২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

লিবিয়ায় অবৈধভাবে বাংলাদেশীদের পাচার চক্রের হোতা গ্রেফতার

লিবিয়ায় অপহরণকারীদের হাতে ২৬ বাংলাদেশী হত্যার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আটক হাজী কামাল -

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশীকে হত্যার ঘটনায় পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা কামাল হোসেন ওরফে হাজী কামালকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। গতকাল সোমবার ভোরে রাজধানীর শাহজাদপুর এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৩১টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। হাজী কামাল গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ উপায়ে কয়েকটি দেশের বিমানবন্দর ব্যবহার করে ইউরোপে লোক পাঠাত। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বেশ কিছু দালালের মাধ্যমে এসব কর্মকা- চালিয়ে আসছেন তিনি। এ চক্রটি সাধারণ মানুষকে ইউরোপে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে নৌপথ এবং দুর্গম মরুপথ দিয়ে লিবিয়ায় পাচার করে আসছে। শুধু তাই নয়, সেখানে নিয়ে জিম্মি করে নির্যাতন চালিয়ে পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। আর মিথ্যা স্বপ্নের প্রলোভনে পরে সর্বস্বান্ত হচ্ছে ভুক্তভোগীরা। বেঘোরে প্রাণও হারাতে হচ্ছে।
গত ২৮ মে রাত ৯টার দিকে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে যে ২৬ বাংলাদেশীকে জিম্মিকারীরা গুলি চালিয়ে হত্যা করে তাদের অনেকেই এই কামালের মাধ্যমে সেখানে গিয়েছিল। এমন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে র্যাব তাকে গ্রেফতার করেছে বলে দাবি করা হয়েছে। র্যাব জানায়, লিবিয়ায় হত্যাকা-ের পর হতাহতদের পরিবারের অভিযোগ, তারা হাজী কামালকে মুক্তিপণের টাকা দিয়েছে। তারপরও কেউ তাদের সন্তানদের ফেরত পাননি। হাজী কামালকে গ্রেফতারের সময় পাওয়া ডায়রিতেও টাকা নেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে র্যাব।
গতকাল দুপুরে র্যাব-৩ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রকিবুল হাসান বলেন, কামাল ইউরোপে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে এই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত আছে বলে স্বীকার করে। সঙ্ঘবদ্ধ চক্রটি বিদেশীদের যোগসাজসে অবৈধভাবে বাংলাদেশী নাগরিকদের বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করে আসছে। এই অবৈধ অভিবাসীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জিম্মি করে প্রতিনিয়ত মুক্তিপণ দাবি এবং শারীরিক নির্যাতন করে আসছে চক্রটি।
র্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, হাজী কামাল পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা। তিনি এ পর্যন্ত অবৈধভাবে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশীকে লিবিয়ায় পাঠিয়েছেন। লিবিয়া ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবৈধ প্রক্রিয়ায় পাঠানোর কাজও করেন। এ ছাড়াও কামাল একজন টাইলস কনট্রাক্টর। অনেক টাইলস শ্রমিকের সাথে তার জানাশোনা আছে। এ সুযোগে তাদের বেশি আয়ের মিথ্য প্রলোভনে বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রলুব্ধ করে। বলা হয়, লিবিয়াতে টাইলস মিস্ত্রিদের অনেক চাহিদা। লিবিয়াতে যাওয়ার আগে এক লাখ টাকা দিতে হবে, বাকি চার লাখ টাকা যাওয়ার পর দিলেই হবে। এভাবেই ফাঁদে ফেলে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাত হাজী কামাল। এরপর শ্রমিকরা লিবিয়াতে পৌঁছানোর পরে সেখানে অবস্থান করা অন্যান্য পাচারকারী দলের সদস্যরা ভিকটিমদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা দাবি এমনকি শারীরিক নির্যাতন করত। সেই নির্যাতনের ভিডিও ভিকটিমদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে বিপুল অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করে। এমনকি সরাসরি মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে সেই নির্যাতনের দৃশ্য ভিকটিমদের পরিবারকে দেখাতো। যাতে স্বজনকে বাঁচাতে পরিবারের সদস্যরা পাচারকারী দলের চাহিদা মতো টাকা দিতে বাধ্য হয়। জানা গেছে, এভাবে অভিবাসী হতে গিয়ে দালাল চক্র ও পাচারকারীদের মাধ্যমে সাগর-মহাসাগর পার হতে গিয়ে কোনো কোনো শ্রমিকের সলিল সমাধি ঘটে। আবার কিছু শ্রমিক বিভিন্ন গহিন জঙ্গলে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবতার জীবনযাপন করে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়।


আরো সংবাদ



premium cement