২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনাভাইরাস

নিত্য কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ

ত্রাণসামগ্রীর তালিকায় আলুসহ কৃষিপণ্য যুক্ত করতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি
-

করোনাভাইরাসের কারণে কৃষি তথা খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান তা নিশ্চিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাসের জন্য সরকারি-বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নি¤œবিত্ত বা দিনমজুরদের যে ত্রাণসামগ্রী ও খাদ্য সহায়তা করা হচ্ছে, সেখানে আলুসহ চলতি মৌসুমে উৎপাদিত কৃষি পণ্য সংযুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাসিরুজ্জামান দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, করোনাভাইরাসের এই কঠিন সময়ে আমরা কৃষিপণ্য উৎপাদন এবং কৃষক যাতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সে জন্য সবধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আশা করছি খাদ্য উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে এবং কৃষকও তাদের কৃষিপণ্যের সঠিক মূল্য পাবেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে কৃষিপণ্য মুভমেন্ট হচ্ছে না। যে পরিমাণ আলু আমরা উৎপাদন করেছি, তাতে দুই লাখ টন বিদেশে রফতানি করতে পারতাম। গতবার হয়েছিল ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে ইতোমধ্যে ৩৭ হাজার টন রফতানি হয়েছে। আমরা ধরে নিয়েছিলাম এক লাখ টন দ্রুত রফতানি হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে কৃষকরা আলুর দাম পাবেন কিন্তু করোনার কারণে এই মুহূর্তে রফতানি করা যাচ্ছে না। সে জন্য করোনার কারণে সরকারিভাবে যে প্যাকেটজাত খাবার দেয়া হচ্ছে আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে বলেছি, সেখানে আলুসহ নিত্য কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে। যেহেতু স্থানীয় জেলা প্রশাসনের এলাকায় এটা প্যাকেট হয়, আমরা চাচ্ছি যার এলাকায় যে কৃষিপণ্য যেটা বাজারজাত করতে কৃষকের সমস্যা হচ্ছে সেই পণ্যটা যুক্ত করতে। আলুর মতো পেঁয়াজ বা মরিচকেও ত্রাণসামগ্রীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে, রোপণ হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে।
এ দিকে গত সোমবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সব দফতর-সংস্থা প্রধানকে চিঠি দিয়ে করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদন ও বিপণনব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন-৫ অধিশাখা) কাজী আব্দুর রায়হান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অধীনস্থ দফতর-সংস্থাসগুলোকে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সেগুলো হলোÑ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রতিপালন করে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। বসতবাড়ির আঙিনাসহ সব পতিত জমিতে শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য ফসলের চাষ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়েও জরুরি পণ্য বিবেচনায় সার, বালাইনাশক, বীজ, সেচযন্ত্রসহ সব কৃষিযন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টর, রিপার প্রভৃতি),খুচরা যন্ত্রাংশ, সেচযন্ত্রসহ কৃষিযন্ত্রে ব্যবহৃত জ্বালানি/ডিজেল, কৃষিপণ্য আমদানি, বন্দরে খালাসকরণ, দেশের অভ্যন্তরে সর্বত্র পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় যথারীতি অব্যাহত থাকবে; ঢাকার শেরেবাংলা নগরস্থ ‘সেচ ভবন’ প্রাঙ্গণে কৃষক কর্তৃক উৎপাদিত নিরাপদ সবজি সরাসরি বিক্রয়ের জন্য স্থাপিত প্রতি শুক্র ও শনিবারের ‘কৃষকের বাজার’-এ আসা কৃষিপণ্যবাহী গাড়ি ও সংশ্লিষ্ট কৃষকদের চলাচল অব্যাহত থাকবে। সব কৃষিপণ্যবাহী গাড়ি চলাচল এবং এ সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিদের চলাচল অব্যাহত থাকবে। আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আবাদের লক্ষ্যমাত্র অর্জন নিশ্চিতকরণে সঠিক সময়ে বীজতলা তৈরি, রোপণ, সেচসহ অনান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি সম্পন্নকরণ, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং এর দফতর-সংস্থা ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে এবং কৃষকের পাশে থাকতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠি দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিতরণযোগ্য ত্রাণসামগ্রীতে নিত্যপ্রয়োজনয় কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন-৫ অধিশাখা) কাজী আব্দুর রায়হান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ‘করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করে ন্যায্যমূল পেতে পারেন, সে লক্ষ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিতরণযোগ্য ত্রাণসামগ্রীতে আলুসহ অন্যান্য নিত্যপ্রযোজনীয় কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
গত রোববার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আরো একটি চিঠি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘কারোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করে ন্যায্যমূল্য পেতে পারেন সে লক্ষ্যে ত্রাণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণযোগ্য খাদ্যসামগ্রীর আওতায় আলুসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। ’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাসিরুজ্জামান নয়া দিগন্তকে আরো বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে যেহেতু এই মুহূর্তে আলু বিদেশ রফতানি করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া আলুর মতো মরিচ, পেঁয়াজসহ নিত্য কৃষিপণ্য যেগুলো কৃষক এই মুহূর্তে বাজারজাত করতে পারছেন না, আমরা চাচ্ছি সরকারি ত্রাণসামগ্রীতে এসব পণ্য যুক্ত হোক। পাশাপাশি অন্য যারা ত্রাণ দিচ্ছেন তারাও এক্ষেত্রে এসব পণ্য ত্রাণসামগ্রীতে যোগ করতে পারেন। তাহলে কৃষক তাদের পণ্যের মূল্য পাবেন।


আরো সংবাদ



premium cement