১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গণপরিবহনে যাত্রীসঙ্কট

এক-চতুর্থাংশ যাত্রী নেই; ৭০ শতাংশ ট্রিপ বন্ধ; ভোগান্তি যাত্রীদেরও
-

যাত্রীস্বল্পতায় দুরবস্থা বিরাজ করছে দেশের পরিবহন সেক্টরে। এক দিকে যাত্রী কম থাকায় পরিবহন মালিকদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করছেন মালিকরা। অন্য দিকে শ্রমিকরাও সারা দিনের খাটুনি শেষে ঘরে ফিরছেন খালি হাতে। এ দিকে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও মানসম্মত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, একে তো করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুশঙ্কা; তার ওপর ভাড়া বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। আবার যাত্রী কম থাকায় বাস পরিপূর্ণ করতে কোনো কোনো পরিবহন সঠিক সময়ে চলাচল করছে না। সকাল ১০টার বাস ছাড়া হচ্ছে বেলা সাড়ে ১২টায়। তাই বেশির ভাগ যাত্রীই হয়ে পড়ছেন গণপরিবহনবিমুখ। সব মিলে তীব্র সঙ্কটের মধ্যে যাচ্ছে পরিবহন খাত।
করোনা মহামারীর লকডাউনে দীর্ঘদিন বসে থাকার পর লাভের মুখ দেখার আশায় গত মে মাসের শেষ তারিখে সরকারি নির্দেশনা মেনে শুরু হয় যান চলাচল। প্রথম দিকে যাত্রীদের ভালো সাড়া পেলেও কিছু দিন পর থেকেই কমতে থাকে যাত্রী। লাভ দূরে থাক, প্রতিদিনের খরচই উঠছে না। উল্টো লোকসান পোষাতে ফুরাচ্ছে মালিকদের গাঁটের টাকা। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবিÑ যাত্রীস্বল্পতার কারণে বর্তমানে প্রায় ৭০ শতাংশ দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে না।
তারা বলছেন, এমনিতেই সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৫০ শতাংশ আসন ফাঁকা রাখা হয়। কিন্তু বর্তমানে চলাচলকারী বাসে বাকি অর্ধেকেরও প্রায় অর্ধেক (৫০ শতাংশ) আসন ফাঁকা যাওয়ায় চরম যাত্রীসঙ্কট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে লোকসান গুনে ট্রেন চলাচল অব্যাহত রাখা গেলেও দূরপাল্লার বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাজধানীতে চলাচলকারী সিটি সার্ভিসের বাসগুলো কিছু যাত্রী পেলেও দূরপাল্লার রুটগুলোয় চরম যাত্রীসঙ্কট চলছে। যে কারণে প্রায় ৭০ শতাংশ বাসসার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-বরিশালসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করা পরিবহন কোম্পানির কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
দেশের অন্যতম বৃহৎ পরিবহন কোম্পানি হানিফ এন্টারপ্রাইজের জেনারেল ম্যানেজার ওয়াহিদুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, করোনার কারণে দেয়া লকডাউনে দীর্ঘদিন বাস বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই সময়ে প্রতিটি মালিককে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। বেকার হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছিলেন পরিবহন শ্রমিকরা। সরকারের নির্দেশনায় বাস চলাচল শুরু হলেও বর্তমানে দেখা দিয়েছে যাত্রীসঙ্কট। যার কারণে পরিবহনগুলো তাদের চার ভাগের তিন ভাগ ট্রিপই বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, হানিফ পরিবহন দেশের বিভিন্ন রুটে যে ট্রিপ দিতো তার চার ভাগের তিন ভাগই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মাত্র এক ভাগ ট্রিপ দেয়া হলেও তাতে বেশির ভাগ বাসই ফাঁকা যাচ্ছে। একটি ৪০ সিটের বাসে যাত্রী নেয়ার কথা ২০ জন। সেখানে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১০-১২ জন। কোনো কোনো বাসে পাঁচ-ছয়জন যাত্রীও হয়ে থাকে। শ্যামলী, সোহাগ, গ্রিন লাইন, ঈগল পরিবহন ও এনা পরিবহনসহ দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর একই অবস্থা বলে জানা গেছে। ঢাকা-খুলনা-গোপালগঞ্জ-পিরোজপুর- বাগেরহাট রুটে চলাচলরত টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস কোম্পানির হাসিবুর রহমান জানান, স্বাভাবিক সময়ে বিভিন্ন রুটে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস একদিনে প্রায় ৭০টি ট্রিপ দিতে পারত। কিন্তু বর্তমানে যাত্রী কম থাকায় মাত্র ২৯টি ট্রিপ চালু রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই অবস্থা এই রুটের অন্য পরিবহন কমফোর্ট লাইন, ইমাদ পরিবহন ও সেবা গ্রিন লাইনের।
এ দিকে যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, যাত্রীস্বল্পতার কারণ দেখিয়ে পরিবহনগুলো যাচ্ছেতাই সেবা দিচ্ছে। সায়েদাবাদে আল মামুন নামে এক যাত্রী অভিযোগ করেন, তিনি পিরোজপুর যাবেন বলে দুপুর ১২টার বাসে টিকিট করেছিলেন। সেই বাস বেলা আড়াইটার সময় ছাড়ে। কাউন্টার থেকে তাকে বলা হয়, যাত্রী কম থাকায় তারা বাস ছাড়ছে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সাংবাকিদের বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে বাস চলাচল করছে। কিন্তু যাত্রীসঙ্কটের কারণে দূরপাল্লার মাত্র ৩০ শতাংশ বাস চালু থাকলেও বাকি ৭০ শতাংশ বন্ধ রয়েছে। চরম লোকসানের মুখে মালিক পক্ষ। বেশির ভাগ রুটে আগে যেখানে ১৫ মিনিট পরপর এক-একটি বাস ছাড়া হতো এখন সেখানে দুই ঘণ্টা পরও একটি বাস ছেড়েও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, মূলত দেশে করোনা আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ আতঙ্কিত। ফলে গণপরিবহনে তীব্র যাত্রীস্বল্পতা দেখা দিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement