করোনার প্রভাবে রফতানি আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা
বিদায়ী বছরে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা- আশরাফুল ইসলাম
- ০৬ আগস্ট ২০২০, ০২:৩৬
করোনার প্রভাবে রফতানি আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। যে হারে রফতানি আয় কমেছে ওই হারে আমদানি ব্যয় কমেনি। ফলে এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৯-২০) পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে প্রায় ১৯৩ কোটি মার্কিন ডলার, যা টাকার অঙ্কে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি আগের অর্থবছরের (২০১৮-১৯) চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। পণ্যবাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসেবের ভারসাম্যও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, গত মার্চ থেকে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এতে তৈরী পোশাকের রফতানি আদেশ রাতারাতি স্থগিত হয়ে যায়। রফতানি আয়ের প্রধান বাজার ইউরোপের কয়েকটি দেশসহ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরী পোশাকের বাজারে বড় ধরনের ধস নামে। রফতানি আদেশ বাতিল ও কিছু স্থগিত থাকায় রাতারাতি অনেক তৈরী পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য খাতেও রফতানি আয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ভোগব্যয় কমে গেছে। এর ফলে চাহিদার ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। এক টানা মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন মাস পর্যন্ত রফতানি আয় ধারাবাহিকভাবে কমে যায়। এ সুবাদে বছর শেষে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ হয়ে যায় যেখানে আগের অর্থবছরে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল প্রায় ৬ শতাংশ।
এ দিকে করোনার প্রভাবে বহির্বিশ্বের মতো দেশের অভ্যন্তরেও ভোগব্যয় কমে যায়। কমে যায় পণ্যের চাহিদা। লকডাউন, অবরোধের কারণে দেশীয় কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে কমে যায় পণ্যের কাঁচামাল আমদানি। আগে থেকেই সামগ্রিক বিনিয়োগ স্থবির ছিল। এর সাথে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যুক্ত হওয়ায় পণ্যের কাঁচামাল আমদানি বেশি হারে কমে যায়। এতে রফতানি আয়ের মতো আমদানি ব্যয়ও কমে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সমাপ্ত অর্থবছরে আমদানি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। যেখানে আগের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ, আর তার আগের বছর ছিল ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, আমদানি ব্যয় যে হারে কমে যায়, রফতানি আয় তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হারে কমেছে। আয়ের তুলনায় ব্যয় কমে যাওয়ায় পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৫৮৩ কোটি ডলার, সেখানে বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৯-২০) তা বেড়ে ১ হাজার ৭৮৬ কোটি মার্কিন ডলারে উঠে যায়। এক বছরের ব্যবধানে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে হয় প্রায় ১৯৩ কোটি মার্কিন ডলার। যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসেবের ভারসাম্যও ঋণাত্মক হয়ে গেছে। কারণ আমদানির তুলনায় রফতানি আয় কমে গেলে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে চলতি হিসাবের ভারসাম্য হয়েছে ঋণাত্মক প্রায় ৪৮৫ কোটি ডলার। চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হওয়ার অর্থই হলো বিদেশেী বিনিয়োগ কমে যায়। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কোনো দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেশি হলে এবং সেই সাথে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। কারণ তাদের বিনিয়োগ ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এ কারণেই চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হলে বিদেশী বিনিয়োগের ওপর ঋণাত্মক প্রভাব পড়ে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা