২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কেরালায় বিমান বিধ্বস্তে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০

-

ভারতের কেরালায় অবতরণের সময় রানওয়েতে ছিটকে পড়ে দুই টুকরো হয়ে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজটির নিহত আরোহীর সংখ্যা বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত ১৭২ জনের মধ্যে অন্তত ১৬ জনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক বলে গতকাল শনিবার জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স। অবশ্য স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, ১৫৬ জনের আঘাত গুরুতর। তাদের চিকিৎসা চলছে। এরই মধ্যে বিমানের ‘ব্ল্যাক বক্স’ উদ্ধার করা হয়েছে। ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার দু’টি উদ্ধার হওয়ায় ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের কারণে দুবাইয়ে আটকা পড়া ভারতীয়দের নিয়ে ফিরছিল বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটি। সেটিতে ১০ শিশুসহ মোট ১৮৪ জন যাত্রী, দু’জন পাইলট ও চারজন কেবিন ক্রু ছিলেন বলে জানায় ভারতের সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে কেরালার কোঝিকোর বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ফ্লাইট আইএক্স ১৩৪৪ দুর্ঘটনায় পড়ে। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে অবতরণের সময় সেটি রানওয়েতে ছিটকে পড়ে দুই টুকরো হয়ে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত আগুন না ধরায় উড়োজাহাজটির বেশির ভাগ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। গতকাল শনিবার উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। টেলিভিশনের ভিডিওতে দেখা যায়, উড়োজাহাজের দু’টি অংশ দুই দিকে পড়ে আছে, চার দিকে ছড়িয়ে আছে টুকরো অংশ। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরেডার টোয়েন্টিফোর জানিয়েছে, বিমানবন্দরে নামার আগে পাইলট আকাশে কয়েক দফা চক্কর দেন এবং রানওয়েতে নামার জন্য দুই দফা চেষ্টা করেন। ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি বলেছেন, চাকা পিছলে বিমানটি রানওয়ে থেকে বেরিয়ে যায় এবং ৩৫ ফুট ঢালু জমি পেরিয়ে বিমানের নাক মাটির সাথে ধাক্কা খায়। দুর্ঘটনার পর বিমানে আগুন না ধরায় অনেক প্রাণহানি এড়ানো গেছে। তবে দুই পাইলটের কারো প্রাণই রক্ষা পায়নি।
কেরালার সে রানওয়ে নিয়ে আগেও সতর্ক করা হয় : কেরালার কোঝিকোরে বিমানবন্দরের রানওয়েকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে ৯ বছর আগেও সতর্ক করা হয়েছিল। তখন সিভিল অ্যাভিয়েশন সেফটি অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, অন্তত বৃষ্টির সময় বিমান ওঠানামার ক্ষেত্রে রানওয়েটি অনিরাপদ। তবে এর পরও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ঘটনার পরপরই ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশনের তরফে জানানো হয়, অবতরণের পরে বিমানটির চাকা পিছলে যায়। ফলে সেটি থামতে পারেনি। রানওয়ে অতিক্রম করে পাশের ৩৫ ফুট নিচু খাদে পড়ে যায় বিমানটি। তার পরই সেটি দুই টুকরো হয়ে যায়। কেবিনের দিকের অংশে আগুন লেগে দুই পাইলটের মৃত্যু হয়। বাকি অংশে আগুন লাগেনি।
বিমান চলাচলের পরিভাষায় কোঝিকোরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে হল ‘টেবিলটপ’। অর্থাৎ পাহাড় বা মালভূমির ওপর জমি কেটে রানওয়ে তৈরি করা হলে তাকে টেবিলটপ বিমানবন্দর বলা হয়। এ ধরনের বিমানবন্দরের রানওয়ে হয় স্বল্পদৈর্ঘ্যরে। কোঝিকোরের যে রানওয়েতে দুর্ঘটনা ঘটেছে (১০ নম্বর রানওয়ে) তার দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ২,৮৫০ মিটার। স্বল্পদৈর্ঘ্যরে রানওয়ের শেষেই গভীর খাদ রয়েছে। এ ছাড়া সেফ ল্যান্ডিংয়ের জন্য রানওয়ের দুই পাশে প্রয়োজনীয় জায়গাও নেই। আর তাই বৃষ্টিতে এ ধরনের রানওয়েতে বিমান নামানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কোঝিকোরে বিমানবন্দরে এ সমস্যা নতুন নয়। বারবার রানওয়ের দৈর্ঘ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফলে অনেক আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা তাদের বোয়িং ৭৭৭ বা এয়ারবাস এ৩৩০-এর মতো বড় বিমানগুলোর এই বিমানবন্দরে অবতরণ বন্ধ করে দিয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement