২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেসরকারি আইসিডি থেকে পণ্য খালাসে গলদঘর্ম ব্যবসায়ীরা

পর্যাপ্ত স্পেস ও যন্ত্রপাতির স্বল্পতা, শনাক্তে সময়ক্ষেপণ
-

করোনা পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে সৃষ্ট ভয়াবহ কনটেইনার ও জাহাজ জট নিরসনে বেসরকারি আইসিডিগুলোতে কনটেইনার স্থানান্তর করা হলেও সেখানকার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সেখানেও কাক্সিক্ষত সেবা মিলছে না এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। রয়েছে সংরক্ষিত কনটেইনার আনস্টাফিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত স্পেস ও যন্ত্রপাতি স্বল্পতার অভিযোগ। তাছাড়া অটোমেটেড কনটেইনার শনাক্তকরণ ব্যবস্থা না থাকায় নিজেদের কনটেইনার খুঁজে পেতেও গলদঘর্ম হতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন আমদানিকারকরা।
চট্টগ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে বেসরকারি আইসিডির (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) সংখ্যা ১৯টি। স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত ৩৮ ধরনের পণ্য এসব আইসিডি থেকে ডেলিভারি দেয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা পরিস্থিতিতে বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার জট তীব্র রূপ নিতে থাকলে নতুন করে আরো ছয় ধরনের পণ্য বেসরকারি আইসিডি থেকে ডেলিভারির অনুমতি দেয় এনবিআর। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় থেকে আমদানিকৃত সব ধরনের পণ্যবাহী কনটেইনার বেসরকারি আইসিডিগুলো থেকে ডেলিভারির উদ্যোগ নেয়া হয়। সর্বশেষ গত ২৩ এপ্রিল নৌ-মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বন্দরে জট নিরসনে সব ধরনের কনটেইনার শর্তসাপেক্ষে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বেসরকারি আইসিডিতে সংরক্ষণ, আনস্টাফিং এবং ডেলিভারির অনুমতি দিয়ে অফিস আদেশ জারি করে এনবিআর। এতে বলা হয়েছে, বেসরকারি আইসিডিতে (অফডক) স্থানান্তরের সময় শতভাগ কনটেইনার আবশ্যিকভাবে স্ক্যানিং করতে হবে এবং স্ক্যানিংয়ের রিপোর্ট সংরক্ষণ করতে হবে। অফডকে স্থানান্তরিত সব বাণিজ্যিক পণ্য চালান আবশ্যিকভাবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ৩০ জুনের পর এই আদেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে বলেও উল্লেখ রয়েছে।
ওই আদেশের পর হতে বেসরকারি অফডকগুলোতে ৩৭ হাজার টিইইউএস-এর অধিক পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দর ইয়ার্ড থেকে স্থানান্তর করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এমনিতেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে যা ব্যয় হয়, অফডকগুলোতে ব্যয় এর দ্বিগুণের কাছাকাছি। তাছাড়া অফডকে ডেডিকেটেড যন্ত্রপাতি স্বল্পতার পাশাপাশি পর্যান্ত স্পেস স্বল্পতারও অভিযোগ আছে আমদানিকারকদের। অন্যদিকে একই বিএলে (বিল অব লেডিং) একজন আমদানিকারকের একাধিক কনটেইনার থাকলে অনেক সময় সবগুলো কনটেইনার একসাথে বেসরকারি আইসিডিতে পৌঁছে না। ফলে আংশিক ডেলিভারি নিতে গিয়ে হয়রানির পাশাপাশি বাড়তি ব্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়। এর বাইরে আমদানিকারকদের চরম ভোগান্তিতে ফেলছে ম্যানুয়ালি কনটেইনার শনাক্তকরণ ব্যবস্থা। ডিপোগুলোতে স্পেস স্বল্পতার কারণে এবং ম্যানুয়ালি কনটেইনার খুঁজে নিতে গিয়ে একদিকে বিপুল সময়ের অপচয় হচ্ছে, তেমনি ডেডিকেটেড যন্ত্রপাতির অভাবে ২০-৩০টি কনটেইনার সরিয়ে কোনো কনটেইনার ডেলিভারি নিতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, যে উদ্দেশ্যে বন্দর থেকে কনটেইনার বেসরকারি ডিপোতে স্থানান্তর করা হয়েছে তা সফল হতে হলে ডিপোগুলোর সক্ষমতা যাচাই জরুরি হয়ে পড়েছে। নইলে ডিপোগুলো পূর্ণ হয়ে থাকলে বন্দরের জট আগের অবস্থানেই থেকে যাবে বলে তারা মন্তব্য করেন। সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স চমক সিন্ডিকেটের স্বত্বাধিকারী এস এম আবু তৈয়ব নয়া দিগন্তকে বলেন, সক্ষমতার অভাবের কারণে ডিপোগুলো দ্রুত আমদানিপণ্য ডেলিভারি দিতে পারছে না। তিনি অভিযোগ করেন, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির অভাবে ২০-২৫টি কনটেইনার ডিঙ্গিয়ে কোনো আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার ডেলিভারি নিতে হলেই পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। সামনের কনটেইনার সরিয়ে ভেতর থেকে কোনো কনটেইনার ডেলিভারি নিতে বিপুল সময়ের অপচয় হচ্ছে। তাছাড়া বন্দরে যেভাবে সহজেই কনটেইনার লোকেট করা যায়, ডিপোগুলোতে কনটেইনার খুঁজে পাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য বলেও তিনি জানান।
বেসরকারি আইসিডিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, এনবিআরের এই সিদ্ধান্ত আসার পর এরই মধ্যে বন্দর থেকে ৩৭ হাজার টিইইউএস নতুন সার্কুলারের কনটেইনার আইসিডিগুলোতে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগে আমরা ৩৮ ধরনের পণ্য ডেলিভারি দিতাম, এখন সব ধরনের পণ্যই ডিপো থেকে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি ডিপোগুলোতে যন্ত্রপাতির স্বল্পতার কথা তিনি মানতে নারাজ, তবে কিছু কিছু ডিপোতে যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইকুইপমেন্টগুলোর মেরামতে বিদেশ থেকে বিভিন্ন পার্টস আনতে হয়, করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন তা সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়েছে। অবশ্য ম্যানুয়ালি কনটেইনার খুঁজে নিতে গিয়ে সময়ের অপচয় এবং ডিপোগুলোতে পর্যাপ্ত স্পেসের অভাবের কথা তিনি স্বীকার করেন। এ ক্ষেত্রে রফতানি কনটেইনারের চাপ প্রায় অর্ধেকে নেমে আসায় তেমন সমস্যা হচ্ছে না বলেও তিনি দাবি করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement