১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পদ্মায় লঞ্চ ডুবির আতঙ্কে যাত্রীর চাপ ফেরিতে

শিমুলিয়া ফেরিঘাটে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় : নয়া দিগন্ত -

নাড়ির টানে ছুুটছে মানুষ। গত বুধবার থেকে ঈদের পূর্ণাঙ্গ কর্মদিবস শুরু হওয়ায় সূর্যের আলো না উঠতেই দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ঘাটে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ২৩ জেলার ঈদে ঘরমুখো যাত্রী। গতকাল ভোর ৫টা থেকে লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটে বেড়েই চলেছে চাপ। নৌরুটের মাওয়া ঘাটের লঞ্চযাত্রী পারপারের ভিড় কম, তবে নদীরতীরে পল্টুনে অপেক্ষা করছেন নারী-পুরুষ শিশুসহ ফেরি যাত্রী।
লঞ্চ দুর্ঘটনার ভয়ে যাত্রীরা ফেরিতে ভরসা করছে। এ দিকে ঈদে নিরাপদে যাত্রী পারপারের জন্য রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী, মাঝিকান্দি মাদারীপুর নৌরুটে সংশ্লিষ্ট বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসির পুলিশ প্রশাসনসহ ঘাট ইজারাদারদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা। এ ছাড়া ঘরমুখো যাত্রীরা কোনোরকম দুর্ভোগ ছাড়াই যেন নির্বিগ্নে বাড়ি যেতে পারেন সে জন্য ঘাটে ঘাটে টহল দিচ্ছে জেলা প্রশাসন।
ঈদের বাকি আর মাত্র দুই দিন। প্রিয়জনের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে প্রতি বছরের মতোই এবারো দক্ষিণবঙ্গের ২৩ জেলার প্রবেশ পথ শিমুলিয়া কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে ঘরমুখো লাখ মানুষ এখন প্রতিযোগিতা করে ফেরিতে উঠছেন। গত বছর ঈদের আগে লঞ্চঘাটে মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও এবারের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। লঞ্চে পদ্মা পারি দিতে অনীহা থাকায় যাত্রীর চাপ রয়েছে ফেরিগুলোতে। যে কারণে লঞ্চঘাটে যাত্রীদের ভিড় এখন ফেরিঘাট এলাকায়।
মাওয়ার কাছে পদ্মায় পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবিতে শতাধিক যাত্রীর প্রাণহানির পাঁচ বছরের বেশি হয়ে গেছে। কিন্তু এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের এখনো বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর মধ্যে। তা ছাড়া, এত ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর এখনো এই রুটে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে বহু নৌযান। সরকারি হিসেবে ৪৯ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি ৫৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। অনেক চেষ্টায় খুঁজে পাওয়া যায়নি দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চটি। এ দুর্ঘটনায় দায়েরকৃত দু’টি মামলায় আসামিরা জামিনে মুক্ত রয়েছেন। হাইকোর্টের আদেশে মেরিন কোর্টে দায়েরকৃত মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তবে থানায় দায়ের করা মামলাটি চলমান রয়েছে।
শিমুলিয়া নৌরুটের খুলনাগামী যাত্রী মো: জাকিউর রহমান বলেন, বন্যার পানিতে নদী উত্তাল। এ ছাড়া সারা দেশে লঞ্চ দুর্ঘটনাও বাড়ছে। লঞ্চ আর ফেরিতে নদী পারাপারের ভাড়াও সমান। তাই ফেরিতে নদী পারাপারে একটু বেশি সময় লাগলেও নিরাপদ। পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনার শিকার হওয়া যাত্রী আ: রহিম মিয়া বলেন, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ায় ঈদের মধ্যে পারাপার হওয়া কিছুটা ঝুঁকি থাকে আবার নৌরুটে যানবাহনের দীর্ঘলাইন ও লঞ্চে উপচে পড়া ভিড় থাকে এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কিছু বিষয় থাকে এগুলো সংশ্লিষ্টরা নজর তদারকি করলে লঞ্চ দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় না।
শিমুলিয়া ঘাটের ইজারা সংশ্লিষ্টরা বলেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ নেই লঞ্চঘাটে। করোনা সময় থেকেই ব্যবসা মন্দা। ঈদ মৌসুমেও ফাঁকা লঞ্চঘাট।
বিআইডব্লিউটিসির মেরিন অফিসার আহম্মেদ আলি ও মাওয়া (ট্রাফিক) ইনচার্জ হিলাল উদ্দিন বলেন, এ নৌরুটে ১৭টি ফেরির মধ্যে ১০ ফেরি ৮৭টি লঞ্চ চলাচল করছে।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে-র্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস,আনসার বাহিনীর কর্মীরা ঘাট এলাকায় রয়েছে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পারাপারের কোনো সুযোগ নেই।
লৌহজং থানা ওসি মো: আলমগীর হোসাইন বলেন, শিমুলিয়া নৌরুটে ছোট বড় মিলে ১০টি ফেরি চলাচল করছে। বর্তমানে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ রয়েছে। তবে লঞ্চ বা ফেরিতে করে যাত্রীদের নৌরুটে পারাপারের বিষয়টি একান্তই ব্যক্তিগত বলে জানান তিনি। তা ছাড়া কুচিয়ামোড়া ব্রিজ থেকে ফেরি ঘাট এলাকা পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সাথে ঘাটএলাকায় বসানো হয়েছে সিসি টিভি। যাতে যাত্রীদের নিয়ে কোনোরকম অনিয়ম বা হয়রানি দেখা গেলে তার বিরুদ্ধে আইনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement