২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৩৮ জনের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা : ২ পাচারকারী রিমান্ডে

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশী হত্যা
-

লিবিয়ায় মানবপাচার এবং সে দেশে ২৬ বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৩৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এবং হত্যার অভিযোগে মামলাটি করা হয়। যার মামলা নম্বর-১(৬)২০।
পল্টন থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, মঙ্গলবার রাতে সিআইডির এসআই রাশেদ ফজল বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে আসামি হিসেবে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরো ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ দিকে লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশীকে হত্যা ও মানবপাচারের ঘটনায় করা ওই মামলায় গতকাল দুই মানবপাচারকারী মাহবুবুর রহমান ও সাহিদুর রহমানের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা ৩৩ ও ৩৪ নং মামলার এজাহারনামীয় আসামি। গতকাল তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় পল্টন থানায় মানবপাচারের ঘটনায় করা মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য তাদের সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মিজানুর রহমান। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানার ওসি মো: শাহিন মিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিবিয়ার ঘটনায় থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সিআইডি, ডিবিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মামলাটি তদন্তে সহায়তা করছে। লিবিয়ার মিজদা শহরে এই হত্যার ঘটনায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত সাদ্দাম হোসেন আকাশের বড় ভাই মোবারক হোসেন বাদি হয়ে সাতজনকে আসামি করে এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
জানা গেছে, গত ২৮ মে লিবিয়া সাহারা মরুভূমি অঞ্চলের মিজদা শহরে ২৬ বাংলাদেশীসহ ৩০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এতে আহত হয় আরো ১১ জন। ওই ২৬ বাংলাদেশীসহ নিহতদের মিজদা শহরের একটি স্থানে টাকার জন্য জিম্মি রেখেছিল মানবপাচারকারী একটি চক্র। এ নিয়ে ওই চক্রটির সাথে ওই বাংলাদেশীসহ লিবিয়া গমনপ্রত্যাশী শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরই একপর্যায়ে মানবপাচারকারী চক্রটি এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
এ খবর পাওয়ার পর থেকেই অভিযানে নামে র্যাব। এরপর গত সোমবার ভোরে রাজধানীর শাহজাদপুর এলাকা থেকে লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশীকে হত্যার ঘটনায় পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা কামাল হোসেন ওরফে হাজী কামালকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। এ সময় তার কাছ থেকে ৩১টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়।
র্যাব জানায়, হাজী কামাল গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ উপায়ে কয়েকটি দেশের বিমানবন্দর ব্যবহার করে ইউরোপে লোক পাঠাত। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বেশ কিছু দালালের মাধ্যমে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে হাজী কামাল।
এ দিকে সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রকিবুল হাসান বলেন, কামাল মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে এই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত আছে বলে স্বীকার করেছে। এই সংঘবদ্ধ চক্রটি বিদেশী চক্রের যোগসাজসে অবৈধভাবে বাংলদেশী নাগরিকদের বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করে আসছে।
র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাজী কামাল এ পর্যন্ত অবৈধভাবে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশীকে লিবিয়ায় পাঠিয়েছেন। লিবিয়া ছাড়াও সে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবৈধ প্রক্রিয়ায় অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এ ছাড়াও কামাল একজন টাইলস কন্ট্রাক্টর। তাই অনেক টাইলস শ্রমিকের সাথে তার জানাশোনা আছে। এ সুযোগে তাদের মিথ্য প্রলোভনে বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রলুব্ধ করে যে, তোমরাতো দেশে বসে ৫০০-৭০০ টাকা আয় করো কিন্তু লিবিয়াতে গেলে তোমরা প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় করতে পারবে। এ ছাড়া লিবিয়াতে টাইলস মিস্ত্রিদের অনেক চাহিদা। লিবিয়াতে যাওয়ার আগে এক লাখ টাকা দিতে হবে বাকি ৪ লাখ টাকা লিবিয়া যাওয়ার পর দিলেই হবে। এভাবেই ফাঁদে ফেলে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাতো হাজী কামাল। এরপর ওই শ্রমিকরা লিবিয়াতে পৌঁছানোর পরে সেখানে অবস্থান করা অন্য পাচারকারী দলের সদস্যরা ভিকটিমদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা দাবি এমনকি শারীরিক নির্যাতন করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement