২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তেজগাঁওয়ে আবারো ট্রাক স্ট্যান্ড কোটি কোটি টাকার ভাগাভাগি

সাবেক মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর আগের অবস্থায় ফিরেছে এলাকাটি
-

সড়ক না ট্রাক স্ট্যান্ড দেখে বোঝার উপায় নেই। দুই পাশে লাইন দেয়া সারি সারি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ রাখা। ভেতর দিয়ে কোনো মতে একটি গাড়ি চলাচলের জায়গাটুকু ফাঁকা আছে। ওই দিয়ে রাস্তার গাড়িগুলো কোনোমতে চলাচল করছে। পথচারীদের হাঁটার কোনো জায়গা নেই। এই হচ্ছে রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে রেলক্রসিং পর্যন্ত এলাকার প্রধান সড়কের চিত্র। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনিসুল হকের উদ্যোগে এই এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর স্থানটি আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। আবারো গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল ট্রাক স্ট্যান্ড। রাস্তাসহ সরকারি এই জায়গায় ট্রাক স্ট্যান্ড বসিয়ে একটি গ্রুপ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ এবং ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা।
তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে রেলক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার ওপর ট্রাক স্ট্যান্ডটি দীর্ঘকালের। তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড হিসেবেই এই এলাকার পরিচিতি। অথচ এখানে স্ট্যান্ড করার কোনো বৈধতা নেই। স্ট্যান্ডটির আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে এখন তেজগাঁও পলিটেকনিক পর্যন্ত পৌঁছেছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক তেজগাঁও সড়কটি ট্রাকের দখলমুক্ত করতে গিয়ে ট্রাক শ্রমিকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। কিন্তু তিনি অনড় থাকায় ৬৭ বছর ধরে বেদখলে থাকা ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়কটি দখলমুক্ত করা হয় মাত্র দু’দিনে। এরপর ২০১৭ সালে সাতরাস্তা থেকে রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন করে সড়ক বিভাজনে লাগানো হয় গাছ। সড়কটি দখলমুক্ত হওয়ায় এর সুফলও পেতে শুরু করে নগরবাসী। তবে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যু হলে কর্তৃপক্ষের শিথিলতার সুযোগ নিয়ে আবারও তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়কগুলোর বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক ও শ্রমিকরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, এখন এই এলাকায় শুধু ট্রাকই নয়, বিভিন্ন কোম্পানির বাসও রাখা হয়। শাহ ফতেহ আলী, একতা, নিরালা, সোনার বাংলা, মহানগর, বিনিময়, নিরালা সুপার পরিবহনসহ দূরপাল্লার বাসগুলো রাখা হয় রাস্তার ওপর। এর সঙ্গে ট্রাক, বিভিন্ন পরিবহন এজেন্সি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাভার্ডভ্যানও রয়েছে। বেশির ভাগ গাড়ির মালিক বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি। এ ছাড়া ব্যক্তিমালিকাধীন ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ রয়েছে। এসব এজেন্সির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ মেসার্স নজরুল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি, মে আই কে এন্টারপ্রাইজ, তিতাস ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি। তেজগাঁও রেলগেট থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান। শ্রমিকরা কয়েকটি ট্রাক মেরামতের কাজও করছেন। কোথাও কোথাও একটি ট্রাক কিংবা কাভার্ডভ্যানের পাশাপাশি আরেকটি গাড়ি রাখায় রাস্তা অনেকটা সরু হয়ে গেছে। যে কারণে পথচারীরা পড়েন চরম ভোগান্তির মধ্যে। এই এলাকায় যেসব প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ি রয়েছে সেসবের বাসিন্দারাও রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক ফেডারেশনের হিসাবে, এই ট্রাক স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজারের মতো গাড়ি স্ট্যান্ডের ভেতরে রাখার ব্যবস্থা আছে। বাকিগুলো এই সড়কসহ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার অন্য সড়কগুলোয় রাখা হয়। প্রায় ১০০ ফুট প্রশস্ত রেলগেট-সাতরাস্তা সড়ক ধরে ফার্মগেট ও কাওরান বাজার এলাকা থেকে তেজগাঁও মহাখালী ও বনানীর দিকে যাওয়া যায়। গুলশান-নিকেতনে যাওয়ার সহজ রাস্তাও এটি। এই রাস্তা ব্যবহার করে তেজগাঁও এলাকার ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মেডিক্যাল কলেজ, জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউটসহ সরকারি- বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠানে লোকজন যাতায়াত করে। এ ছাড়া সড়কটি ফার্মগেট ও তেজগাঁও এলাকার অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান পথ।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ডিএনসিসির মরহুম মেয়র আনিসুল হকের উদ্যোগে দু’দিনের চেষ্টায় সড়কটি ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের দখল থেকে মুক্ত করার পর ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী করে তোলে। সড়ক বিভাজক দিয়ে লাগানো হয় গাছ। ফুটপাথ সংস্কার করে হাঁটার উপযোগী করা হয়। কিন্তু এখন ট্রাক রাখার কারণে ফুটপাথ ঢাকা পড়ে গেছে। এর বেশির ভাগ জায়গা দিয়ে চলাচলের উপায় নেই।
একাধিক সূত্র বলেছে, এই স্ট্যান্ডটি একটি চক্রের কোটি কোটি টাকা উপার্জনের জায়গা। যখন যারা ক্ষমতায় আসে তখনই দখলবাজরা সেই দলের সেজে স্ট্যান্ডটি দখলে রাখে। আনিসুল হক উচ্ছেদ করার সময় এখানে রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটে। তারপরও তৎকালীন মেয়র পিছপা হননি। তার মারা যাওয়ার পর আবারো দখল করে নেয় ওই চাঁদাবাজরা। তারা বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এই টাকার ভাগবাটোয়ারা করে। অভিযোগ রয়েছে, যাদের দেখার দায়িত্ব তারা বরাবরই না দেখে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউই কথা বলতে রাজি হননি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মিজানুরের ইন্তেকাল থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সাথেপ্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লস ২২ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে : নসরুল হামিদ গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

সকল