২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনাঝুঁকির আশঙ্কা

স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটের নৌযানে

মসজিদে রূপান্তরের পক্ষে আদালতের রায়
শিমুলিয়া কাঁঠালবাড়ী রুটের লঞ্চে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। লঞ্চের ভেতর যাত্রীরা গায়ে গা লাগিয়ে বসে আছেন : নয়া দিগন্ত -

সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই শিমুলিয়া- কাঁঠালবাড়ী নৌ রুটের লঞ্চগুলোতে। স্পিডবোট বা ওয়াটার বাসের অবস্থা তো আরো ভয়াবহ। প্রতিটি লঞ্চের ভেতরে যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য রঙ দিয়ে দাগ কেটে দেয়া হলেও তা কেবলই লোকদেখানো। বাড়তি টাকার লোভে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ায় সেই দূরত্ব বজায় রাখতে পারছেন না যাত্রীরা। আবার অনেক যাত্রীর মাঝেও সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীনতা রয়েছে, যার কারণে লঞ্চের ভেতর শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে সবাইকে। একজন মানুষ অপরজনের এত কাছে যে, তাদের নিঃশ্বাসের বাতাস অন্যজনের শরীরে লাগছে। গত কয়েক দিন শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌ রুট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ঢাকা থেকে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মানুষের যাতায়াতের রাস্তা এই শিমুলিয়া ও কাঁঠালবাড়ী নৌ রুট। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে চলাচল করলেও পদ্মা নদী পার হতে তাদের এই রুটে নৌযান ব্যবহার করতে হয়। নানা কোম্পানির বাস থেকে নেমে লঞ্চ বা স্পিডবোটে করে শিমুলিয়া ও কাঁঠালবাড়ী পার হয়ে পুনরায় বাসে বা অন্য যানবাহনে চড়তে হয়, যার কারণে এই ঘাটে যাত্রীদের উপস্থিতি থাকে অনেক বেশি।
সরেজমিন শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন পরিবহন থেকে নেমে যাত্রীরা পদ্মা পারাপারের জন্য লঞ্চে উঠছেন। লঞ্চঘাটে হ্যান্ড মাইক দিয়ে যাত্রীদের মুখে মাস্ক পরার জন্য ঘাট কর্তৃপক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। তারা বলছেন, প্রতিটি যাত্রীকেই মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক না পারলে কাউকে লঞ্চে উঠতে দেয়া হবে না। আবার কোনো কোনো লঞ্চে ওঠার সময় যাত্রীদের হাতে জীবাণুনাশক দিতেও দেখা গেছে। কিন্তু লঞ্চে যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দিতে নারাজ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। যতক্ষন পর্যন্ত লঞ্চ পরিপূর্ণ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তারা যাত্রী তুলতে থাকে।
এ দিকে লঞ্চের ভেতরে সামাজিক দূরত্ব ঠিক রেখে যাত্রীদের বসার জন্য রঙ দিয়ে দাগ কেটে দেয়া হলেও তা মানতে পারছেন না যাত্রীরা। কারণ অতিরিক্ত যাত্রী হওয়ায় সবাইকেই বসতে দিতে হচ্ছে। ফলে শরীরের সাথে মিশেই বসতে হচ্ছে সবাইকে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন যাত্রীরা।
খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, তিনি ফাল্গুনী পরিবহনের একটি বাসে করে আসছেন। বাসে প্রতি দুই সিটে একজন বসলেও ব্যতিক্রম অবস্থা লঞ্চে। এখানে ঈদের সময়ের মতো ঠাসাঠাসি করে না বসলেও যাত্রীদের শরীরের সাথে মিশেই বসতে হচ্ছে। একজনের জন্য দাগ কাটা থাকলেও সেখানে দু’জনকেই বসতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এ ক্ষেত্রে যাত্রীদের কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ তারাও টাকা দিয়েই লঞ্চে উঠেছেন। নয়ন নামে অপর এক যাত্রী বলেন, সারা রাস্তা মাস্ক পরে এলেও অনেকেই লঞ্চের ভেতরে এসে তা খুলে ফেলছেন। অথচ এখানে একজন মানুষ অপরজনের এত কাছে যে তাদের নিঃশ্বাসের বাতাস অন্যজনের শরীরে লাগছে।
এ ব্যাপারে এমভি রিয়াদ এক্সপ্রেস লঞ্চের মাস্টার আব্দুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, লঞ্চে যাত্রী ওঠার সময় যাদের মাস্ক নেই তাদের লঞ্চে উঠতে দেয়া হচ্ছে না। লঞ্চ চলাচলে আমরা সরকারের সব নির্দেশনা মেনে যাত্রী পারাপার করছি। পাশাপাশি লঞ্চে ওঠার সময় প্রতিটি যাত্রীকে স্যানিটাইজার দেয়া হচ্ছে। নিয়মিত ধোয়ামোছা ও স্প্রে করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশ মতো অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করা হচ্ছে। আগে প্রায় ২৪০ জন যাত্রী বহন করা হলেও এখন ১০০ জনের বেশি যাত্রী বহন করা হচ্ছে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দাগ টেনে দেয়া হলেও যাত্রীরা তা মানাতে চায় না। তারা বলে, আমরা একই পরিবারের কোনো কিছু হবে না।
শিমুলিয়া বন্দর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক শাহাদাত বলেন, ঘাটে জীবাণুনাশক টানেল রয়েছে; কিন্তু বিদ্যুতের সমস্যার কারণে জেনারেটর সার্ভিস দিয়ে তা সব সময় সচল রাখা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া যাত্রীদের বারবার বললেও তারা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে চায় না। করোনাভাইরাসের সমস্যাটা দীর্ঘ দিন ধরে চলছে। এটা আমাদের জন্য একটা বাড়তি কাজ। যাত্রীরা যদি নিজে থেকে সচেতন না হয় তাদের কতক্ষণ বোঝানো যায়?


আরো সংবাদ



premium cement