২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞায় অর্ধেক জেলে খাদ্যসঙ্কটে

কোস্টের গবেষণা
-

বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণে চলমান ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ জেলে। আয় না থাকায় এবং সরকারি সহযোগিতা প্রাপ্তদের তালিকায় নাম না থাকায় উপকূলের প্রায় অর্ধেক জেলে পরিবার তিনবেলা ঠিকমতো খাবার সংগ্রহ করতে পারছে না। বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। উপকূলীয় অঞ্চল কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার ২৮৪টি জেলে পরিবার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে কোস্ট ট্রাস্ট। গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্বাভাবিক অবস্থায় ৪২.৪% জেলে পরিবারেরই মাসিক গড় আয় ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা চলাকালে একেবারেই কোনো আয় নেই ৬০.৮% পরিবারের। এর ফলে আগে যেখানে তিন বেলা খেতেন ৯৫.৮% পরিবার, সেখানে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে তিন বেলা খেতে পারছেন ৫১% পরিবার।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলে পরিবারগুলোর সহযোগিতা করতে সরকার ৪৩ কেজি করে চাল দিচ্ছে। কিন্তু ৬৫.৮% জেলে পরিবার চাল পেলেও সরকারি এই সহায়তা এখনো পাননি ৩৪.২% পরিবার। যারা পেয়েছেন তাদের অর্ধেক আবার সেটা পেয়েছেন নিষেধাজ্ঞা শুরুর প্রায় এক মাস পরে। অন্য দিকে ৪০% জেলের অভিযোগ, সব শর্ত পূরণ করলেও তাদের নাম এই সরকারি সাহায্যপ্রাপ্তদের তালিকায় উঠেনি, ফলে তারা কিছুই পাননি।
সরকারি সহায়তা হিসেবে চালপ্রাপ্তদের ৬৭.৫% বলেছেন, এই চাল তাদের সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়, কারণ সংসারের অন্যান্য খরচের জন্য নগদ কোনো সহায়তা নেই। ৯৬.১% জেলেই এ সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় আর কোনো ধরনের সহায়তা পাননি। এর ফলে সংসারের প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে সুদের ওপর ধার করেছেন ৭৯.৯% জেলে। আগাম শ্রম বিক্রি করেছেন ৪২.১ শতাংশ, মহাজনের কাছে চড়া সুদে ঋণ করেছেন ৪৫.৭ শতাংশ।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলে পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতাও বেড়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে গবেষণাটিতে। ৫১.৮% পরিবারে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবং ৭২.৬% সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বার্ষিক জিডিপিতে মৎস্যখাতের অবদান ৩.৫৭ শতাংশ। শুধু ইলিশ একক মাছ হিসেবে দেশের মৎস্য চাহিদার ১২ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে। গত ১০ বছরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৫৮.৩৫ শতাংশ। সারা দেশের মানুষের মৎস্য চাহিদা পূরণ করলেও জেলেরা বরাবরই বঞ্চিত। মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন সময়গুলোতে তাদের বেশির ভাগই মানবেতর জীবনযাপন করে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে শুধু চাল সাহায্য যথেষ্ট নয় কারণ সংসারের অন্যান্য খরচের জন্য নগদ সহায়তা প্রয়োজন। বিজ্ঞপ্তি।

 


আরো সংবাদ



premium cement