২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ওসি প্রদীপের রোষে এখনো জেল খাটছেন ২ চোখ হারানো সাংবাদিক ফরিদ

ফরিদুল মোস্তফা খান -

টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তার ভাগ্যে জুটতো ‘ক্রসফায়ার’, নয়তো মামলা আর নির্যাতন। এমনকি সংবাদকর্মীরাও তার হাত থেকে রেহাই পাননি। তার বিরুদ্ধে সংবাদ করে দৈনিক কক্সবাজারবাণী ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘জনতারবাণী ডটকমের’ সম্পাদক ও প্রকাশক ফরিদুল মোস্তফা খান মাসের পর মাস জেলে বন্দী। প্রদীপের নির্যাতনে চোখ হারিয়েছেন তিনি। থানা হাজতে তো নয়ই, কারাগারে নেয়ার পরও ফরিদুল কোনো চিকিৎসা না পেয়ে আজ তিনি পঙ্গু। কারাগারে কোনো রকম বেঁচে আছেন তিনি। ফরিদুলের ওপর নির্মম এই নির্যাতনের কাহিনী নিয়ে কেউ সংবাদ প্রকাশ করতেও সাহস পাননি।
টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপের ক্ষোভের শিকার হয়ে ১১ মাস ধরে ৬টি মিথ্যা মামলায় কারাবাস করছেন ফরিদুল। ঠাণ্ডা মাথার খুনি প্রদীপের সীমাহীন বর্বরতায় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা এখন কক্সবাজার কারাগারে বন্দী আছেন। ওই ওসি ও তার সহযোগীদের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে ফরিদুল মোস্তফাকে ধরে টেকনাফ থানায় নিয়ে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালান প্রদীপ কুমার। সে সময় তার চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে নির্যাতন করায় বর্তমানে দু’টি চোখই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়া তার হাত-পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এতেও ক্ষ্যান্ত হননি ওসি, ইয়াবা ব্যবসায়ী সাজিয়ে ফরিদুল মোস্তফাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ওই মামলায় জামিনের ক্ষেত্রেও ওসি প্রদীপ কুমার এ পর্যন্ত নানা প্রভাব ও কূটকৌশল খাটিয়ে বাধার সৃষ্টি করে নির্যাতিত সাংবাদিককে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছিল।
ফরিদুল মোস্তফার পারিবারিক সূত্র জানায়, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের শাহআলীবাগের প্রতীক হাসনাহেনা বাসায় অভিযান চালিয়ে কথিত চাঁদাবাজির মামলায় ফরিদুলকে গ্রেফতার করা হয়। মিরপুর মডেল থানার পুলিশের সহায়তায় টেকনাফ ও কক্সবাজার থানা পুলিশ এই অভিযানে অংশ নেয়। পরে ফরিদুলকে নিয়ে লোক দেখানো অভিযানে কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়ায় বাড়ি থেকে গুলিসহ ২টি অস্ত্র, ৪ হাজার পিস ইয়াবা ও বিপুল পরিমাণ বিদেশী মদের বোতল উদ্ধার দেখায় টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে কক্সবাজার মডেল পুলিশ। তার অপরাধ গ্রেফতারের কয়েক মাস আগে কক্সবাজার জেলার মাদক কারবারি, মাদক সিন্ডিকেট, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ঘুষ, দুর্নীতিসহ টেকনাফ থানা ও কক্সবাজার থানার ওসির বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশ করে আসছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার জেলার আইনশৃঙ্খলার অবনতি, অপরাধে নিমজ্জিত টেকনাফ থানার ওসি, টাকা না পেলে ক্রসফায়ার দিচ্ছে ওসি প্রদীপ, শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এরপরই সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের রোষানলে পড়েন। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে গত বছরের ৩০ জুন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় একজনকে বাদি সাজিয়ে চাঁদাবাজি মামলা (নং ১১৫, জিআর ৩১৬/১৯) করা হয়। ফরিদুল পুলিশের আক্রোশ থেকে বাঁচতে হুলিয়া মাথায় নিয়ে ঢাকায় আত্মগোপন করেন। পুলিশি নির্যাতন ও সাজানো মামলার আশঙ্কা থেকে বাঁচতে ও নিজের পরিবারের জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর গত বছরে ২৮ জুলাই পৃথকভাবে মানবিক আবেদন করেন।
ফরিদুলের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়, উক্ত আবেদনের পক্ষে প্রশাসন কোনো রকম তদন্ত না করে উল্টো তাকে গ্রেফতার করে। টেকনাফ থানার ওসির নেতৃত্বে ২২ অক্টোবর রাত সোয়া ১টার দিকে কক্সবাজার সদর থানার পুলিশকে সাথে নিয়ে পৌরসভার ১ ওয়ার্ডের সমিতিপাড়ার মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়ার বাসায় হানা দেয় পুলিশ। ফরিদুল মোস্তফার ঘুমন্ত দুই বোনকে ওসি প্রদীপ কুমারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল শারীরিক নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি করে। আটকের ভয়ভীতি দেখিয়ে রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয় তাদের। এরপর নাটকীয়ভাবে ২টি অস্ত্র, ৪০০০ ইয়াবা ও ১১ বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার দেখায় পুলিশ। তাতেই শেষ নয়, ফরিদের বাসায় তালা লাগিয়ে দিয়ে চলে যায় পুলিশের সদস্যরা। পুলিশ আগে থেকে নিয়ে আসা বাইরে অপেক্ষমাণ একদল সংবাদকর্মীকে সাথে নিয়ে বাসার তালা ভফুার অভিনয় করে। এ সময় ওসি প্রদীপ কুমার দাম্ভিকতা দেখিয়ে বলেন, ‘এই ফরিদুল মোস্তফা খানের পরিবারকে আমি ইয়াবা পরিবার বানিয়ে ছাড়ব।’ ওই সাজানো অভিযানের ঘটনা দেখিয়ে একই দিন কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, ইয়াবা ও বিদেশী মদ উদ্ধার দেখিয়ে পুলিশ বাদি হয়ে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করে। সাজানো মামলায় গ্রেফতারের দীর্ঘ ৭২ ঘণ্টার পর সন্ধ্যা ৭টায় কঠোর গোপনীয়তার গুরুতর জখম অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছেন, সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানকে পুলিশ হেফাজতে লোমহর্ষক নিপীড়ন করায় সারা শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এখনো তিনি তার একটি হাত ও একটি পা নাড়াচাড়া করতে পারছেন না। চোখসহ প্রস্রাবের রাস্তা থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এখনো চোখে স্পষ্ট করে কিছু দেখতে পারেন না।
ক’জন সংবাদকর্মীকে ঢাকা মিরপুর থেকে ধরে এনে ৭২ ঘণ্টা পুলিশের হেফাজতে রেখে টানা নিপীড়ন করা এবং তার দৈহিক নির্যাতনের চিত্র দেখে হতবাক হয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। গ্রেফতারের আগে দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলাসহ ৬টি মামলায় এখনো তিনি জেলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ১১ মাসে বন্ধ হয়ে গেছে ফরিদের তিন ছেলেমেয়ের পড়া লেখা। তিন সন্তান আর বৃদ্ধা মা নিয়ে চরম অভাব অনটনে দিন কাটছে তাদের। সংসার চালাতে ও মামলা খরচের ঘানি টানতে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন বসতভিটা। মামলার খরচ এবং আবারো পুলিশি নিপীড়ন ও ক্রসফায়ারের ভয়ে তাকে জামিনে বের করতে পারছে না পরিবার। মানুষের আর্থিক সহায়তায় কোনো রকম দিনাতিপাত করছে পরিবার।
নির্মম এই কাহিনী নিয়ে গত এক বছরে কোনো সংবাদমাধ্যম রিপোর্ট পর্যন্ত করতে সাহস করেনি। স্থানীয় কোনো সংবাদকর্মী বা ফরিদুলের সুহৃদ কেউ মুখ খোলার সাহস পর্যন্ত পাননি। পরিবারের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করে সংবাদ সম্মেলন করার পরও উল্লেখযোগ্য কোনো মিডিয়া তা প্রকাশ করেনি। এতটা ভীতি ছিল ওসি প্রদীপকে নিয়ে। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, ওসি প্রদীপের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। সীমান্ত এলাকার কুখ্যাত মাদক কারবারিদের সাথে তার সখ্য। যখনই তার মনে হয়েছে কেউ তার প্রতিবাদ করতে পারে তাকেই সরিয়ে দেয়া হয়েছে। হয় এনকাউন্টারের কথা বলে, না হয় নির্যাতন ও মামলা করে মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল