২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনাভাইরাসে চিকিৎসক ও আইনজীবীসহ ৬ বিশিষ্ট ব্যক্তির ইন্তেকাল

-

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক ও আইনজীবীসহ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি গতকাল ইন্তেকাল করেছেন। এদের মধ্যে আছেন ইউরোলজিস্ট মনজুর রশিদ চলচ্চিত্র প্রযোজক মোজাম্মেল হক সরকার, চট্টগ্রাম বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কবির চৌধুরী প্রমুখ। বিডি নিউজ, বাংলা ট্রিবিউন ও শীর্ষ নিউজ।
করোনায় মারা গেলেন ইউরোলজিস্ট মনজুর রশিদ : করোনায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সাবেক সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা: মনজুর রশিদ চৌধুরী মারা গেছেন। রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ৬১ বছরের মনজুর রশিদ চৌধুরী ১৮ দিন আগে কোভিড পজিটিভ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ঢামেক হাসপাতাল থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালেই রোগী দেখতেন।
আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা: ইহতেশামুল হক বলেন, ‘তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই মর্মাহত। আইসিইউতে থাকা অবস্থায় তার সাথে কয়েকবার কথা হয়েছে।’
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর মহাসচিব ডা: ইহতেশামুল হক চৌধুরী জানান, এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯ চিকিৎসক। আর করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন চারজন। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮০০-এর বেশি চিকিৎসক।
করোনায় প্রবীণ আইনজীবী কবীর চৌধুরীর ইন্তেকাল : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিএনপির নেতা প্রবীণ আইনজীবি অ্যাডভোকেট কবীর চৌধুরী আর নেই। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি ৪ ছেলে, ৪ মেয়ে ও অসংখ্য আত্মীয়স্বজন রেখে যান। দীর্ঘ দিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন। গত ৩০ মে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।
মরহুমের পারিবারিক সূত্র জানায়, ঈদের দিন অসুস্থতা অনুভব করায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর গত ৩০ মে তাকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত সোমবার তার করোনার রিপোর্ট পজেটিভ আসে এবং গতকাল সকাল সোয়া ১১টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কবীর চৌধুরী বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ভাসানী অনুসারী পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি ছিলেন। ১৯৯১ সালে আনোয়ারা সংসদীয় আসন থেকে বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার বাদ আছর আনোয়ারা উপজেলার বটতলী এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাকে দাফন করা হয়।
বিএনপির শোক : অ্যাডভোকেট কবির চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো: নাছির উদ্দীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বেগম রোজী কবির, গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা: শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস, সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান।
আবদুল্লাহ আল নোমানের শোক : প্রবীণ আইনজীবী, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট কবির চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। গতকাল মঙ্গলবার বিবৃতিতে তিনি মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
করোনায় চলচ্চিত্র প্রযোজক মোজাম্মেল হক সরকারের মৃত্যু : করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক মোজাম্মেল হক সরকার। সোমবার রাত ১১টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু।
এ প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি লেখেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির অন্যতম সদস্য হাজী মো: মোজাম্মেল হক সরকার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি মেসার্স ভাওয়াল পিকচার্সের স্বত্বাধিকারী একজন নম্র-ভদ্র ও সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন এবং অনেক সুপার হিট সিনেমার প্রযোজক। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি তার রূহের মাগফিরাত কামনা ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।
এ ছাড়া চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক কাবিরুল ইসলাম রানাসহ বেশ কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোজাম্মেল হক সরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। রানা জানান, মোজাম্মেল হক ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তির আগে বেশ কয়েক দিন গাজীপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
খাদ্য বিভাগের প্রধান নিয়ন্ত্রক উৎপল হাসানের করোনা উপসর্গে মৃত্যু : বিসিএস ১৮তম ব্যাচের খাদ্য ক্যাডারের সদস্য উৎপল হাসান করোনা এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীস্থ আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে তার মৃত্যু হয়। তিনি খাদ্য বিভাগের রেশনিংয়ে প্রধান নিয়ন্ত্রক, ঢাকা পদের দায়িত্বে ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। উৎপলের সহধর্মিণী নাসিমা পারভীন ১৮তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য। তিনি বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব। উৎপল হাসান নিঃসন্তান। গতকাল মঙ্গলবার রায়েরবাজার গোরস্থান চত্বরে তার নামাজে জানাজা এবং দাফন সম্পন্ন হয়।
রাজশাহীতে করোনায় বন কর্মকর্তার মৃত্যু : কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে গতকাল রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একজন বন কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। তার নাম শফিউর রহমান (৫৫)। তিনি কক্সবাজারে বনবিভাগের লিঙ্করোড স্টেশনের কর্মকর্তা ছিলেন। তার পরিবার রাজশাহী নগরের কুমারপাড়া এলাকায় থাকে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস জানান, গত শনিবার শফিউর রহমানকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিনই তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। রোববার তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সোমবার পরীক্ষায় জানা যায়, তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছিলেন।
শফিউর রহমানের ছেলে আবু সালেহ মো: নাসিম বলেন, তারা রাজশাহী শহরের কুমারপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তার বাবা কক্সবাজারে বনবিভাগের লিঙ্করোড স্টেশন কর্মকর্তা ছিলেন। গত ২৭ মে তিনি রাজশাহীতে আসেন। ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে তার বাবার হালকা কাশি ছিল। এক দিন আগে থেকে জ্বর ছিল। এই অবস্থায় তিনি রাজশাহীতে আসেন। তার অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আবু সালেহ জানান, তারা দুই ভাইবোন। তিনি বড়। তিনি রুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। বাবার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার লাশ নওগাঁয় গ্রামের বাড়িতে নেয়া হচ্ছে।
করোনাভাইরাসে আরেক ব্যাংকারের মৃত্যু : ঢাকায় ন্যাশনাল ব্যাংকের দিলকুশা শাখার একজন কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ৪৬ বছর বয়সী আবুল বাশার ওই শাখার হিসাব বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ছিলেন। রাজধানীর হলি ফ্যামেলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে তার মৃত্যু হয় বলে ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এ এস এম বুলবুল জানান।
তিনি বলেন, ঈদের আগের দিন করোনাভাইরাস ধরা পড়ায় আবুল বাশার হলি ফ্যামেলিতে ভর্তি হয়েছিলেন। তখনই দিলকুশা শাখা অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। ওই শাখার গ্রাহকদের পাশের অন্য শাখায় লেনদেন করতে নোটিস টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে দিলকুশা শাখার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। এর আগে ন্যাশনাল ব্যাংকের সীমান্ত স্কয়ার শাখার এক কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ঈদের আগে।
এ ছাড়া সিটি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের একজন এফভিপি, রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের একজন ডিজিএম, সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের একজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মারা গেছেন করোনাভাইরাসে।

 


আরো সংবাদ



premium cement