১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বন্যা কমলেও ক্ষতি বেড়েছে

-

বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি কমলেও জনভোগান্তি ও ফসলের ক্ষতি বাড়ছে। বিভিন্ন নদ-নদীর ভয়াবহ ভাঙনে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে নদী-তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের। ফসল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে হাজার হাজার কৃষক।
সিঙ্গাইরে কমছে বন্যার পানি বাড়ছে ক্ষতি
সিঙ্গাইর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় বন্যায় প্লাবিত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। সেই সাথে দৃশ্যমান হচ্ছে বন্যায় কৃষকের ক্ষয়ক্ষতিও। পানিতে নিমজ্জিত সবজি মাচাসহ জেগে উঠতে শুরু করেছে সকল প্রকার নষ্ট হওয়া ফসলি জমি। তারপরেও পুনরায় বন্যা আতঙ্ক কাজ করছে তাদের মধ্যে।
এ দিকে নতুন করে সবজি এবং অন্যান্য ফসলের বীজ সংগ্রহ, বীজতলা তৈরি, জমি চাষ, সার ও কীটনাশক ক্রয়ে যে মোটা অঙ্কের অর্থ প্রয়োজন তা নিয়ে কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে ক্ষতির পরিমাণ ৬৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও স্থানীয় কৃষকদের ধারণা ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি। এক দিকে চলমান মহামারী করোনা, অন্য দিকে আকস্মিক বন্যার কবলে ফসল হারিয়ে প্রায় ২০ হাজার কৃষক এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এলাকার কৃষক পরিবারের দুর্ভোগ এখন চরমে। কৃষকরা এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার সরকারি-বেসরকারিভাবে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। তাদের ঘুরে দাঁড়াতে প্রয়োজন সরকারের সুদৃষ্টি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মওসুমে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলাটিতে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে মাচা আকারে বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করা হয়েছিল। যার মধ্যে ১ হাজার ৬০০ হেক্টরই পানিতে তলিয়ে গেছে। ৩৫০ হেক্টর জমির পেঁপে ক্ষেত প্রায় পুরোটাই বন্যাকবলিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোনা আমন ধান ও ২ হাজার ৭০০ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত। এ ছাড়া ৮০০ হেক্টর পাটের মধ্যে ৩৫০ হেক্টর জমির পাট চাষিরা কাটতে পেরেছেন। আউশ ধানসহ বিভিন্ন সবজি ও ফলদ বাগান নষ্ট হয়েছে। অন্যান্য সেক্টরের চেয়ে কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ ব্যাপারে সিঙ্গাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ টিপু সুলতান স্বপন বলেন, কৃষকরা যাতে বন্যার পরে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন সেজন্য সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি স্বল্পমূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করা হবে। সেই সাথে তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হবে।
নদীভাঙনে ভিটে হারানো মানুষের হা-হুতাস
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে নদ-নদীগুলোর পানি কমে যাওয়ায় প্রতিবারের মতো এবারও বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। দুধকুমোর নদীর ভাঙনে জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকডাঙ্গা ও চরভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে ইতোমধ্যে তিনটি মসজিদসহ কয়েক শ’ হেক্টর আবাদি জমি ও শতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। হুমকিতে আছে দু’টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরো দু’টি গ্রাম। ভাঙন আশঙ্কায় ভুগছে তীরবর্তী পরিবারগুলো। এ ছাড়াও জেলার মোগলবাসা, সারডোব, রাজারহাট উপজেলার কালিরহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ-নদীগুলোর পানি কমে যাওয়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। দুধকুমর নদীর তীরে বসবাসরত মফিজ উদ্দিন, মমিনুল ইসলাম বলেন, ভাঙন অব্যাহত থাকায় বদলে যাচ্ছে এলাকার মানচিত্র। আবাদি জমি, বসতভিটা, বাঁশঝার, বাগান চলে যাচ্ছে নদীতে। দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে নদী ভাঙনে বসতবাড়ী হারানো মানুষগুলো।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, জেলায় পরপর দুই দফায় বন্যা হয়েছে। বন্যা চলাকালীন বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দেয়। সেই মুহূর্ত থেকে আমরা ভাঙন ঠেকাতে জরুরিভাবে কয়েকটি পয়েন্টে কাজ শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে সব ভাঙন মেরামত ও ভাঙন ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বসতবাড়ি রক্ষায় তিস্তায় ফেলা হচ্ছে জিওব্যাগ
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, ঠেকানো যাচ্ছে না নদীভাঙন। প্রতিদিন তিস্তা গ্রাস করছে শতাধিক বসতবাড়িসহ আবাদি জমি। ভাঙন ঠেকাতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর খেয়াঘাট, লালচামার ও শ্রীপুর ইউনিয়ন এলাকায় ফেলা হচ্ছে ৪০ হাজার জিওব্যাগ। স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর বিশেষ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড গতকাল বুধবার হতে জিওব্যাগ ফেলা শুরু করেছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি এবং পানি কমতে শুরু করলেও তিস্তায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। টানা ভাঙনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুর, শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর, পুটিমারী, কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটি কাপাসিয়া বাদামের চর, পোড়ার চর, কালাইসোতার চর, কেরানির চর, ফাকরের চর, লালচামার, হরিপুর ইউনিয়নের মাদারিপাড়া, চর মাদারিপাড়া, কানিচরিতা বাড়ি গ্রামে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে হাজারও একর জমি ও বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে কয়েক হাজার একর আবাদি জমি ও বসতবাড়ি। ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যার পাশাপাশি ভাঙন অব্যাহত থাকায় বেসামাল তিস্তা পাড়ের মানুষজন। উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চণ্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার নদীর বিভিন্ন চরে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। পানি কমতে শুরু করায় নদীতে তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। স্্েরাতের কারণে ভাঙনের ফলে তিস্তার বালু চরের সবুজের সমারোহ ও বসতবাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীতে। কথা হয় চণ্ডিপুর গ্রামের ফুল মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, তিস্তায় এ বছরের ভাঙন গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান, নদীভাঙন রোধে উপজেলার হরিপুর খেয়াঘাটে ১০ হাজার, লালচামারে ১০ হাজার ও ও শ্রীপুর ইউনিয়নে ২০ হাজারসহ মোট ৪০ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল