করোনা সামলাতে পারলে প্রবৃদ্ধি হবে ৭.৮ শতাংশ
৪৫টি দেশের প্রবৃদ্ধি নামবে ২.২ শতাংশে- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। তবে কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ যথাযথভাবে সামলাতে পারলে বাংলাদেশের জিডিপিতে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধির হার হবে ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের ডিজিপির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে চীন ও ভারতসহ ৪৫টি দেশ মিলে উন্নয়নশীল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আগের ৫ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ২ দশমিক ২ শতাংশে নামবে বলে এডিবির নতুন প্রাক্কলন। সুখবর হলো প্রবৃদ্ধি কমলেও বাংলাদেশই থাকবে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সর্বোচ্চে।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি মন্দাক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অব্যাহতভাবে ভালো করছে। তবে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে তার পতনের ঝুঁকিও আছে।
ঢাকাস্থ এডিবির দফতর থেকে প্রকাশিত এশিয়ার অর্থনীতির ওপর এশিয়ান ইকোনমিক আউপলুট ২০২০ বা ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে এসব মন্তব্য ও তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির কিছুটা শ্লথ গতির পেছনে বৈশ্বিক চাহিদায় নেতিবাচক প্রবণতার কথা ব্যক্ত করেছে আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ কারণেও প্রবৃদ্ধি কমবে। এমনকি এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধিও কমে যাবে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীনে ২ দশমিক ৩ শতাংশ, ভারতে ৪ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে এডিবি। অন্য দিকে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সংস্থাটি শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
প্রাথমিক প্রাক্কলনে এডিবি বলছে, করোনার আঘাতের কারণে এ বছর বাংলাদেশ জিডিপিতে শূন্য দশমিক দুই শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক চার শতাংশ হারাবে। তবে বাংলাদেশে এ প্রাদুর্ভাব বড় আকারে ছড়ালে এর ক্ষতিও আরো মারাত্মক হবে। বলা হয়েছে, দ্রুত বর্ধনশীল তৈরী পোশাকের রফতানির বড় বাজারগুলো থেকে চাহিদা হ্রাসে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ৭ দশমিক ৮ শতাংশে নামবে। তবে বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আস্থার উন্নয়ন হলে ২০২১ সালে প্রবৃদ্ধি কিছুটা এগিয়ে ৮ শতাংশে উঠতে পারে বলে আশা করছে এডিবি।
পূর্বাভাসে এডিবি বলছে, শান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অব্যাহত থাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি ও আমদানি কমে যাওয়া এবং পরের বছর পুনরুদ্ধার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতির ও উপযোগী আবহাওয়া বিদ্যমান থাকবে ধরে নিয়ে এই পূর্বাভাস তৈরি করা হয়েছে। তবে এই পূর্বাভাসে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব বিবেচনা করা হয়নি।
এডিবির পূর্বাভাসে বলা হয়, বর্ধনশীল অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জোরালো রয়েছে। উন্নয়ন খাতে সরকারের উচ্চ ব্যয়, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) তেল ও নির্মাণসামগ্রীর আমদানি বৃদ্ধি, উপযোগী বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং রফতানি বাড়াতে সরকারের নীতি সহায়তার ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে রফতানি চাহিদায় বিপর্যয়, ভোগ সঙ্কোচন হলে এবং রেমিট্যান্স কমে গেলে এ প্রবণতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে মূল্যায়ন করতে না পারলেও এ মহামারীর কারণে এর মধ্যেই শ্লথ গতিতে পড়া উন্নয়নশীল এশিয়ার অর্থনীতি চলতি অর্থবছরে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে এডিবি। তবে সেটি সামনের বছরে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। তবে ২০২১ অর্থবছরের জন্য এ অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়িয়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে এডিবির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া রাজস্ব আদায়ে স্বল্পতা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে জিডিপি অনুপাতের কম রাজস্ব আদায় উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এবং দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নে সরকারি ব্যয়কে সহায়তার জন্য করের পরিমাণ বাড়ানো এবং সংস্থাগুলোকে আরো কার্যকর করতে হবে। ব্যাপকভাবে কর সংস্কারের মাধ্যমে রাজস্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো দরকার। ২০২১ অর্থবছরে ব্যক্তি বিনিয়োগ, ব্যবসায় নিয়ন্ত্রক পরিবেশের উন্নতি এবং ব্যাংকগুলোতে এক অঙ্কের সুদহার প্রয়োগের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী দৃষ্টিভঙ্গিতে পুনরুত্থিত হবে। বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে সরকারি বিনিয়োগ দেশীয় চাহিদা বাড়াতে সহায়তা করে। প্রত্যাশিত সরকারি নীতি সহায়তায় বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির উন্নতি শিল্প কার্যক্রমকে প্রসারিত করতে সহায়তা করবে বলে এডিবি মনে করছে।
আর এডিবির ব্যাষ্টিক অর্থনীতি গবেষণা বিভাগের পরিচালক আবদুল আবিয়াদ রয়টার্সকে বলেন, ২২ বছরের মধ্যে উন্নয়নশীল এশিয়ার সর্বনি¤œ প্রবৃদ্ধি এটি। অথবা বলা চলে ২০০৭ সালের অর্থনৈতিক সঙ্কটের পর এমন পরিস্থিতি হয়নি।
কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, আরো তথ্য পাওয়া গেলে এই আউটলুক বা পূর্বাভাস হালনাগাদ করা হবে। কোভিড-১৯-এর অভিঘাত মোকাবেলা ও প্রশমনে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে ও সহযোগিতা করতে এডিবি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোভিড-১৯ এর কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারের সাম্প্রতিক হস্তক্ষেপের প্রশংসা করেন মনমোহন প্রকাশ। তিনি বলেন, আর্থিক প্রণোদনা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে।