২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনাভাইরাস

গুজব ঠেকাতে বাংলাদেশকে গ্রেফতার বন্ধের আহ্বান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

-

করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রমের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ বাক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছে বলে বিবৃতি দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
সংস্থাটি বলেছে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ে যারা কথা বলছে, তাদের এবং অ্যাকাডেমিকদের টার্গেট করা বন্ধ করা উচিত বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে। পাশাপাশি ভাইরাসটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ও সঠিক তথ্য যেন সবার জন্য উন্মুক্ত হয়, সেই আহ্বানও জানানো হয় বিবৃতিতে।
এমন সময় নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি এই বিবৃতি দিলো যখন সাংবাদিকদের তথ্য দেয়ার একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বাংলাদেশের পুলিশ বলছে, গুজব ছড়ানোর অভিযোগে চাঁদপুর, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং কিশোরগঞ্জ থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো ৫০টি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিটিআরসিকে অবহিত করেছে পুলিশ।
পুলিশের মুখপাত্র সোহেল রানা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটিতে আরো লেখেন, ফেসবুকের ৮২টি অ্যাকাউন্ট, পেইজ এবং ওয়েবসাইট সম্পর্কে পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে বলা হয়, মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে করোনাভাইরাস সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক, বিরোধীদলীয় অ্যাক্টিভিস্ট ও ছাত্রসহ অন্তত ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, কোভিড-১৯ সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধ করা সরকারের দায়িত্ব হলেও যারা দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করছে, তাদের মুখ বন্ধ করে দেয়া কোনো সমাধান নয়।
সরকারের উচিত মানুষের বাক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ না করা এবং ভাইরাস সংক্রমণ রোধ, সুরক্ষা ও প্রতিকারে কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা সম্পর্কে যথাযথ তথ্য দিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করা।
২৫ মার্চ বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে যেখানে টেলিভিশন চ্যানেলে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত গুজব ও উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার পর্যবেক্ষণ করতে ১৫ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে ওই নির্দেশটি পরদিনই বাতিল করে দেয়া হয়।
শুধু গণমাধ্যমই নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্টরাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
ভাইরাস নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করায় দুইজন কলেজ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এপিডেমোলজিকাল মডেলিংয়ের ওপর ভিত্তি করে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করায় এক গবেষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশী ওই গবেষকের প্রতিবেদনটিতে অনুমান করা হয় যে ২৮ মের মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ৯ কোটি মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা যেতে পারে এবং পাঁচ লাখের বেশি মানুষ মারা যেতে পারে।
ওই গবেষণা প্রতিবেদন সম্পর্কে এবং এর গবেষকের বিরুদ্ধে হওয়া তদন্তের খবরটি প্রকাশ করে, নেত্র নিউজ নামের একটি গণমাধ্যম গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশে তাদের ওয়েবসাইট ব্লক করা হয়েছে।
এরই মধ্যে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়ে জাতিসঙ্ঘের একটি নথি ফাঁস হয়, যেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ অতি সত্বর ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে পদক্ষেপ না নিলে প্রায় ২০ লাখ মানুষের মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের সুরক্ষা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকার। পাশাপাশি সব ধরনের তথ্য দাবি করা, তথ্য পাওয়া এবং যেকোনো বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য লাভের অধিকারও নাগরিকদের রয়েছে। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি মনে রেখে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তথ্যের অধিকার ক্ষুণœ হয় বলে মন্তব্য করা হয় বিবৃতিতে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ফেসবুক ও টেলিভিশনের ওপর নজরদারি করে মানুষকে গ্রেফতার না করে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের উচিত এই শক্তিটা ভাইরাস দমনে কাজে লাগানো।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্টদের কাজে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং ভাইরাসের বিস্তার ও প্রভাব সম্পর্কে প্রত্যেকে যেন সঠিক তথ্য পায়, তা নিশ্চিত করা উচিত সরকারের।


আরো সংবাদ



premium cement