২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

চিলমারীতে নদীভাঙনে বিলীন গ্রামের পর গ্রাম

-

উজানের ঢল ও অতিবৃষ্টির ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে কুড়িগ্রাম চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চলের ১৭ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি। তছনছ হয়েছে উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন অষ্টমীর চর, চিলমারী ও নয়ারহাটের বিভিন্ন গ্রাম। দু-তিন সপ্তাহ আগে যেখানে ছিল গ্রাম,গাছ-গাছালি, মসজিদ, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন সেখানে ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তাল ঢেউ। দিশেহারা মানুষ বসতভিটা, জমিজমা হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও অন্যের জায়গায়।
জানা গেছে অষ্টমীর চর ইউনিয়নে মাঝবাড়ি, ভাসান পাড়া, খর্দবাঁশপাতার, খর্দবাঁশপাতার দক্ষিণপাড়া, খর্দবাঁশপাতার পূর্বপাড়া, নাওশালা খারুভাঁজ পশ্চিমপাড়ার প্রায় ৭২৬ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া ৮টি মসজিদ, নটারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নটারকান্দি বাজার নদীতে বিলীন হয়েছে। চিলমারী ইউনিয়নের পশ্চিম মনতলা, পশ্চিম গাজীরপাড়া, কড়াই বরিশালের ঘাট থেকে শাখাহাতির ঘাট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার ৪ শতাধিক ঘরবাড়িসহ ১টি প্রাইমারি স্কুল ও ১টি মসজিদ নদীতে বিলীন হয়েছে। নয়ারহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ খাউরিয়ার চর, উত্তর খাউরিয়ার চর, চর খেদাইমারী, দক্ষিণ ফেইচকা, ২ শ’ বিঘা ও খেরুয়ার চরের প্রায় ৬২০ পরিবারের বাড়িঘরসহ ৩টি ইউনিয়নের ১৭ শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হানিফা জানান, কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে তার ইউনিয়নের ৬ শতাধিক পরিবার নদীতে সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের লোকজন বর্তমানে আশ্রয়ণকেন্দ্র এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়ে কোনো রকমে দিনাতিপাত করছে। অষ্টমীর চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তালেব ফকির জানান, মাত্র দু-তিন সপ্তাহের মধ্যেই নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেল সাত-আটটি গ্রামের ৭ শতাধিক পরিবার। বর্তমানে নদীতে পানি কমতে থাকলেও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে চর মুদাফৎ কালিকাপুর, মুদাফৎ কালিকাপুর ও নটার কান্দি গ্রামে। হুমকির মুখে রয়েছে নটারকান্দি দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়, খর্দবাঁশপাতার হাফিজিয়া মাদরাসা ও বেশ কিছু মসজিদ।
কুড়িগ্রামে নেমে গেছে পানি
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে সব কটি নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে। প্লাবিত নি¤œাঞ্চলগুলোর পানিও নেমে যাচ্ছে। এক মাসের বন্যায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় মানুষ চরম দুর্ভোগে সময় কাটিয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলোতে ঈদ আনন্দ ছিল মলিন। নদীর ভাঙন ও ¯্রােতে অনেকে হারিয়েছে তাদের বাড়িঘর, ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের, নষ্ট হয়েছে আমনের বীজতলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত। জেলা প্রশাসন সূত্র মতে বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল জেলার ৩টি পৌরসভার মধ্যে ২টি পৌরসভার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়ন। পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে কাটিয়েছেন আড়াই লাখ মানুষ।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, বন্যায় জেলার ৫টি সরকারি এবং ১৩৯টি আধাসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালীপদ রায় জানান, জেলায় ১ হাজার ১৫১ জন মৎস্যচাষির ২ হাজার ১৭৯টি পুকুর প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার টাকার মাছ।
সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান জানান, বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে ১১ জন। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৮৫টি মেডিক্যাল টিম বন্যার সময়ে কাজ করেছে। জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রকৌশলী সায়হান আলী জানান, বন্যায় ৪২ হাজার ২৩৭টি টিউবওয়েলের ক্ষতি হয়েছে। উঁচু বাঁধ ও রাস্তায় আশ্রিতদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করতে সাময়িকভাবে টিউবওয়েল ও লেট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো: মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, বন্যায় ৭ হাজার ৭৬৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্র জানায়, বন্যার পানিতে ৩৭ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক আরিফুল ইসলাম জানান, বন্যায় ৩১.৫০ কিলোমিটার বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার, ধরলা সদর পয়েন্টে ২৮ সেন্টিমিটার ও তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
পদ্মার পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপরে
শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, পদ্মা নদীর প্রবল ¯্রােতে নদীর তলদেশ থেকে জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক সরে যাওয়ায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে সুরেশ্বর দরবার রক্ষা বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। ফলে আশপাশের লোকজন নতুন করে বাড়িঘর হারানোর ভয়ে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এ দিকে ভাঙন রোধে ওই স্থানে সিসি ব্লক ও জিওব্যাগ ডাম্পিং করছে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা জানিয়েছে ভাঙন স্থানে শুকনো মৌসুমে বাঁধ নির্মাণে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপর দিকে গত দুই দিন ধরে পদ্মার পানি আবারো বাড়তে শুরু করায় শরীয়তপুরের ৪টি উপজেলার প্রায় ৪ লাখ পানিবন্দী মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। পদ্মা নদীর সুরেশ্বর পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল বুধবার সকালে জোয়ারের সময় বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
হাতিয়ায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত
হাতিয়া (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, এক দিকে লঘুচাপ অন্য দিকে পূর্ণিমার প্রভাবে সাগরে অস্বাভাবিক জোয়ারে নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ৯টি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
গতকাল সকাল থেকে দমকা হাওয়ার সাথে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। দুপুরে অস্বাভাবিক জোয়ারে হাতিয়ার নলচিরা, সুখচর, চরঈশ্বর, তমরদ্দি, সোনাদিয়া, নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন এবং প্রশাসনিক এলাকা নলেরচর ও বয়ারচরের নি¤œাঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ২০ হাজার লোকের বসতঘরসহ আশপাশের এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। এ সময় বৃহৎ ব্যবসায়িক কেন্দ্র আফজিয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজারও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। প্লাবিত এলাকার পুকুরের মাছ ও গবাদিপশু ভেসে যায়। পানিবন্দী হয়ে পড়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় এসব এলাকা অতি সহজে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। চরঈশ্বর ইউনিয়ন ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: আসির উদ্দিন জানান, আমফানের পরে এখন পর্যন্ত তিন ধাপে জোয়ারের পানিতে এসব এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ চরম সীমায় পৌঁছেছে।


আরো সংবাদ



premium cement
সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক

সকল