২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ওয়ারীর রেড জোনে লকডাউনের প্রস্তুতি

রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় লকডাউনের প্রস্তুতি হিসেবে বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করা হচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

করোনাভাইরাস বিস্তারের ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত পুরান ঢাকার ওয়ারীর বাসিন্দারা টানা ২১ দিন ‘ঘরবন্দী’ জীবন কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আজ শনিবার ভোর ৬টা থেকে সেখানে শুরু হচ্ছে ‘লকডাউন’। এই সময়ে সেখানে স্বাভাবিক জীবনযাপনে থাকবে কড়াকড়ি, যা চলবে ২৫ জুলাই পর্যন্ত।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের টিপু সুলতান রোড, জাহাঙ্গীর রোড, ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন), আউটার রোড এবং ইনার রোড হিসেবে লারমিনি রোড, হরে রোড, ওয়ার রোড, র্যাংকিন রোড এবং নওয়াব রোড এই রেড জোনের আওতায় পড়বে। বিডি নিউজ।
শুক্রবার এসব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের মোড়ে মোড়ে বাঁশ দিয়ে বানানো হচ্ছে ব্যারিকেড। মোড়ে মোড়ে টানানো হয়েছে ‘লকডাউন’ লেখা ব্যানার। অবরুদ্ধ লাল অঞ্চলে ২১ দিন থাকবে সাধারণ ছুটি। এলাকার সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-কারখানা বন্ধ থাকবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা এ এলাকায় বসবাস করেন, তারাও থাকবেন ছুটির আওতায়।
দোকানপাট, বিপণি বিতান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখতে হবে, খোলা থাকবে শুধু ওষুধের দোকান।পুলিশ জানিয়েছে, লকডাউন শুরু হলে রেড জোনে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হওয়া মানা। এসব এলাকার ভেতরে সব ধরনের চলাচল বন্ধ, প্রবেশ বা বের হওয়ার সুযোগ থাকবে নিয়ন্ত্রিত।
২১ দিনের লকডাউনের জন্য প্রস্তুতি নিতে র্যাংকিন স্ট্রিটের একটি সুপার শপে বেলা সাড়ে ১১টায় কেনাকাটার ভিড় দেখা যায়।
লারমিনি স্ট্রিটের একটি অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা কলেজশিক্ষক কানিজ ফাতেমা বলেন, কালকে থেকে লকডাউন শুরু, সবকিছু বন্ধ থাকবে। চাল, ডাল, চিনি, লবণ, আলু, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রাখতে হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে লকডাউন চলে। এরপর বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এখন এলাকাভিত্তিক লকডাউন হচ্ছে। এর আগে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারকে পরীক্ষামূলকভাবে রেড জোন ঘোষণা করে ২১ দিন লকডাউন চলে। শনিবার থেকে তা শুরু হচ্ছে ওয়ারীতে।
টিপু সুলতান রোডের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা নাবিল আহমেদ বলেন, ওই সময় (মার্চ-এপ্রিল) তো আসলে যে রকম লকডাউন হয়েছে, সেটি নাকি এবার হবে না। সব কিছু নাকি বন্ধ থাকবে। রাস্তায় নাকি হাঁটাচলাও করা যাবে না।
কমিশনারের লোকজন মাইকিং করছেন বারবার। বিষয়টা তো সিরিয়াস মনে হচ্ছে। ঘরের ভেতরে ২১ দিন পরিবার নিয়ে কাটাতে হবে।
বলধা গার্ডেনের কাছে রিকশায় করে মাইকিংয়ে বলা হচ্ছিলÑ ‘একটি জরুরি ঘোষণা, আগামীকাল (আজ শনিবার) সকাল ৬টা থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীর ওয়ারী এলাকা ২১ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হলো। লকডাউন চলাকালে সমস্ত কার্যকলাপ বন্ধ থাকিবে। রেড জোন চিহ্নিত এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। সকলকে ঘরে থাকার অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
‘লকডাউন’ বাস্তবায়নে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি থাকবে সেনাবাহিনীর টহল। এ ছাড়া এলাকার ভেতরে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবীরা। বলধা গার্ডেনের কাছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও পুলিশের একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে।
ওয়ারীর রেড জোনে তিন দিক থেকে আসা ২১টি পয়েন্টের রাস্তা-অলিগলির প্রবেশপথ বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ থাকবে। প্রবেশপথ খোলা থাকবে দু’টি। এলাকার বাসিন্দারা কেউ জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে চাইলে উপযুক্ত প্রমাণপত্র লাগবে। ই-কমার্সের মাধ্যমে আসা জরুরি জিনিসপত্র বাসাবাড়িতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
লকডাউন চলাকালে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের একটি বুথ থাকবে এ এলাকায়। সিটি করপোরেশনের মহানগর জেনারেল হাসপাতালে আক্রান্তদের আইসোলেশনের ব্যবস্থাও হয়েছে।
র্যাংকিন স্ট্রিটের বাসিন্দা দেবাশীষ রায় বলেন, গতকাল আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে এসে স্বেচ্ছাসেবকরা বলে গেছেন, জরুরি প্রয়োজনে কিছু লাগলে তারা দিয়ে যাবেন। সে জন্য নির্ধারিত নম্বরে ফোন করে অর্ডার দিতে হবে।
পাকিস্তান আমলে এবং স্বাধীনতার পরেও ঢাকার ওয়ারী এলাকা, বিশেষ করে র্যাংকিন স্ট্রিট ও লারমিনি স্ট্রিট পরিচিত ছিল অভিজাত এলাকা হিসেবে। এখনো এ এলাকার রাস্তাগুলো পুরান ঢাকার অন্য এলাকার চেয়ে চওড়া, বাড়িঘরগুলো ছিমছাম।
বেশ কয়েকটি শপিংমল, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুম এবং ফাস্টফুডের দোকান রয়েছে এ এলাকায়। তবে লকডাউন শুরুর আগের দিন গতকাল সড়ক ও অলিগলিগুলো ছিল অনেকটাই ফাঁকা।
স্থানীয় কাউন্সিলর সারোয়ার হাসান আলো বলেন, সব প্রস্তুতি আমাদের শেষপর্যায়ে। ভোর থেকে ২১ দিনের কার্যক্রম আমরা সুন্দরভাবে শুরু করতে পারব। সিটি মেয়র সব কিছু তদারকি করছেন। টাইম টু টাইম খোঁজখবর নিচ্ছেন।


আরো সংবাদ



premium cement