২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মাছ আহরণেই ৪৩ পরামর্শক

সমুদ্রে মাছ আহরণ শিখতে বিদেশ সফর; সরকারি জলযান চালাবে বেসরকারি ফার্ম
-

দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়ের খাতগুলো প্রশ্নবিদ্ধ। রাষ্ট্রের এই অর্থগুলোর সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। মাছ আহরণের জন্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকার একটি পাইলট প্রকল্পেই ৪৩ জন পরামর্শকের প্রস্তাব দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। নদীমাতৃক এই দেশে সমুদ্রে মাছ আহরণের জন্য বিদেশে শিক্ষাসফরে যেতে হবে কর্মকর্তাদের। প্রকল্পে দরকার না থাকলেও কর্মকর্তাদের বিদেশসফর থাকতেই হবে। আবার প্রয়োজন যতটা, তার চেয়ে বেশি তারা এই খাতে বরাদ্দ করছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা অভিমত ব্যক্ত করেন। আর সরকারি অর্থে জলযান কিনে সেই জলযান চালাবে বেসরকারি ফার্ম বা প্রতিষ্ঠান, যা নিয়ে কমিশনের প্রশ্ন।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক এলাকার (ইইজেড) গভীর সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় টুনা এবং সমজাতীয় মাছের প্রাপ্যতা যাচাই ও আহরণে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্যই এই প্রকল্পটি। এ ছাড়া এই বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন, প্রশিক্ষিত জনবল তৈরিও প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৪৩ জন পরামর্শক, সরকারি অর্থে কেনা তিনটি জলযান বেসরকারি ফার্ম দিয়ে পরিচালনা, বৈদেশিক শিক্ষাসফর, শ্রমিক নিয়োগ, তিনটি জলযান ক্রয় ইত্যাদি।
জানা গেছে, বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জিডিপিতে এই খাতের অবদান কমছে। আমাদের প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় প্রায় ৬০ শতাংশ আমিষের জোগান দেয় এই মাছ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯-এর তথ্য মতে, এ দেশের মোট জিডিপির সাড়ে ৩ শতাংশ এবং মোট কৃষিজ আয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বা ২৫.৭১ শতাংশ মৎস্য খাত থেকে আসে। বিগত ১০ বছরে এই খাতে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশের বেশি বা এক কোটি ৯০ লাখ লোক এই খাতের বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। বিশ্বে ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ প্রথম এবং তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ। জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান। বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে।
খোদ সরকারি তথ্যানুযায়ী, জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান গত ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে কমছে। ওই অর্থবছরে অবদান ছিল ৩.৭৩ শতাংশ। যা প্রতি বছর কমতে কমতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে হয়েছে ৩.৫৭ শতাংশ। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এটা আরো কমে হয়েছে সাড়ে ৩ শতাংশ। মাছ উৎপাদন বাড়লেও জিডিপিতে অবদান কমছে। এ দিকে বঙ্গোপসাগরে গবেষণা ও জরিপ কার্য পরিচালনার জন্য ‘আরভি মীন সন্দানী’ কর্তৃক ২৪টি ক্রুজ সম্পন্ন হয়েছে। পরিচালিত ২৪টি ক্রুজের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে মোট ৪৩০টি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩৬৪টি প্রজাতির মাছ ও হাঙর, ২৩ প্রজাতির চিংড়ি ও লবস্টার, ১৬ প্রজাতির কাঁকড়া এবং ১৩ প্রজাতির সেফালোপোডা ও স্কুইলা শনাক্ত করা হয়েছে।
প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রায় ৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে লাগবে ৪৩ জন পরামর্শক। যাদের পেছনে সাড়ে চার বছরে খরচ হবে ১২ কোটি ৮১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বছরে এই খাতে ব্যয় হবে ৩ কোটি ২০ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা। আর সমুদ্রে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা অর্জনে কর্মকর্তারা বিদেশে শিক্ষাসফরে যাবেন। তাদের পেছনে খরচ হবে ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর তিনটি জলযান কেনা হবে। যার জন্য ব্যয় হবে ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল না থাকায় এই তিনটি জলযান বেসরকারি ফার্ম দিয়ে চালানো হবে। জলযান পরিচালনা ব্যয়সহ ব্যবস্থাপনা খরচ হবে মোট ৮ কোটি ৬০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রশ্ন, এই প্রকল্পের আওতায় ৪৩ জন পরামর্শকের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যাদের পেছনে খরচ হবে ১২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এই ব্যয়ের কি যৌক্তিকতা রয়েছে। যেখানে পুরো প্রকল্পের খরচই হলো ৪৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের জন্য বিদেশে শিক্ষাসফরের যৌক্তিকা কী?


আরো সংবাদ



premium cement