২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বেতন-বোনাস দাবি ও ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদ

গাজীপুর ও ভালুকায় পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ অবরোধ

গাজীপুরে বকেয়া বেতনভাতার দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ : নয়া দিগন্ত -

ঈদ-বোনাসসহ দুই মাসের বেতন ও পাওনা পরিশোধ এবং বন্ধ কারখানা চালু করা ও শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার গাজীপুর ও ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-গাজীপুর সড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এতে দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ে গরমে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও পথচারীরা।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের ইন্সপেক্টর শহিদুল ইসলাম ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোগড়া চৌধুরীবাড়ী এলাকাস্থিত ‘মে ফ্যাশন’ পোশাক কারখানাটি উৎপাদন কাজের অর্ডার না থাকায় এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে খোলার কথা বলে গত ১৯ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এরপর কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী শ্রমিকরা কয়েক দিন আগে লকডাউনের কারণে সরকার-ঘোষিত এপ্রিল মাসের শতকরা ৬০ ভাগ বেতনসহ তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে কারখানা ভবনটি দুর্বল এবং উৎপাদন কাজের অর্ডার না থাকাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কারখানাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শ্রমিকদের মোট পাওনাদি পরিশোধের পরিবর্তে প্রতি শ্রমিককে শুধু চার হাজার ২০০ টাকা করে দিয়ে তাদের কাছ থেকে মাফ-মুক্তি চেয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে কারখানাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কয়েক শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কর্তৃপক্ষের ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
এ দিকে শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, কর্তৃপক্ষের পূর্ব ঘোষণানুযায়ী আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শ্রমিকরা মে ফ্যাশন কারখানার সামনে এসে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও মালিকপক্ষের কাউকে না পেয়ে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একপর্যায়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা ঈদুল ফিতরের পাওনা বোনাস, মে মাসের বেতন এবং সরকার ঘোষিত এপ্রিল মাসের শতকরা ৬০ ভাগ বেতনসহ পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানায়। পরে শ্রমিকরা সেখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তার নলজানী এলাকাস্থিত ‘টার্গেট ফাইন ওয়াশ’ পোশাক কারখানার সামনে এসে অবস্থান নিয়ে তাদের দাবি পূরণের জন্য বিক্ষোভ করতে থাকে। কিন্তু কারো কোনো সাড়া না পেয়ে শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারখানার সামনে ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে ওই সড়কের উভয় দিকে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দিলে পুনঃরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধের কারণে প্রচণ্ড গরমের মাঝে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
শিল্প পুলিশের এসআই সুব্রত দেব ও শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকারের মধ্যস্থতায় দুপুরে মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রমিক প্রতিনিধিদের বৈঠক শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কারখানার লোকসান দেখিয়ে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের শুধু এপ্রিল মাসের মূল বেতন টাকা পরিশোধ এবং স্থায়ীভাবে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। কর্তৃপক্ষের এ ঘোষণায় সম্মতি জানিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে। সন্ধ্যায় শ্রমিকদের এপ্রিলে ওই টাকা পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হয়।
এ দিকে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার আমতলী এলাকায় অবস্থিত কটন গ্রুপের শ্রমিকরা ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে শিল্প ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে দাবির বিষয়ে আশ্বস্ত করা হলে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
শ্রমিকরা জানান, কটন গ্রুপে তারা নারী-পুরুষ মিলে তিন হাজার শ্রমিক কর্মরত আছেন। ঈদের দুই দিন আগে তাদের কোনো বেতন না দিয়ে বোনাসের ৪ হাজার টাকার জায়গায় ১৭০০ টাকা দিয়ে বিদায় করা হয়। ঈদের পর ফ্যাক্টরি খোলা হলে তারা কাজে যোগদান করতে মিলগেটে যান। কিন্তু তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। দীর্ঘ সময় গেটের সামনে বসে থেকে বাসায় চলে যেতে হয়। পরে মোবাইলে জানিয়ে দেয়া হয় তাদেরকে আর ফ্যাক্টরিতে যেতে হবে না। লাগলে পরে জানানো হবে। এরই প্রতিবাদে তারা প্রথমে মিলগেটে বিক্ষোভ ও পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। শ্রমিকরা বলেন, তাদেরকে বহিরাগতদের দিয়ে অব্যাহতভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে আন্দোলন না করার জন্য। সরকারি নিয়মে তাদেরকে ছাঁটাই না করে বহিরাগতদের মাধ্যমে হুমকি দিয়ে তাদেরকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্যও কোনো কোনো শ্রমিককে বলা হচ্ছে।
ময়মনসিংহ শিল্প পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান জানান, কটন ফ্যাক্টরিতে কিছু শ্রমিককে কাজে যোগদান করতে না দেয়ায় শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে শিল্প পুলিশ, থানা ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক অবরোধ ছেড়ে মিলগেটে অবস্থান করতে বললে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement