২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ফি প্রত্যাহারের আহ্বান টিআইবির

-

দেশে যখন কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, ঠিক তখনই শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ফি আরোপ করাকে বৈষম্যমূলক, অমানবিক, দুরভিসন্ধিজনক ও আত্মঘাতী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি অবিলম্বে আরোপিত ফি প্রত্যাহারের পাশাপাশি কার্যকরভাবে মহামারী নিয়ন্ত্রণে কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষা করার সক্ষমতা, পরিধি ও সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে।
গতকাল এক বিবৃতিতে সংস্থাটির পক্ষে নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এই দাবি জানান। তিনি বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর পরীক্ষা অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর সামর্থ্যরে বাইরে চলে গেছে। পরীক্ষার সংখ্যা দৃশ্যমানভাবে কমে গেছে। সেই সাথে কমেছে শনাক্তের সংখ্যাও। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি যেমন বেড়েছে, মহামারী নিয়ন্ত্রণে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থার প্রতিফলন না ঘটার আশঙ্কাও জোরদার হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী বলেন, দেশে যখন পরীক্ষার সাথে পাল্লা দিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তখন হঠাৎ করেই গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ফি আরোপের সিদ্ধান্ত জানায়। সঙ্কটকালীন সময়ে এই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তে সরকার জনগণকে পরীক্ষা করতেই অনুৎসাহিত করছে কিনা এমন প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এই পদক্ষেপ বৈষম্যমূলক ও অমানবিক। যারা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তাদের জন্য আরোপিত ফি যৎসামান্য মনে হতেই পারে। কিন্তু যারা এক বেলা নিয়মিত খাবারেরই সংস্থান করতে পারেন না, তাদের জন্য এই দুশো টাকাও বিশাল এক বোঝা। মূলত দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষকে পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত করতেই এ সিদ্ধান্ত কিনা তা ভাবতে হবে। এমন বৈষম্যমূলক ও অমানবিক সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য।
ড. জামান বলেন, মহামারীকালে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা বলে কিছু নেই। যারা নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের তাগিদে পরীক্ষা করাতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য অবমাননাকর ও অবান্তর যুুক্তি হিসেবে সরকার ‘বিনা প্রয়োজনে ও বারবার’ পরীক্ষার চাহিদার অপবাদ দিচ্ছে। তাহলে কি সরকার চায়, যারা পরীক্ষা করবে তারা সবাই আক্রান্ত হোক! অথচ দেশে তথা বিশ^ব্যাপী কোভিড-১৯ আক্রান্তের বড় একটা অংশ উপসর্গবিহীন হওয়ায় আরো অনেক বেশি সংখ্যক পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকৃত রোগীকে দ্রুত বিচ্ছিন্নকরণে বিশেষজ্ঞরা জোর তাগিদ দিচ্ছেন। টিআইবি মনে করে, ফি আরোপের এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী এবং মহামারী মোকাবেলায় সরকারের স্বদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, এই মহামারী মোকাবেলায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো ফলপ্রসূ হওয়ার পূর্বশর্ত সেগুলো যেন নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্তভিত্তিক হয়। অথচ শুরু থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে নানা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হয়েছে। পৃথিবীর যে কয়েকটা দেশে সবচেয়ে কম পরীক্ষা করা হচ্ছে, দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশ তার অন্যতম। তার ওপর ফি আরোপ করে পরীক্ষার সংখ্যাই কমিয়ে দেয়া হলো, যাতে পরীক্ষার আওতার বাইরে চলে যাচ্ছেন দেশের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী। কোভিড-১৯ সঙ্কট মোকাবেলা কার্যক্রমে তথ্যপ্রবাহের নিয়ন্ত্রণের উদ্দ্যেশেই এ ফি আরোপ করা হয়েছে কি না এই প্রশ্ন ওঠাও অস্বাভাবিক নয়। যে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা কী, সেটা কোনোভাবেই জানা সম্ভব নয়। আর এ তথ্যের ভিত্তিতে মহামারী মোকাবেলায় সরকার যে পদক্ষেপ নিবে, নিশ্চিতভাবেই তা বাস্তবতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। তথ্যের প্রবাহ ও যথার্থতা নিশ্চিত করতে পরীক্ষার সংখ্যা, আওতা ও পরিধি বাড়ানোর বিকল্প নেই। এর বিপরীত হলে লকডাউন, বিচ্ছিন্নকরণ, চিকিৎসা প্রস্তুতি গ্রহণ, আর্থ-সামাজিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ইত্যাদি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি হবে, সার্বিকভাবে সঙ্কটের মেয়াদ প্রলম্বিত হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement