২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পর্যটন সম্ভাবনাময় মিরসরাইয়ের সাহেরখালী সমুদ্রসৈকত

মিরসরাইয়ের সাহেরখালী সমুদ্রসৈকত: নয়া দিগন্ত -

ঝরনার রানী হিসেবে আগেই সুখ্যাতি লাভ করেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই। পাশাপাশি একাধিক পর্যটন স্পট থাকায় দেশের ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে অতি পরিচিত এই উপজেলা। অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা মিরসরাইয়ে একদিকে পাহাড় অন্য দিকে সাগর। আর ভ্রমণপিপাসুরা চায় এমনই একটি স্থান। আঁকাবাঁকা পথে পাহাড় ভ্রমণ কিংবা সাগর। কোলাহল মুক্ত এমনি একটি সাগরের খোঁজে ছুটে চলেন ভ্রমণপিপাসুরা। উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ এলাকায় সমুদ্র সৈকতের আবিষ্কার করছে স্থানীয় ভ্রমণপিপাসুরা, যা ইতোমধ্যে ‘মিরসরাই সিবিচ’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
সম্প্রতি জেগে ওঠা চরের পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্পনগর। সাহেরখালী বেড়িবাঁধের স্লুইসগেট এলাকা থেকে প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার পশ্চিমে সাগরের মোহনায় নির্মাণ করা হয়েছে আরো একটি স্লুইসগেট। যা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে উপকূলের পানি। চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। নির্মাণ করা হয়েছে আরো একটি বেড়িবাঁধ। মূলত বেড়িবাঁধের পুর্বাংশে গড়ে উঠছে শিল্পকারখানা। এর পশ্চিম অংশে জেগে উঠেছে বিশাল চর।
আর এই চরকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন মিরসরাই ভ্রমণপিপাসুরা। প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত পর্যটক। দেখতে পতেঙ্গা সিবিচের মতো হওয়ায় স্থানীয়রা মিরসরাই সিবিচ নামেই দেখছে এই বিচকে। বেড়িবাঁধজুড়ে সবুজের সমারোহ, খেজুর আর নারিকেল গাছের সারি, পাখিদের কোলাহল, কিছুদূর পর পর সাগরের সাথে মিশে যাওয়া ছোট ছোট খালের অবিরাম বয়ে চলা, বাঁধের পূর্বে গ্রামীণ জনপদ আর পশ্চিমে সাগরের কোলজুড়ে ম্যানগ্রোভ বন। এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবে যে কেউ। কিছুদূর পার হলে শোনা যায় বঙ্গোপসাগরের ডেউয়ের গর্জন। আছে খেজুর, নারিকেল আর ঝাউ গাছের সারি। বিস্তৃত চরজুড়ে কেওড়া গাছের সমহার। রয়েছে হরেক রকমের বৃক্ষ। পূর্বে তাকাতেই দেখা মিলে বিস্তীর্ণ মাঠে সোনালি ফসল, আপন মনে কাজ করছে কৃষক।
পশ্চিমে তাকালে চোখ যতদূর যায় সবুজ আর সবুজ। পথে পথে দেখা মিলে সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। চিংড়ি ঘের আর মাছের চাষ। স্লইসগেট ঘেঁষে জেলেদের ব্যস্ততা, সাগর থেকে মাছ নিয়ে ফেরে জেলেরা। কেউ জাল বুনে অবসরে, কেউ আবার উত্তাল সাগরে নৌকা ভিড়ায়।
লাল কাঁকড়া, সাগরের বিভিন্ন জাতের কাঁকড়া ভেজা মাটিতে ছোট ছোট গর্তে মুখ তুলে থাকে, হাঁটতে হাঁটতে দেখা মিলে মুখ তুলে থাকা সাগরের বিভিন্ন মাছ। সবুজ বনায়নজুড়ে হরিণের পায়ের পদচিহ্ন। কখনো কখনো দেখা মিলে হরিণেরও। সন্ধ্যা হলেই শোনা যায় শিয়ালের ডাক। শীতের মৌসুম খেজুরের মিষ্টি রসের স্বাদ, আর মহিষের দুধের চা খেয়ে মুহূর্তেই দূর হবে শরীরের ক্লান্তি। সকালের সূর্যের আলোয় ঝিলমিল করে সাগরের ঢেউ। বিকেলে মিষ্টি রোদ আর সূর্যাস্তের সৌন্দর্যের মন কেড়ে নেবে যে কারোই।
সম্প্রতি পর্যটনে মুখর হয়ে উঠছে সাহেরখালী সিবিচ। প্রতিদিন ভিড় করছে শত শত পর্যটক। ঘুরতে আসা এমনই দুই বন্ধুর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। গোলাম কাউসার ও আলী রিয়াদ বলেন, মিরসরাইয়ে এত সুন্দর সিবিচ রয়েছে তা ভাবতেই ভালো লাগছে। কোলাহল মুক্ত পরিবেশ, পাখির কলকাকলী, বিশুদ্ধ বাতাস, লাল কাঁকড়া, বনের ভেতর হরিণের আনাগোনা আর নৌকা ভ্রমণ সত্যি অসাধারণ। ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে আসাও মন্দ হবে না। তারা আরো বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থা আরো উন্নত হলে ভালো হতো। তাদের দাবি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যদি সুনজর দেয় যাতায়াতের ব্যবস্থা আরো উন্নত হলে স্থানীয়সহ পর্যটকদের সুবিধা বাড়বে।
কিভাবে যাবেন : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়া থেকে সিএনজি যোগে আবুতোরাব, আবুতোরাব থেকে আনন্দরহাট পর্যন্ত সিএনজিতে যেতে হবে। সেখান থেকে কিছুদূর হেঁটে মায়ানী-সাহেরখালী সাঁকো পার হয়ে ১ কিলোমিটার হেটে পৌঁছাতে পারবেন সাহেরখালী বেড়িবাঁধ। অথবা রিজার্ভ সিএনজিতে গেলে আবুতোরাব, আনন্দরহাট, নিজামপুর ও ভোরের বাজার থেকেও যেতে পারেন।


আরো সংবাদ



premium cement