১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বর্ণবৈষম্যবিরোধী দাঙ্গায় যুক্তরাষ্ট্রের স্থিতিতে হুমকি

-

কোভিড-১৯ এর ধকল কাটতে না কাটতেই যুক্তরাষ্ট্রে দানা বেঁধে উঠেছে নতুন সঙ্কট। সম্প্রতি একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ একজন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে গ্রেফতারের (কৃষ্ণাঙ্গ) পর শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। এ ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হলে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয় প্রতিবাদ। বেশির ভাগ জায়গাতে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণ করলে আন্দোলন রূপ নেয় সহিংসতায়। পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। ভাঙচুর এমনকি দোকানপাট লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। ফলে সহিংসতা মোকাবেলায় ওয়াশিংটন ডিসিসহ ১৫টি রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ডের পাঁচ হাজার সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্কসহ বিভিন্ন জায়গায় জারি করা হয় সান্ধ্য আইন। কিন্তু তাতেও শান্ত করা যায়নি সাধারণ মানুষকে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষ সান্ধ্য আইন ভেঙে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। এ ঘটনায় অন্তত ১৩ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। যাদের প্রায় সবাই আফ্রিকান-আমেরিকান। যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ ও অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ রয়েছে অধিকার আদায়ের জন্য কৃষ্ণাঙ্গরা প্রতিবাদ করলে পুলিশি নির্যাতনসহ নানাভাবে তারা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন।
উল্লেখ্য, মেনিসোটা অঙ্গরাজ্যে একটি রেস্টুরেন্টের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন ৪৬ বছর বয়স্ক জর্জ ফ্লয়েড। গত ২৫ মে সন্ধ্যায় সন্দেহভাজন একটি প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে ফ্লয়েডকে । একজন প্রত্যক্ষদর্শীর তোলা ১০ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ফ্লয়েডকে গ্রেফতার করে পুলিশ তার ঘাড়, গলা দুই পা ও হাঁটু দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে রেখে নির্যাতন চালায় ।
তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না বলার পরও পুলিশ অফিসারের কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি। এ অবস্থায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান জর্জ ফ্লয়েড। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার ডেরেক চাওভিনের বিরুদ্ধে তৃতীয় পর্যায়ের হত্যা বা অনিচ্ছাকৃত হত্যার হালকা অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় অপর তিন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ফ্লয়েডের হৃদরোগ ও মাদক গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফ্লয়েডের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পুলিশ গলা ও ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে চাপা না দিলে সে মারা যেতো না। যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ নতুন নয়। এক গবেষণায় জানা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ ছয় বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাত হাজার ৬৬৬ জন কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু হয়েছে কেবল পুলিশের হাতে। অভিযোগ রয়েছে, আফ্রিকান-আমেরিকানরা সব সময় পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। আফ্রিকান- আমেরিকানরা সংখ্যায় মার্কিন জনসংখ্যার কেবল ১৩ শতাংশ হওয়া সত্ত্বেও পুলিশের হাতে তাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শ্বেতাঙ্গদের চেয়েও আড়াই গুণ বেশি। টেক্সাস, ফ্লোরিড়া ও ক্যালিফোর্নিয়ায় পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদী বৈষম্যের ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন বৈষম্যবিরোধী এ আন্দোলন কৃষ্ণাঙ্গদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য আন্দোলনকারীদের আরো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। কারণ বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গরা হোয়াইট হাউজে অবস্থান করে কলকাঠি নাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ ইতিহাসে অতীতে বর্ণবাদকেন্দ্রিক সহিংসতার নজির থাকলেও বহু ধর্ম, গোত্র ও বর্ণের মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে সম-অধিকারের ভিত্তিতে বসবাস করে আসছেন। বিরাজমান ছিল শান্তি ও সৌহার্দ্যরে সুবাতাস। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় পর থেকেই তার লাগামহীন কথাবার্তা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ দেশটিতে সাদা-কালোর বৈষম্য প্রকট করে তুলেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ অর্জিত সুনাম ও ঐতিহ্য ম্লান হতে চলছে। উগ্রবর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গরা ট্রাম্পের আশকারায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ২০১৫ সালে চার্লস্টোন শহরে কৃষ্ণাঙ্গদের গির্জায় শ্বেতাঙ্গদের গুলিবর্ষণের মধ্য দিয়ে সহিংসতা শুরু হয় । ওই হামলায় আফ্রিকান বংশোদ্ভূত
৯ জন লোক নিহত হয়েছিলেন। এরপর কিছুদিন আগে শর্লটসউইল টাউনে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশে একইভাবে উগ্র বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গের হামলায় নিহত হন এক নারী। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্টি মনোনীত প্রার্থী জো বাইডেন ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন ও জিমি কার্টার ট্রাম্প প্রশাসনের বৈষম্যমূলক এ দুর্বল নীতি ও পুলিশ কর্তৃক জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছেন ।
তবে উগ্র বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা এ আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ রাখা না গেলে এর ফল হতে পারে হিতে বিপরীত। এতে হতাহতের ঘটনা যেমন বাড়তে পারে তেমনি অর্থনীতিতে নেমে আসতে পারে বড় রকমের বিপর্যয়। বৈশ্বিক এ মহামারীর ফলে সৃষ্ট স্মরণকালের বিপর্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ অবস্থা এমনিতেই নড়বড়ে। তার ওপর আকস্মিক সৃষ্ট এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বর্ণবাদী আন্দোলন ও নাশকতা বহু বছরে গড়ে ওঠা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে বহুলাংশে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ রাখা গেলে সাধারণ মানুষের সমর্থন যেমনি বাড়বে তেমনি এ আন্দোলন লাভ করতে পারে সফলতা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় মা-ছেলে নিহত, আহত বাবা-মেয়ে দিরাইয়ে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম গ্রহণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির বগুড়ায় পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকভর্তি কলা ছিনতাই : গ্রেফতার ৪ ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থী নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ, চুক্তি বাতিল স্নান করতে গিয়ে দূর্গাসাগর দীঘিতে ডুবে একজনের মৃত্যু ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে লালন করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে : শ্রিংলা মানবতার কল্যাণে জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে হবে : জামায়াত আমির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৭ ফিট তামিমকে যেকোনো ফরম্যাটের দলে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক বিকেবি ও রাকাব একীভূতকরণের প্রতিবাদে রাজশাহীতে মানববন্ধন

সকল