১১২তম জন্মদিনে ঘরে একা
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ৩০ মার্চ ২০২০, ০০:৩৯
ব্রিটেনের হ্যাম্পশায়ার কাউন্টির অলটন শহরের ১১২ বছর বয়স্ক সাবেক শিক্ষক বব ওয়েটনকে বর্তমানে বিশ্বের বয়স্কতম মানুষ মনে করা হয়। জাপানের চিতেতসু ওয়াতানাবের মৃত্যুর পর গত মাসে মি. ওয়েটনের ভাগ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষের খেতাবটি জোটে। ফলে, এবার স্বজনদের নিয়ে বড় আকারে জন্মদিন পালনের আয়োজন করেছিলেন তিনি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সব আয়োজন ভেস্তে গেছে। জন্মদিনে তিনি গতকাল রোববার কেয়ার হোমে তার ছোট ঘরে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে। প্রেস অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, সব কিছু বাতিল, কেউ আসবে না, কোনো উৎসব হবে না।
দুই বিশ্বযুদ্ধে বেঁচে যাওয়া বব ওয়েটন করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, তার মতে পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে না এই ভাইরাস কতটা ভয়ঙ্কর এবং বাঁচতে গেলে ঠিক কী করতে হবে। পুরো পৃথিবীর অবস্থা কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে গেছে। কি জানি শেষ পর্যন্ত কী হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমরা জানতাম কী করতে হবে, আমাদের লক্ষ্য কী... কিন্তু কেউ এখন পর্যন্ত জানে না কিভাবে এই ভাইরাসকে কব্জা করা যাবে, এর শেষ কোথায়।
স্প্যানিশ ফ্লু নামে যে ভাইরাস মহামারীতে ১৯১৮ সালে বিশ্বজুড়ে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল, তখন মি. ওয়েটনের বয়স ছিল ১০। তবে তার পরিবার ১০০ বছর আগে ওই ভয়াবহ মহামারীর শিকার হয়নি।
পরে বড় হয়ে ওই মহামারীর কথা আমি ইতিহাস বইতে পড়েছি। ওই বয়সে আমি তখন তেমন কিছুই বুঝিনি, কারণ আমার কোনো ভাই বা বোন বা ঘনিষ্ঠ কেউ ওই রোগে মারা যায়নি। তিনি বলেন, ১০০ বছর আগে ওই সময়ে শিশুরা বাইরের জগত সম্পর্কে খুব কমই জানতো। সে সময় একজন শিশুর জগৎ প্রাপ্তবয়স্কদের জগতের থেকে একদম আলাদা ছিল। শিশুরা সংবাদপত্র পড়ত না। রেডিও ছিল না যে আপনি রেডিওতে খবর শুনতে পাবেন। এখন তো নানা দিক থেকে আসা খবরে ছোট-বড় সবাই সর্বক্ষণ নিমজ্জিত থাকেন।
তার মতে এতদিন বেঁচে থাকার রহস্য : মি. ওয়েটন বলেন, কোনো গোপন ফর্মুলা নেই তার কাছে। তবে তিনি বলেন, আমি কখনোই বৃদ্ধ হতে চাইতাম না, মৃত্যুর কথা ভাবতাম না। তবে তিনি মনে করেন, বইপড়া থেকে শুরু করে উইন্ড-মিলের মডেল তৈরির মতো নানা বিষয় নিয়ে তার নিরন্তর আগ্রহ তাকে এতদিন পর্যন্ত সচল রাখতে সাহায্য করেছে।
১১২ বছরে শুধু ব্রিটেনেরই নয়, সারা বিশ্বের মোড় ঘোরানো সব ঘটনা-দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছেন বব ওয়েটন।
জীবদ্দশায় এখন পর্যন্ত তিনি ব্রিটিশ রাজ-সিংহাসনে পাঁচজনকে বসতে দেখেছেন। ২২ জন প্রধানমন্ত্রী দেখেছেন, দেখেছেন ২১ জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
দুটো বিশ্বযুদ্ধই তার চোখের সামনে হয়েছে। এবং স্প্যানিশ ফ্লু, কলেরা এবং গুটিবসন্তের মতো ভয়াবহ মহামারী থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
বব ওয়েটন তিন সন্তানের বাবা, তার নাতি-নাতনীর সংখ্যা ১০ এবং প্রপৌত্র প্রপৌত্রী ২৫ জন। দুর্ভাগ্য যে করোনাভাইরাসের কারণে ১১২তম জন্মদিনে এই প্রিয়জনদের সান্নিধ্য এ বৃদ্ধ মানুষটির কপালে জুটল না। বিবিসি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা