১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিনাগম ও বিনাবাদাম চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

উপকূলীয় জমিতে ৪০ লাখ টন বেশি শস্য উৎপাদন সম্ভব

ময়মনসিংহের নিজস্ব গবেষণা মাঠে আবাদকৃত বিনাধান-১০ : নয়া দিগন্ত -

ঘূর্ণিদুর্গত উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত জমিতে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কর্তৃক উদ্ভাবিত লবণ সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল বিনা ধান-৮ ও ১০ এবং বিনা গম-১ ও বিনাবাদাম চাষ করলে অতিরিক্ত আরো প্রায় ৪০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আমফান পরবর্তী দূর্যোগ মোকাবেলায় এসব শস্য চাষাবাদ করা হলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। যা দেশের কৃষিক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব দেশের ঝুকির পরিমাণ বাড়ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এর প্রভাবে সাগরের উচ্চতা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ঘুর্ণিঝড়ের আশঙ্কা। বাংলাদেশের পরিবেশ বিষয়ক এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ২০৫০ সাল নাগাদ এক মিটার বাড়তে পারে। যার প্রভাবে প্রায় তিন হাজার মিলিয়ন হেক্টর জমি বাংলাদেশ থেকে স্থায়ীভাবে হারিয়ে যেতে পারে। এতে সার্বিক উৎপাদন শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ কমে যাবে। বিভিন্ন অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা, বরেন্দ্র অঞ্চলে খরা এবং দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ার কারণে দেশে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সিডর, আইলা, নার্গিস, আমফান নামক ঘুর্ণিঝড়গুলো দেশের উপকূলীয় এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। এর ফলে সৃষ্ট খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় অতীতে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করতে হয়েছে। জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সমুদ্রের লোনা পানি কৃষি জমিতে প্রবেশ করায় আবাদি জমি ক্রমেই লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ধান চাষ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাতে দেশের ২৬টি জেলায় প্রায় ১১শ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, পটুয়াখালী ও বরগুনায় ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশী। এছাড়া প্রায় ১৫০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নতুন করে অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ায় লবণাক্ত পানি আবাদী জমিতে প্রবেশ করেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার কৃষি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ছে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহ বিশেষ করে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠী, পিরোজপুর, ফেনী, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় লবণাক্ততার কারণে ধান চাষের পরিবর্তে অধিক হারে চিংড়ি ও লবণ চাষ করা হচ্ছে। উপকূলীয় জেলাসমূহের জমিতে লবণের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বিস্তীর্ণ জমিতে ধান চাষ হয় না বললেই চলে। তিনি জানান, দেশের প্রায় ১০ লাখ হেক্টর জমি এখনো লবণাক্ত। বোরো বা শুষ্ক মৌসুমে ওই জমিতে ৪-২০ ডেসি সিমেন/মিটার মাত্রার লবণ বিদ্যমান থাকে এবং ৮-১২ ডেসি সিমেন/মিটার মাত্রার জমির পরিমান প্রায় ৫০%। এই বিপুল পরিমাণ জমি ধান চাষের আওতায় নিয়ে আসতে পারলে, দেশের খাদ্য ঘাটতি অনেকাংশেই লাঘব হবে বলেও বলে করেন এই বিজ্ঞানী।
বিনার মহাপরিচালক আরো জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য আশার বাণী নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। বিনার বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে কাজে করে ২০১০ ও ২০১২ সালে বোরো মৌসুমের জন্য লবণ সহিষ্ণু দু’টি ধানের জাত ‘বিনাধান-৮’ যা ৮ থেকে ১০ ডেসি সিমেন/মিটার এবং ‘বিনাধান-১০’ যা ১০ থেকে ১২ ডেসি সিমেন/মিটার মাত্রায় লবণ সহনশীল। লবণ সহিষ্ণু ধানের এই দু’টি নতুন জাত উদ্ভাবনের প্রধান গবেষক তিনি নিজে।
ড. মির্জা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, লবণ সহনশীল জাত চাষ করা গেলে শতকরা প্রায় ৪০-৫০ ভাগ লবণাক্ত এলাকা ধান চাষের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব। বিনাধান-১০ অপেক্ষাকৃত বেশি মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এবং ফলনও আশানুরূপ। ৮ থেকে ১২ ডেসি সিমেন/মিটার লবণাক্ত জমিতে হেক্টর প্রতি ফলন সাড়ে পাঁচ টন থেকে সাড়ে ৬ টন এবং স্বাভাবিক জমিতে সাড়ে সাত টন থেকে সাড়ে আট টন পর্যন্ত। বোরো মৌসুমে ১৩০-১৩৫ দিনে এই ধান পাকে। উল্লেখিত জাত দু’টিতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও অনেক কম। বর্তমানে ১০ লাখ হেক্টর জমিতে ৪ থেকে ২০ ডেসি সিমেন/মিটার লবণাক্ততার কারণে বোরো ধান চাষের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। বিনা ও ব্রি উদ্ভাবিত লবণ সহিষ্ণু ধানের জাত চাষাবাদ করলে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ অর্থাৎ তিন লাখ হেক্টর জমি ধান চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে। লবণাক্ত এলাকায় জাতটির গড় ফলন প্রায় সাড়ে পাঁচ টন, যা থেকে হেক্টর প্রতি সাড়ে তিন টন চাল পাওয়া যাবে। এ হিসেবে প্রায় ১০ লাখ টন চাল উৎপাদিত হবে। এ ছাড়াও বর্তমানে মধ্যম লবণ মাত্রায় প্রায় পাঁচ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে। এ সব এলাকায় লবণাক্ততার কারণে স্থানীয় বা উফশী জাত হতে গড়ে প্রায় হেক্টর প্রতি দেড়-দুই টন ধান উৎপাদিত হয়। প্রায়শঃ এসব জমি অনাবাদি বা পতিত থাকে। এতে দেখা যায়, শুধুমাত্র সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা জেলার লবণাক্ত এলাকায় অতিরিক্ত প্রায় ২০ লাখ টন চাল উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার লবণাক্ত এলাকায় জাতটির চাষ করলে সার্বিকভাবে অতিরিক্ত প্রায় ৪০ লাখ টন চাল উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিনার পরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ জানান, বিনাবাদামের পাঁচটি জাত ও বিনাগম-১ জাতটি ৮-১০ ডেসি সিমেন/মিটার লবণ সহনশীন। বিধায় উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় পাঁচ লাখ হেক্টর জমিতে বিনাবাদাম এবং দশ লাখ হেক্টর জমিতে বিনাগম চাষ করা সম্ভব হবে। এতে পাঁচ লাখ টন বাদাম এবং ২০ লাখ টন গম অতিরিক্ত ফলন হবে।
বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম আরো জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে উপকূলীয় এলাকার চাষিদের মাঝে ধানের বীজের অভাব দেখা দিবে। বিনার লবণ সহিষ্ণু বিনাধান-৮ ও ১০ এবং বিনাগম ও বিনাবাদামের উদ্ভাবিত জাত সমূহের পর্যাপ্ত বীজ মজুত রয়েছে। চাষি বা বীজ ব্যবসায়িরা চাইলে আমাদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন। বিএডিসির কাছেও প্রচুর বীজ রয়েছে। চাষিদের কাছেও বীজ রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমেও চাষিরা বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন। তিনি বলেন, ঘুর্ণিঝড় আম্ফান পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে লবণ সহিষ্ণু ধানের জাত হতে পারে উপকূলীয় অঞ্চলের দূর্গত মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আশীর্বাদ। যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদী।


আরো সংবাদ



premium cement
কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’ ইরানের সাথে ‘উঁচু দরের জুয়া খেলছে’ ইসরাইল! অসুস্থ নেতাকর্মীদের পাশে সালাম-মজনু গলাচিপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু মসজিদের ভেতর থেকে খাদেমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার মোরেলগঞ্জে সৎভাইকে কুপিয়ে হত্যা দুবাই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো? এ দেশের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে : ডাঃ শফিকুর রহমান

সকল