২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ক্রেডিট কার্ডের সুদ নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না ব্যাংক

এখনো গলাকাটা চার্জ আদায় করছে গ্রাহকের কাছ থেকে
-

ক্রেডিট কার্ডের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না বাণিজ্যক ব্যাংকগুলো। এখনো নির্দেশ অমান্য করে গলাকাটা চার্জ আদায় করছে গ্রাহকের কাছ থেকে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ক্রেডিট কার্ডের সুদহার নির্ধারণসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো ইচ্ছেমাফিক গ্রাহকের কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ডের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে না। ব্যাংকগুলোর সেসব সেবায় সর্বোচ্চ যে সুদহার থাকবে ক্রেডিট কার্ডের সুদহার নির্ধারণ করতে হবে তা থেকে ৫ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ সর্বোচ্চ সুদহার যদি ৯ শতাংশ হয়, তাহলে ক্রেডিট কার্ডের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১৪ শতাংশ।
জানা গেছে, এক অংকের সুদহার কার্যকর করতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় ব্যাংকগুলোকে। মুনাফার ওপর করপোরেট কর হার কমানো, একই পরিবারের চারজন পরিচালক রাখার সুযোগ, বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার (সিআরআর) এক শতাংশ কমিয়ে নেয়া, সরকারের আমানতের ৫০ শতাংশ নিজেদের ব্যাংকে বাগিয়ে নেয়া, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করতে সুদহার কমিয়ে নেয়াসহ প্রায় ডজন খানেক সুবিধা নেন ব্যাংকার ও ব্যাংক পরিচালকরা। এসব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে এক অংকের ঋণের সুদহার চলতি এক এপ্রিল থেকে কার্যকর করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, শুধু ক্রেডিট কার্ড বাদে সব ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৯ শতাংশ। ব্যাংকগুলোও এক অংকের সুদহার কার্যকর করতে দুই মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছিল। তারা গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল। ফলে ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংকের সবধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর হয়েছে, এ কারণে ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ হওয়ার কথা ১৪ শতাংশ। তবে অভিযোগ রয়েছে, ক্রেডিট কার্ডের সুদহার এখনো ২৪ থেকে ৩০ শতাংশের উপরে রয়েছে।
বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংকের একজন ত্রেডিট কার্ড গ্রাহক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, সিটি ব্যাংকে তার একটি ক্রেডিট কার্ড আছে। সিটি ব্যাংক এখনো তার উপর ক্রেডিট কার্ডের সুদহার ২৪ শতাংশ আরোপ করছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী তা ১৪ শতাংশের ওপরে হওয়ার কথা নয়। অর্থাৎ, নির্দেশনার চেয়েও অতিরিক্ত ১০ শতাংশ বেশি সুদ আদায় করা হচ্ছে গ্রাহকের কাছ থেকে। এ বিষয়ে সিটি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে আপত্তি জানালেও এর কোনো সদুত্তর দেয়া হয়নি ওই গ্রাহককে।
সিটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের বিষয়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিনের বক্তব্য নিতে গতকাল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা আমান্য করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিটি নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে চলতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী না চললে তা লঙ্ঘনের শামিল। ক্রেডিট কার্ডের সুদহার নিয়ে কোনো ব্যাংক নির্দেশনা অনুযায়ী না চললে আর ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত দল পাঠানো হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে গ্রাহকের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাউকে ছাড় দেবে না।


আরো সংবাদ



premium cement