২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কোরবানির পশুরহাটে বড় চ্যালেঞ্জ স্বাস্থ্যবিধি মানা

-

করোনার মধ্যে রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ঈদের দুই দিন আগে হাটে মানুষের সমাগম নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এ কারণে শহরের তিনটি হাট ইতোমধ্যে বাতিল করেছে উত্তর সিটি করপোরেশন। দক্ষিণ সিটি কোনো হাট বাতিল না করলেও স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়িভাবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারো ঢাকায় কোরবানির পশুর হাট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে দক্ষিণে ১৫টি হাট বসবে। উত্তরে গাবতলীর স্থায়ী হাটসহ মোট ১২টি হাট বসানোর উদ্যোগ নিলেও পরে ঢাকার মধ্যে থাকা তিনটি হাট বাতিল করেছে ডিএনসিসি। এ হাটগুলো হলোÑ উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের অংশ এবং ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের ফাঁকা জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ এবং মিরপুর সেকশন-৬ ওয়ার্ড-৬ এর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান নয়া দিগন্তকে বলেন, কোরবানির পশুরহাট এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা করা হবে বলা হলেও এটা চ্যালেঞ্জিং হবে। ক্রেতা-বিক্রেতারা এটা কতটা মানতে পারবেন তা দেখার বিষয়। কোরবানি যেহেতু ওয়াজিব একটি বিষয় সেজন্য বাদ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই, তবে হাটগুলো যাতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় না বসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া ক্রেতারা কিভাবে হাটে আসবে সেটাও ঠিক করে দেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে টোকেন সিস্টেম করা যেতে পারে। ক্রেতারা আগের মতো যেন দলবেঁধে না এসে একজন-দু’জন করে আসেন সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে।
এ ব্যাপারে ডিএনসিসি মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে আমরা এ বছর ঢাকা শহরে ভেতরের বড় বড় কয়েকটি হাট শহরের প্রান্তসীমায় নিয়ে গেছি। এতে সিটি করপোরেশনের স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু তারপরও জনগণের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থদের পশুর হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা ছাড়া পশুর হাটের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত কঠিন হবে। শিশু ও বয়স্করা যারা গত বছরে পছন্দের পশুটি কিনতে বিভিন্ন হাটে গরু দেখতে যেতেন, আমি অনুরোধ করব এ বছর আপনারা এভাবে গরুর হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। জনগণের জীবন রক্ষার্থে নাগরিকদের সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি ও সিটি করপোরেশনের সব নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান আতিকুল ইসলাম। তিনি হাটের ইজারাদারদেরও নিয়মের মধ্যে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অবশ্যই আমাদের নির্দেশনা মতো নিয়ম মেনে হাট পরিচালনা করতে হবে, তা না হলে তাদের যে সিকিউরিটি মানি থাকবে সেটি বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী দূরত্ব নিশ্চিত, পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার ব্যবস্থা এবং সচেতনতামূলক মাইকিং থাকবে। এসব হাট আমাদের কাউন্সিলর ও ম্যাজিস্ট্রেটরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখবেন। মেয়র বলেন, কেবল সচেতনতাই পারে আমাদের, আমাদের পরিবারকে, এই শহরকে এবং এই দেশকে মহামারী থেকে বাঁচাতে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবার মোট ১৭টি কোরবানির পশুর হাটের ইজারা দিচ্ছে। এর কয়েকটি শহরের মধ্যে এবং আবাসিক এলাকাতেও রয়েছে। তারা এগুলো বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র।
বিদ্যমান স্বাস্থ্য বিধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোরবানির পশুর হাট পরিচালনার জন্য আলাদা স্বাস্থ্যবিধি তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, কোরবানির পশুর হাটের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিটি হাটে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। তিনি বয়স্কদের হাটে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে ষাটোর্ধ্ব যারা আছেন তারা করোনাভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হন। তাই আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আমাদের ষাটোর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিরা কোরবানির পশুর হাটে যাবেন না। ডিএসসিসি মেয়র বলেন, মুসলমানদের জন্য ঈদুল আজহা একটি বড় উৎসব। কিন্তু এবারের ঈদুল আজহা যেহেতু করোনাভাইরাস মহামারীকালীন, তাই উৎসব উদযাপনের পাশাপাশি যাতে করে করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি না ঘটে, সেজন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে, আন্তরিকভাবে নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি এ সময় সঠিকভাবে পশুর হাট পরিচালনার জন্য সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করে বলেন, করোনা মহামারীকে কোনোভাবেই হালকা করে নেয়ার সুযোগ নেই। যারা কোরবানির পশুর হাটে যাবেন তারা যেন মাস্ক, হ্যান্ড-গ্লাভস পরে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পশুর হাটে যান সেই অনুরোধ করছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement