১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান

প্রযুক্তিতে চলছে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম

-

বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে লকডাউন এবং বাড়িতে আবদ্ধ অবস্থা। বাংলাদেশেও চলছে সাধারণ ছুটি। এককথায় সংক্রমণ এড়াতে ঘরেই বন্দী মানুষ। আত্মীয়স্বজনের সাথেও দূরত্ব বজায় রাখছেন বেশির ভাগ লোকজন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে রাজনৈতিক দলগুলোও দৃশ্যত তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের কমিটি গঠন পুনর্গঠন বন্ধ রেখেছে বিএনপি। সুতরাং সবারই মনে প্রশ্ন বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সময় কাটছে কিভাবে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, সব নেতা বাসাবাড়িতেই সময় পার করছেন। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না। তবে জরুরি বা বিশেষ প্রয়োজনে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে (ভিডিও কনফারেন্স) যুক্ত হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে দলটির হাইকমান্ড। জনগণকেও সতর্কভাবে ঘরে থাকা এবং সরকারি নির্দেশ ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান বিএনপি নেতারা। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েই হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।
এ দিকে বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটিতে বিপদে পড়া খেটেখাওয়া মানুষকে মানবিক কারণে খাদ্য সহায়তার জন্য পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে নেতাকর্মীরা সাধ্যমতো সারা দেশেই অসহায় খেটেখাওয়া মানুষের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এসব কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর থেকে নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু।
জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়ে বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় কোয়ারেন্টিনে আছেন। তার সাথে কোনো নেতার সাক্ষাৎ হচ্ছে না। ১৪ দিনের জন্য তিনি কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। কেবল চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউ তার সাথে সাক্ষাৎ করবেন না। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সবাই ঢাকার বাসায় কোয়ারেন্টিনে আছেন। কেবল আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতারা বাসায় অবস্থান করলেও নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মীদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। এরই মধ্যে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে গত মঙ্গলবার বাসায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও গত ২৬ মার্চ দলীয় কার্যালয় ছেড়ে বাসায় উঠেছেন। তবে সাংগঠনিক প্রয়োজনে অফিসে এসে দাফতরিক কার্যক্রমও করছেন।
এরই মধ্যে গত সোমবার টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে স্থায়ী কমিটির বৈঠক করেছে বিএনপি। সেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও যুক্ত ছিলেন। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে বাড়িতেই লকডাউনের ভেতরে আছি। কোথাও যাচ্ছি না। অন্যের সাথে দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ রেখেছি। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম টেলিফোনের মাধ্যমেই সেরে নিচ্ছি। বাড়িতে থেকে নিয়মিত ছাদের ওপর হাঁটাহাঁটি এবং নামাজ-কালাম পড়ছি। তবে এরই মধ্যে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকও করেছি। বর্তমান পরিস্থিতি চলমান থাকলে এ ধরনের বৈঠক আরো হবে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং সংক্রমণ রোধে জনগণের উদ্দেশে এরই মধ্যে ফেসবুকের মাধ্যমে একটি ভিডিওবার্তা দিয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত ধুতে হবে। ঘরবাড়ি ও আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। করোনা মারাত্মক ছোঁয়াচে ভাইরাস। সুতরাং এ জন্য সরকার কী করল না করল সেটি না দেখে আমাদের নিজেদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ঘরের বাইরে না যাওয়াটা এখন খুব জরুরি।
করোনা পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতারা কী করছেন, জনসাধারণের উদ্দেশেই এ বিষয়ে বার্তা কী, জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমি ঢাকায় আছি, ঘরে আছি। করোনা রাজনীতির কোনো বিষয় নয়। ঘরে থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় জরুরি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। সবাইকে ঘরে নিরাপদ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। আমিও ঘরে আছি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বাসায় থেকে দিন কাটছে। বাংলা অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত করি, নামাজ পড়ি, পরিবারের সাথে গল্প করি, মোবাইলে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আর উপায় দেখি না। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করি যেন এই মহামারী থেকে সৃষ্টির সেরা মানুষকে রক্ষা করেন। একই সাথে বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী তিন মাস সরকারিভাবে দেশের অন্তত এক কোটি মানুষকে রেশন দেয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু বলেন, তিনি মধ্য রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় ও কুরআন তেলাওয়াত করেন। ফজর নামাজ শেষে পরিবার, দেশের জনগণ, বিশ্বের সব মানুষ, খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনা এবং করোনা মহামারী থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। এরপর বিভিন্ন বই, অজিফা এবং খবরের কাগজ পড়েন। সকালের নাশতা শেষে পারিবারিক বিভিন্ন কাজ এবং প্রকৌশল বিদ্যায় অধ্যয়নরত ছেলের পড়ালেখার বিষয়ে সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকা মুন্সীগঞ্জ-১ এর নেতাকর্মী ও জনগণকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সাহায্য করছি এবং সারা দেশের নেতাকর্মীর খোঁজখবর রাখছি। বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, তিনি বাসায় থেকে পরিবারকে সময় দিচ্ছেন। নামাজ কালাম পড়ে পরিবারকে সময় দেন। এ ছাড়া দলীয় কার্যক্রমের বিষয়ে মোবাইলে খোঁজখবর নেন। নির্বাচনী এলাকার লোকজনের সাথে যোগাযোগ রাখেন। এ সময়ে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে বলেন তিনি।
সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের খোঁজ নিয়ে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর। করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি অসহায় গরিব মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতার নির্দেশনা দিচ্ছেন। জানতে চাইলে বিএনপির সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু নয়া দিগন্তকে বলেন, একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে পার্টির নেতাদের রাখার চেষ্টা করছি। আসলে রাজনৈতিক কর্মীদের কোনো ছুটি থাকে না। দেশের দুঃসময়ে তাদেরকে আরো বেশি কাজ করতে হয়। তা না হলে জনগণ হতাশায় ভুগবে। বর্তমানে মাঠের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও মোবাইলের মাধ্যমে সাংগঠনিক জেলা এবং নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কথা বলে কুশলবিনিময় করছি। সতর্ক হয়ে আমরা দাফতরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। করোনায় কর্মহীন গরিব মানুষকে সাধ্যমতো সহযোগিতার জন্য নেতাদেরকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। আমিও নিজের এলাকায় সাহায্য করব ইনশা আল্লাহ।


আরো সংবাদ



premium cement