২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বড় ভবনগুলো বীমার আওতায় আনার প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থা

-

দেশের বড় ভবনগুলোকে বীমার আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেয়ার ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও এই সম্পর্কে কোনো নীতিমালাই তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ফলে চলতি বছরে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য বড় ভবনগুলোকে বীমার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে না বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, গত জানুয়ারি মাসে এই সম্পর্কে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত হয়।
জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহরের ৯০ ভাগ বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ফলে বড় অগ্নিদুর্ঘটনার কারণে এসব ভবনে অনেক সময় জীবনহানির পাশাপাশি সম্পদের ক্ষতি হয় বিশাল। অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা এড়াতে দেশের সব ভবন অগ্নিবীমার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ বিষয়ে জানুয়ারি মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন যুগ্ম সচিবের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকেই নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকের কার্যবিবরণীতে এ কথা উল্লেখ আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একটি সূত্র জানায়, নীতিমালা প্রণয়নের জন্য কয়েকটি বৈঠক হওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তাই নীতিমালা প্রণয়নের কাজটিও এগোয়নি। তবে আগামী মাসে বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠকের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ দিকে গত জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত এই সম্পর্কিত এক বৈঠকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পরিচালক কামরুল হক জানিয়েছিলেন, দেশে অনেক বহুতল ভবন রয়েছে, যেগুলো কখনো বীমার আওতায় আনা হয় না। ট্যারিফ বেশি হওয়ায় মূলত অনেকে বীমা করেন না। এটি বাস্তবায়নে আইনগতভাবে তাদের বাধ্য করতে হবে।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রতিনিধি মো: ইমাম শাহীন জানান, বহুতল ভবনগুলো বীমার আওতায় আনতে হলে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। দেশে বর্তমানে প্রিমিয়ামের হার প্রতি বর্গফুট শূন্য দশমিক ৭৫ টাকা। এটি দেশব্যাপী চালু করতে হলে প্রিমিয়াম রেট কমাতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম মিলে বাস্তবায়নযোগ্য একটি প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ করতে পারে। এ ছাড়াও সিটি করপোরেশনের বার্ষিক নিবন্ধন ফি নবায়নের সময় ভবনগুলোর বীমা আছে কি না, তা সিটি করপোরেশন খতিয়ে দেখতে পারে।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধি জানান, দেশে সাধারণত ৬ থেকে ১০ তলা পর্যন্ত অনেক ভবন রয়েছে। ১৮ তলার ওপরে ভবন করতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে অতিরিক্ত ফি দিতে হয়। ভবনগুলো বীমার আওতায় আনতে রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা যেতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে যদি আইন করার প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই তা করতে হবে। এ বিষয়ে বিআইডিআরএ সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ বা সেমিনারের আয়োজন করতে পারে।
বৈঠকে স¦রাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রতিনিধি জানান, শুরুতেই বহুতল ভবনগুলো অগ্নিবীমা পলিসির মধ্যে আনতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হলে তা কতটা বাস্তবসম্মত তা বিবেচনায় আনতে হবে। তবে প্রাথমিকভাবে পাইলটিং ব্যবস্থায় ভবনগুলো বীমার আওতায় আনলে ভালো হয়। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে যে আইনগুলো আছে সেগুলো যাতে বাস্তবায়ন করা যায় সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। এলাকাভিত্তিক আলোচনা করে পাইলটিং কাজ শুরু করা যেতে পারে।
তিনি আরো জানান, রাস্তা প্রশস্ত না হওয়ায় অনেক সময় বহুতল ভবনের আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বেগ পেতে হয়, গাড়িগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে না। ফলে ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক পরিসরে আলোচনা হতে পারে। প্রয়োজনে সচিব কমিটিতে আলোচনার উদ্যোগও নেয়া যেতে পারে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, বিদ্যমান আইনগুলো পর্যালোচনা করা উচিত। সার্বিকভাবে বিবেচনা করে তা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে পাইলটিং ভিত্তিতে কাজ শুরু করা যেতে পারে। সরকারি-বেসরকারি সব ভবন বীমার আওতায় আনতে চায় সরকার। কিভাবে এটি বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়েও কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, দেশের বহুতল ভবনগুলোর বেশির ভাগই পুরনো, তাই বর্তমানে সেগুলোতে প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সংযোজন করা কঠিন। তা ছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলেও আগুনের ঘটনা বাড়ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ২২ হাজার ২৮৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ সব ঘটনায় মারা গেছে ২ হাজার ১৩৮ জন। দগ্ধ হয় ১৪ হাজার ৯৩২ জন। এ বছর আগুনের ঘটনায় ২০৩ কোটি ৯২ লাখ ৭৪ হাজার ৩১৫ টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে।
এ ছাড়াও ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে সারা দেশে আগুন লাগার দেড় লাখ ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় এক হাজার ৪৯০ জনের মৃত্যু এবং ৬ হাজার ৯৪১ জন দগ্ধ হয়েছে। আগুনে সম্পদ ও প্রাণহানি কমিয়ে আনতে সরকারি-বেসরকারি সব ভবন বীমার আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংবিধান বিরোধী নয় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মিজানুরের ইন্তেকাল থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সাথে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লস ২২ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে : নসরুল হামিদ গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের

সকল