২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

নির্মাণ শুরু হয়নি সাড়ে ৭ বছরেও

দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে; সাড়ে ৫ বছরের প্রকল্প এখন সাড়ে ১০ বছরে; মাস্টার প্ল্যান তৈরিতে ৪ কোটি টাকা
-

উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে কোনো তদারকি না থাকায় অনুমোদনের পর সেগুলো বাস্তবায়ন হয় সংস্থাগুলোর মন মতো। পরিকল্পনাহীনভাবে এই সব প্রকল্প প্রস্তাব ও অনুমোদন নেয়া হচ্ছে। ফলে কবে প্রকল্প শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। মন্ত্রণালয়গুলোও সঠিকভাবে খোঁজখবর নেয় না। রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পটি যেখানে পাঁচ বছরে সমাপ্ত করার কথা সেখানে সাড়ে সাত বছরেও একটি স্থাপনা বা ভবনের কাজ শুরুই করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এখন মাস্টার প্ল্যান তৈরির জন্য পরামর্শক খাতে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মূলত ভূমি নির্বাচন ও অধিগ্রহণেই প্রকল্পের সময় শেষ হয়েছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ থেকে পাঠানো প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয় ১১৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে। সাড়ে ৫ বছরে অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু সাড়ে ৭ বছরেও প্রকল্পের অধীনে ১৪ থেকে ১৫টি স্থাপনার নির্মাণই শুরু করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা। জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব এবং নির্মাণকাজ শুরু যথাসময়ে না করতে পারায় প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। অগ্রগতি না হওয়ায় মেয়াদ আরো এক বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এখন জমির দাম বৃদ্ধি, নির্মাণ খাত পরিবর্তন, গণপূর্তের রেট শিডিউল পরিবর্তনে নির্মাণব্যয় বৃদ্ধি, মাস্টার প্ল্যান তৈরির কারণে ব্যয় ২৯ কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। পাশাপাশি প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে।
ব্যয়ের খাত পর্যালোচনা থেকে দেখা যায়, ৪৮টি অফিস যন্ত্রপাতি খাতে ব্যয় ধরা হয় ২৬ লাখ টাকা। সংখ্যা ঠিক থাকলেও এখন সেই ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ভূমি উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয় ৮০ লাখ টাকা। সেটি ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২ কোটি টাকা। প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ খরচ ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৩ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ছাত্র হল ১টি ২ কোটি ৭৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ছাত্রী হল ২ কোটি ৯৬ লাখ ৮ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১১ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, অ্যাকাডেমিক ভবন ৭ কোটি ৪১ লাখ ৭২ হাজার টাকা থেকে ব্যয় বাড়িয়ে ১৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, গভীর নলকূপ ও পাম্প হাউজ পানি সরবরাহ সিস্টেম খাতে ব্যয় ৫৮ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা, বৈদ্যুতিক স্টেশন স্থাপনে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা খরচ এখন ৩ কোটি টাকায়, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণে ৮৫ লাখ টাকা খরচের জায়গায় এখন ২ কোটি ৮৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ১ কোটি ২৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকার স্থলে ব্যয় ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল ডিপিপিতে কারিগরি বৈদেশিক শিক্ষাসফর ছিল না। এখন সেটা যুক্ত করে ব্যয় ৬ লাখ টাকা করা হয়েছে। মাস্টার প্ল্যান দেখতে নেপাল, ভুটান ও ভারত সফরে যাবেন কর্মকর্তারা। আর মাস্টার প্ল্যান তৈরিতে পরামর্শক খাতে খরচ হবে ৪ কোটি টাকা; যেটা মূল ডিপিপিতে প্রস্তাব করা হয়নি।
পরিকল্পনা থাকলেও যেসব ভবন নির্মাণ হয়নি সেগুলো হলোÑ প্রশাসনিক ভবন, ছাত্র হল ২টি, ছাত্রী হল ১টি, উপাচার্যের অফিস কাম রেসিডেন্স, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমেটরি, সহকারী অধ্যাপকদের বাসভবন, অতিথি ভবন, অ্যাকাডেমিক ভবন ২টি, টিএসসি ভবন, গভীর নলকূপ ও পাম্প হাউজ, বৈদ্যুতিক স্টেশন স্থাপন, গভীর নলকূপ স্থাপন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, মেডিক্যাল সেন্টার নির্মাণ, কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মাণ, সোলার এনার্জি সিস্টেম ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ওই এলাকায় জমি অধিগ্রহণ জটিল বিষয়। ২০১৩ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন হলেও জমির দলিল বুঝে পাওয়া যায় ২০১৭ সালে। আর ভূমির দখল পাওয়া যায় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এখন সংশোধন করে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।
এ দিকে পরিকল্পনা কমিশন শিক্ষা উইংয়ের যুগ্ম-প্রধান ইসরাত জাহান তসলিম পিইসির জন্য তৈরিকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ৭ বছর ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রকল্পভুক্ত ১৪-১৫টি স্থাপনার মধ্যে একটিরও নির্মাণকাজ এখনো আরম্ভ করা হয়নি। মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে কর্মচারীদের বেতন, প্রকল্প অফিস ভাড়া, অফিস যন্ত্রপাতি খাতে যথাক্রমে ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ২১ লাখ টাকা ও ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও গত ৩০ জুন ২০১৯ পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে বরাদ্দের চেয়ে বেশি। কর্মচারীদের বেতন খাতে ৪৫ লাখ টাকা, প্রকল্প অফিস ভাড়া সাড়ে ২৮ লাখ টাকা, অফিস যন্ত্রপাতি খাতে ৩০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ওই তিন খাতে অনুমোদিত সংস্থানের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়টি পরিকল্পনা শৃঙ্খলার পরিপন্থী।


আরো সংবাদ



premium cement