স্বেচ্ছাচারের লাগাম টানার আহ্বান টিআইবির

করোনা সঙ্কটে জর্জরিত জাতির এই ক্রান্তিকালে জবাবদিহিতাহীন স্বেচ্ছাচারের লাগাম টেনে ধরার জোরালো দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সম্প্রতি একটি বেসরকারি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে মর্মান্তিক প্রাণহানীর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ত দায়হীনতা ‘গাফিলতি’ এবং বেআইনিভাবে ঋণসুবিধা আদায়ের জন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে গুলি করার মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্তদের এয়ার-অ্যাম্বুলেন্সে দেশ ছাড়ার মতো ঘটনাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ব্যবসায়িক দুর্বৃত্তায়ন বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলছে, বহুল আলোচিত এই দুই ঘটনার পাশপাশি আসন্ন বাজেটে পাচারকৃত অর্থসহ কালো টাকাকে বৈধতা প্রদানের সুবিধা আরো বিস্তৃত করার যে পরিকল্পনার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাতে এমন আশঙ্কা করাটা অমূলক হবে না যে, অনৈতিক ব্যবসায়িক চর্চাকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে অবিলম্বে ব্যবসা খাতের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত শূন্য সহনশীলতা’ নীতি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে চিকিৎসাধীন পাঁচজন ব্যক্তির প্রাণহানীর ঘটনার বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই মর্মান্তিক ঘটনায় বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ সামনে এসেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, যে আইসোলেশন ইউনিটে আগুন ধরেছিল সেখানে দাহ্যপদার্থ নির্মাণসামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রগুলো ছিলো মেয়াদোত্তীর্ণ। এমতাবস্থায় ঘটনার তদন্তে যে কমিটি করা হয়েছে, তারা যেকোনো ধরনের প্রভাব উপেক্ষা করে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন দেবেন এবং তাতে যদি ‘অপরাধমূলক গাফিলতির’ প্রমাণ পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণসহ আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম মূলভিত্তি আইনের দৃশ্যমান প্রয়োগ’ এমন মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, অনৈতিক ব্যবসায়িক সুবিধা নিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতকে প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন প্রভাবশালীরা। বরাবরের মতো এবারো যদি তারা সরকারের ‘প্রত্যক্ষ মদদে’ দায়মুক্তি পেয়ে যান, সেটা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা নীতির’ সরাসরি বরখেলাপ।
ড. জামান বলেন, আসন্ন বাজেটে আবারো কালো টাকা সাদা করার সুযোগই কেবল দেয়া হচ্ছে না বরং পাচারকৃত অর্থসহ এর আওতা আরো বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। দুর্নীতি দমনের ঘোষণা আর দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদকে বৈধতা দেয়া শুধু পরস্পরবিরোধী নয় বরং অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক। বছরের পর বছর এই সুবিধা দিয়ে দেশের অর্থনীতির কোনো দৃশ্যমান উপকার হয়নি, উল্লেখযোগ্য কোনো বিনিয়োগ হয়নি। অথচ অনৈতিকতা প্রশ্রয় পেয়েছে আর সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমন বাস্তবতায় সরকারকে এই আত্মঘাতী পদক্ষেপ থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বিশ^াস করতে চাই, দেশের সরকার এখনো মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষীর হাতে জিম্মি হয়ে যায়নি।