২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগে কমিটি গঠন

-

এখন থেকে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদে কারা থাকবেন তা নির্ধারণ করার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ে কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। চার সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। বলা হয়েছে, আর্থিক খাতে জ্ঞাপন সম্পন্ন ব্যক্তিরাই এখন থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক পদে নিয়োগ পাবেন। এই কমিটি সম্ভাব্য প্রার্থীদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও সততা যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি করবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে আমলানির্ভর এই কমিটি সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নির্বাচনে কতখানি স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পারবেন তা নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
সূত্র জানায়, এই কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব/সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব/সচিব এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিব। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিব।
জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: আসাদুল ইসলামকে একটি নোট দিয়ে যান। এতে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চেয়ারম্যান করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের নির্দেশনা দেন। এই নোটের ওপর ভিত্তি করেই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেছেন, অর্থমন্ত্রী নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন থেকে এই কমিটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখবেন। এ জন্য তাদের একটি কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দেয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই কার্যপরিধি ঠিক করা হয়নি। অর্থমন্ত্রী দেশে ফেরার পর কমিটির কাজের পরিধির বিষয়ে তার পরামর্শ নিয়ে দ্রুত প্রণয়ন করা হবে।
কমিটির গঠনের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে এতদিন বিধি অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা ছিল না। ফলে দেখা যেত, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য নিয়োগ দেয়া হতো। এখানে যোগ্যতার চেয়ে দলীয় পরিচয়ই মুখ্য যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আর্থিক খাতের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা যেখানে পর্ষদ সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কথা ছিল সেখানে ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই এমন ব্যক্তিরাও পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে গেছেন। আর তারা পরিচালনা পর্ষদে ঢুকেই এই পদ ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী গ্রুপকে অনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই প্রতিফলন দেখা গেছে, সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে। গেল কয়েক বছর আগে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদে বেশ কয়েকজন সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়। তারা ব্যাংকের স্বার্থ না দেখে সম্পূর্ণ নিজেদের স্বার্থ দেখেছেন। ফলে এই দুই ব্যাংকের সৃষ্টি হয়েছেন ‘হলমার্ক কেলেঙ্কারি ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি।
বেসিক ব্যাংকের বিশাল ঋণ কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান নিয়োগ পেয়েছিলেন তার রাজনৈতিক পরিচয়ে। তিনি নিজের প্রভাব বিস্তার করে ব্যাংকটি থেকে বিপুল অঙ্কের টাকার কেলেঙ্কারির সাথে জড়িয়ে পড়েন। একই অবস্থা জনতা, অগ্রণী ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য ব্যাংকগুলোর। আর এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এই সমালোচনা রোধ করার জন্য এখন এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদ শূন্য হলে বিভিন্ন ব্যক্তি এই পদে যাওয়ার জন্য আবেদন করতেন। অনেকে আবার আবেদন করার আগে বড় বড় জায়গায় থেকে তদবির করতেন। যারা আবেদন করতেন সেগুলো যাচাই-বাছাই করে অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হতো। অর্থমন্ত্রী অনুমোদন দিলেই যে কেউ পরিচালক হতে পারতেন। তবে কোনো কোনো সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এ বিষয়ে সুপারিশ করা হতো।

 


আরো সংবাদ



premium cement