুরোপুরি খুলে দেয়া উচিত। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব।
গত ১২ আগস্ট কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন দেশের শীর্ষ ১১০ আলেম। বিবৃতিতে তারা বলেন, করোনা মহামারীর কারণে দেশের প্রায় ২২ হাজার কওমি মাদরাসার ২৫ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী গত শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক পরীক্ষা দিতে পারেনি। ঈদুল ফিতরের পর কওমি মাদরাসাগুলোর নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু করা যায়নি। দীর্ঘ দিন কওমি মাদরাসা বন্ধ থাকায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মূল্যবান সময় ও জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অসংখ্য মাদরাসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শিক্ষাজীবন থেকে লাখো শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা আরো বলেন, জনগণের কল্যাণে সরকার যখন অফিস-আদালত, গার্মেন্টস-ইন্ডাস্ট্রি মার্কেটসহ সব কিছুই শর্তসাপেক্ষে খুলে দিয়েছে, রেল-বাস, লঞ্চের মতো গণপরিবহন চালু করেছে। সেহেতু দেশের সবচেয়ে বেশি পরিষ্কার-পরিছন্ন ও পবিত্রতার সাথে চলতে অভ্যস্ত কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেয়াই যুক্তিসঙ্গত। শিক্ষার্থীদের আরো একটি শিক্ষাবর্ষ কুরআন-হাদিসের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকুক এটি কাম্য হতে পারে না। আলেমরা বলেন, কুরআন-হাদিস পড়ে, তাহাজ্জুদ পড়ে দোয়া করা হলে দেশে আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হবে।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম নতুনবাগ মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আরমান নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে অফিস, আদালত, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, বাজার সব কিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে। এ ছাড়া এক মাস ধরে মাদরাসার হিফজ ও নুরানি বিভাগ খোলা হয়েছে। এ সময়ে সেখানে স্বাস্থবিধি মেনে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। মাদরাসার অন্যান্য বিভাগও খুলে দিলে সমস্যা হবে না বলে আমরা মনে করি। তিনি বলেন, পাঁচ মাস ধরে মাদরাসা বন্ধ থাকায় দাওরায়ে হাদিসসহ সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে দ্রুত মাদরাসা খুলে দেয়া উচিত।
রাজধানীর দক্ষিণখান জামিয়া ইসলামিয়া দাওয়ায়ী কওমি মাদরাসার শিক্ষক মুফতি জহির ইবনে মুসলিম নয়া দিগন্তকে বলেন, মাদরাসায় ইলমে ওহির চর্চা হয়। মাদরাসা খুলে দিলে সেখানে করোনা মহামারী থেকে উত্তরণের জন্য দোয়া করা হবে।
উত্তরা আঞ্চলিক শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি আল্লামা মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আযহারী নয়া দিগন্তকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ দিন ধরে দেশের কওমি মাদরাসাগুলো বন্ধ রয়েছে। এতে কুরআন-হাদিসের চর্চা ও ইলমে ওহির জ্ঞানার্জনে যে চরম ব্যাঘাত ঘটেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ছাত্র ও শিক্ষকরা চরম অনিশ্চয়তায় দিনযাপন করছেন। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেয়া সময়ের একান্ত দাবি।


আরো সংবাদ



premium cement