২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ছাত্রী গ্রামে, ঢাকায় খাবারের টাকা চাচ্ছেন হোস্টেল মালিক

রাজধানী ছেড়েছেন কর্মজীবী নারী ও শিক্ষার্থীরা
-

করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে ইতোমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হোস্টেল ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে অনেক শিক্ষার্থী। কিন্তু এরই মধ্যে ঢাকা থেকে হোস্টেলে থাকা এবং খাবারের টাকা চেয়ে প্রতিদিনই অভিভাবকদের কাছে ফোন করেছন হোস্টেল মালিক। থাকার জন্য প্রতি মাসের সিট ভাড়ার টাকা পরিশোধ করতে ছাত্রীরা রাজি হলেও হোস্টেল মালিকরা খাবারের টাকার জন্যও চাপ দিচ্ছেন। ছাত্রীরা যেখানে প্রায় একমাস ধরে গ্রামে আছেন সেখানে ঢাকায় হোস্টেলের খাবারের টাকার জন্য ফোন করে চাপ দেয়া হচ্ছে তাদের।
গতকাল বুধবার ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদকের কাছে তাদের ওপর এমন অমানুষিক নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। তারা জানান, আমরা প্রায় এক মাস আগে করোনা সতর্কতার শুরুর দিকেই ঢাকার হোস্টেল ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছি। আসার সময়ে আমরা মার্চ মাসের সিট ভাড়া ও খাবারে টাকা পরিশোধ করে এসেছি। ঢাকায় গিয়ে কবে আবার আমরা হোস্টেলে উঠব সেটিও এখনো নিশ্চিত নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ঈদের আগে খোলার সম্ভাবনা নেই। এ দিকে এখন এপ্রিল মাসের সিট ভাড়ার সাথে হোস্টেল মালিক খাবারের টাকাও দাবি করছেন। যদিও আমরা সিট ভাড়া পরিশোধ করতে চাই। এখন মানবিক বিবেচনায় আমাদের খাবার টাকা না নেয়ার জন্য আবেদন করেও কোনো সদুত্তর আমরা পাািচ্ছ না। বরং থাকা এবং খাবারের টাকা পরিশোধ করতে প্রতিদিনই হোস্টেলের মালিক আমাদের অভিভাবকদের কাছে ফোন দিচ্ছেন।
এ দিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, কলাবাগান, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে অসংখ্য ছাত্রী হোস্টেল। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা এবং কোচিংয়ের জন্য এসব ছাত্রী হোস্টেলে সারা বছরই তারা অবস্থান করেন। তবে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর সতর্কতাস্বরূপ অনেকেই চলে গেছেন গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু ঢাকায় না থাকলেও হোস্টেল মালিক ছাত্রীদের কাছ থেকে থাকা এবং খাবারের টাকাও আদায় করছেন।
অনেক শিক্ষার্থী সিট হারানোর ভয়ে অথবা অন্য কোনো কারণেই নিজেদের নাম এবং হোস্টেলের নামও প্রকাশ করতে আগ্রহী নন। তবে মোহাম্মদপুরের এমন একটি হোস্টেলের খোঁজ মিলেছে নয়া দিগন্তের অনুসন্ধানে।
হোস্টেলের নাম ড্যাব ছাত্রী হোস্টেল। ঠিকানা রোড ব্লক ই, ডি/৩৭, ড্যাব ছাত্রী হোস্টেল। মালিকের নাম জাকির হোসেন। জাকিরের সাথে এই হোস্টেলটি পরিচালনা করছেন তার শ্যালক লিপু। সব মিলিয়ে এখানে ৫০ জন ছাত্রী থাকার বন্দোবস্তো রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের সুবিধা এবং সিট সংখ্যার ওপরে প্রতি জন ছাত্রীর সিট ভাড়া নির্ধারণ হয়ে থাকে। এই হোস্টেলে একটি কক্ষে দু’জন শিক্ষার্থী রীতা ও মিতা (ছদ্দনাম) দু’টি সিট নিয়ে থাকেন দুই বছর থেকে। তারা একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। দু’জনেরই গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে। তাদের সিটভাড়া পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা করে। এর মধ্যে সিট ভাড়া তিন হাজার আর দুই বেলার খাবার খরচ আড়াই হাজার টাকা। যদিও তারা এক মাস ধরেই গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন তারপরেও তাদের মতো প্রত্যেকের কাছ থেকেই সিট ভাড়া এবং খাবারের টাকাও দাবি করছেন হোস্টেল মালিক জাকির হোসেন। টাকার জন্য প্রতিদিন অভিভাবকদের কাছে গ্রামের বাড়িতে ফোন করছেন তিনি।
শুধু রীতা আর মিতা নন, নীলক্ষেত এবং লালমাটিয়ার অন্য দু’টি হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা জানালেন একই ধরনের অভিযোগের কথা। করোনায় তারা গ্রামের বাড়িতে চলে গেলেও সিট ভাড়ার পাশাপাশি হোস্টের মালিক প্রত্যেকের কাছেই খাবারের টাকাও দাবি করছেন। অনেক মালিক সময়ের আগে সমুদয় টাকা পরিশোধ না করলে সিট অন্যত্র ভাড়া দেয়ারও হুমকি দিচ্ছেন।
মোহাম্মদপুরের ড্যাব ছাত্রী হোস্টেলের মালিক জাকিরের মোবাইল ফোনে গতকাল দুপুরের পর বেশ কয়েকবার কল দেয়ার পরও তিনি ফোন ধরেননি। তবে জাকিরের শ্যালক লিপু ড্যাব ছাত্রী হোস্টেলের সহকারী পরিচালক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে মুঠোফোনে নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা সিট ভাড়া এবং খাবারের টাকা আলাদাভাবে হিসেব করি না। কোনো শিক্ষার্থীকে যখন সিট ভাড়া দেয়া হয় তখন একটি প্যাকেজের হিসাব করেই টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে হ্যাঁ এ কথা ঠিক যে আমরা সিট ভাড়া এবং খাবারের টাকা হিসাব করেই এই প্যাকেজটি নির্ধারণ করি।
কোনো ছাত্রী হোস্টেলে না থেকে গ্রামের বাড়িতে থাকলেও তার কাছ থেকে খাবারের টাকা দাবি করা যৌক্তিক কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা খাবারের টাকা আলাদা হিসাব করি না। মোট টাকা হিসাব করেই টাকা আদায় করি। তবে যদি কেউ হোস্টেলে না থাকেন এবং এ ক্ষেত্রে খাবারের টাকা কম দিতে চাইলে আমাদের কাছে জানাতে হবে। বাইরে কোনো সাংবাদিকের কাছে গিয়ে জানালে তো সমস্যার সমাধান হবে না। কেউ যদি খাবারের টাকা কম দিতে চান তাহলে আলোচনা করে কিছু টাকা কম নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement