২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যাকে ঘিরে লন্ডন-বার্লিনেও বিক্ষোভ

-

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নিপীড়নে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে ঘিরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে বিশ্বে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে রোববার লন্ডন, বার্লিন এবং টরান্টোর মতো শহরেও বিক্ষোভ করেছে শত শত মানুষ।
জার্মানির বার্লিনেও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেছে শতশত মানুষ। তারা সেøাগান দেয়, জর্জ ফ্লয়েডের জন্য ন্যায়বিচার চাই, আমাদের হত্যা বন্ধ করো ইত্যাদি। বিক্ষোভ হয়েছে কানাডার টরন্টোতেও। সেখানেও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে কয়েক শ’ মানুষ। লন্ডন শহরের কেন্দ্রস্থলে ট্রাফালগার স্কয়ারে ন্যাবিচার এবং শান্তির দাবিতে সেøাগান দিয়ে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
পার্লামেন্ট ভবন পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে গিয়ে শেষ হয় মিছিল। সেখানে তারা ফ্লয়েডের ন্যাবিচারের দাবিতে সেøাগান দেয়। সেন্ট্রাল লন্ডনে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সেøাগান দেয়, ‘নো জাস্টিজ নো পিচ’ (ন্যায়বিচার নাই তো শান্তিও নাই)। বিপুল সংখ্যক জনতা সেøাগান দিতে দিতে হাউজ অব পার্লামেন্টের দিকে যান, তারপর যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সামনে অবস্থান গ্রহণ করে বিক্ষোভ শেষ করেন।
লন্ডনে মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বাইরে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে তিনজনকে করোনাভাইরাস লকডাউন নির্দেশনা ভাঙার কারণে আর দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে পুলিশের ওপর হামলার কারণে।
পাশাপাশি ব্রিটেনেও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। ওদিকে, জার্মানির বার্লিনেও কয়েক শ’ বিক্ষোভকারী যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেছে জর্জ ফ্লয়েডের ন্যায়বিচারের দাবিতে। ‘কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা’ বন্ধের দাবিতেও স্লোগান দেয় তারা।
কানাডার টরান্টো শহরেও চার হাজার বিক্ষোভকারী ফ্লয়েড হত্যা, বর্ণবাদ এবং পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় এক কৃষ্ণাঙ্গ নারীর মৃত্যুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করেছে। শহরের একটি পার্ক থেকে মিছিল করে পুলিশের সদরদফতরের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রে ৪৬ বছর বয়স্ক জর্জ ফ্লয়েডকে ২৫ মে সন্ধ্যায় প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা গাড়ির নিচে হাঁটু দিয়ে ফ্লয়েডের গলা চেপে ধরে। সে বারবার বলতে থাকে, ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না।’ পরবর্তীতে একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে করোনা উপেক্ষা করে প্রতিবাদে সরব হন হাজার হাজার মানুষ। হত্যাকাণ্ডের দু’দিন পর বিক্ষোভকারীরা সহিংস হয়ে ওঠেন শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন লাগিয়ে দেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শনিবার যুক্তরষ্ট্রের ১৬টি রাজ্যের ২৫টি শহরে কারফিউ জারি করা হয়। ইতোমধ্যে ওই চার পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার জন্য মূল অভিযুক্ত ডেরেক শভিনকে সোমবার আদালতে হাজির করা হবে।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। কারফিউ ভঙ্গ করে চলছে সহিংস বিক্ষোভ। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৩০টি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর ঢেউ লেগেছে বিশ্বে। বিভিন্ন দেশের আরো অনেক শহরে আগামী সপ্তাহে মানুষ বর্ণবাদ এবং পুলিশের নৃশংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামার পরিকল্পনা করছে। বিভিন্ন সোসাল মিডিয়া পোস্ট থেকে মিলছে সে আভাসই।
বিক্ষোভের সময় ‘বাঙ্কারে লুকিয়ে ছিলেন ট্রাম্প’ : এমনকি ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউজের সামনে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের সময় আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার রাতে ওয়াশিংটন ডিসির প্রতিবাদকারীরা হোয়াইট হাউজের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিক্রেট সার্ভিস ও যুক্তরাষ্ট্রের পার্ক পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় তারা। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দিকে বোতল ও পাথর ছুড়ে মারে বিক্ষোভকারীরা, দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিও হয়।
এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কিছুক্ষণের জন্য হোয়াইট হাউজের আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে নিয়ে যাওয়া হয় বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক খবরে জানানো হয়েছে। ঘটনাটির বিষয়ে সরাসরি অবগত এমন একজনের উদ্ধৃতি দিয়ে খবরটি জানিয়েছে তারা।
এক ঘণ্টারও কম সময় ট্রাম্প ওই বাঙ্কারে ছিলেন। এরপর তাকে ফের ওপরে নিয়ে আসা হয়। তবে ট্রাম্পের সাথে মেলানিয়া ট্রাম্প ও ছেলে ব্যারন ট্রাম্পকেও আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কি না- তা পরিষ্কার হয়নি। হোয়াইট হাউজের সামনে যথারীতি শনিবার ও রোববারও বিক্ষোভ হয়েছে। তবে এ দুই দিন ট্রাম্প কী করেছেন তা জানা যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement