২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বনানী কবরস্থানে আজ সাহারা খাতুনের দাফন

-

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনকে আজ শনিবার রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তার বাবা-মার কবরের পাশে দাফন করা হবে। গতরাতেই তার লাশ ঢাকায় ফেরায় কথা। আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার নামাজে জানাজা ও দাফনের সময় নির্ধারণ করা হয়নি।
প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বৃহস্পতিবার রাতে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। এর আগে জ্বর, অ্যালার্জিসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২ জুন সাহারা খাতুন গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবস্থার অবনতি হলে গত ১৯ জুন সকালে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। এরপর অবস্থার উন্নতি হলে গত ২২ জুন দুপুরে তাকে আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে (হাইডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়। পরে ২৬ জুন সকালে অবস্থার অবনতি হলে আবার তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে সাহারা খাতুন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আজীবন কাজ করে গেছেন। দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন।
সাহারা খাতুনের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন : বাংলাদেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য। আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন সফল রাজনৈতিক সংগঠকের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন। ছিলেন এক বর্ণাঢ্য ও সাদাসিধে নিরহঙ্কার জীবনের অধিকারী। অবিবাহিত ছিলেন তিনি।
১৯৪৩ সালের ১ মার্চ ঢাকার কুর্মিটোলা গ্রামে বাবার বাড়িতে তার জন্ম। সাহারা খাতুনের বাবার নাম মরহুম আবদুল আজিজ ও মায়ের নাম তুরজান নেছা। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস হাইস্কুল থেকে ১৯৬০ সালে ইস্ট-পাকিস্তান বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। সিটি নাইট কলেজে থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। তারপর জগন্নাথ কলেজে বিএ কোর্সে ভর্তি হন। পরে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি মাধ্যমে দ্বিতীয় শ্রেণীতে বিএ (ডিগ্রি) অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হলেও তিনি কোর্স শেষ করেননি। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৬৭ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন সাহারা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের ছাত্রদের মধ্যে একটি নির্বাচনে তিনি ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। সেটি ছিল তার জীবনের প্রথম নির্বাচন। ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগের মহিলা শাখা যখন গঠিত হয়, তাতে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দিনেও তিনি সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ১৯৮১ সাল থেকে আইন পেশা শুরু করেন সাহারা খাতুন। প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। তিনি ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন ঢাকা-৫ আসনে প্রথমবার অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে হেরে যান। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি হন। ২০০৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে দেয়া হয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ঢাকা-১৮ আসন থেকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনি জয়ী হন।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি প্রথমে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে মহিলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক এবং একইসাথে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-আইন সম্পাদক, পরে আইন সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন।
এ ছাড়া স্বাধীনতার পরেই সাহারা খাতুন মহিলা সমিতির সদস্য মনোনীত হন। তখন ড. নীলিমা ইব্রাহিম সভানেত্রী ও আইভি রহমান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, গাজীপুর আইনজীবী সমিতি ও ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনেরও আজীবন সদস্য। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিরও সদস্য। তিনি আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব ওমেন্সের ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও স্পিকার, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য এবং জাতীয় আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের শোক
বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের সভাপতি সেলিনা খালেক, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুল আলম, কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্যবৃন্দ এবং অন্তর্ভুক্ত সংগঠনের সব নেতা শোক প্রকাশ করে তার রূহের মাহফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে। প্রসঙ্গত, মরহুম সাহারা খাতুন দীর্ঘ দিন বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের কাউন্সিলর ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement