২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কান ধরে শাস্তি দেয়া এসি ল্যান্ডকে প্রত্যাহার

মনিরামপুরে ৩ বৃদ্ধকে কানে ধরে ওঠবস করানোসহ দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করছেন এসি ল্যান্ড সাইয়েমা হাসান; ইনসেটে সাইয়েমা : নয়া দিগন্ত -

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জারি করা অবরোধ পরিস্থিতি তদারকি করতে গিয়ে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসান কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তিকে কানে ধরে শাস্তি দেন এবং সেই ছবি তোলেন। এর জেরে গতকাল তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যশোরের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত সাইয়েমা হাসানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক বলেন, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ঘটনার ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয় এবং তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার সামাজিকমাধ্যমে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে যেখানে দেখা যায়, যশোরের মনিরামপুর উপজেলার একটি বাজারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে এক নারীর সামনে দুজন বয়স্ক পুরুষ কান ধরে দাঁড়িয়ে আছেন এবং ওই নারী তাদের ছবি তুলছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই নারী মনিরামপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) যিনি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জারি করা লকডাউন পরিস্থিতি তদারকি করতে গিয়ে বাজারে থাকা কয়েকজনকে এমন শাস্তি দেন। এ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর ওই সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইউসুফ হারুন জানান, তিনজন প্রবীণ নাগরিকের সাথে অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ করায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা তিনজন বয়স্ক নাগরিককে মাস্ক না পরে বের হওয়ার কারণে কান ধরে উঠবোস করার শাস্তি দেন, যেটি আইনসঙ্গত আচরণ নয়।
তিনি বলেন, আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল কর্মকর্তাকে বলেছি, তারা যেন নাগরিকদের বুঝিয়ে তাদেরকে বাড়িতে পাঠান। কান ধরে উঠবোস করার মতো শাস্তি দেয়ার অধিকার কোনো কর্মকর্তার নেই এবং এটি সংবিধান সম্মতও নয়। এ ছাড়া মানুষজন প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে তাদের সাথে এ ধরনের আচরণ করা যৌক্তিক নয় বলেও মন্তব্য করেন জনপ্রশাসন সচিব। তবে বোঝানোর পরও যারা নিয়ম ভঙ্গ করছে তাদের জন্য সীমিত আকারে মোবাইল কোর্টের শাস্তি প্রযোজ্য হতে পারে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, যাদের কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা কিন্তু থাকছে না বা যারা অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্টের শাস্তি প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু তা কখনোই কান ধরে উঠবোস করানো বা শারীরিক প্রহারের মতো শাস্তি হতে পারে না।
এছাড়া অবরোধ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রাস্তায় বের হওয়া নাগরিকদের মারধর করছেন, এমন খবর ও ছবি ছড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় মানুষের মধ্যে।
এ দিকে যশোরে অফিস জানায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসানের এ ধরনের কাজের আমালোচনা করেছেন।
মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি বলেন, এটা দুঃখজনক। এসিল্যান্ড মোটেও কাজটা ঠিক করেননি।
মনিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি এসিল্যান্ডের এই কাজকে কোনোভাবেই সমর্থন করি না।
জানতে চাইলে সংবাদকর্মীদের সাথে এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসান কানে ধরানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তাদেরকে মাস্ক ব্যবহার না করার কারণ জিজ্ঞেস করেছি, তারা জবাব দিতে পারেনি। তাই কানে ধরিয়েছি। কাউকে উঠবস করানো হয়নি। কানে ধরানোর বিষয়টি সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, দমন ও নির্মূল) আইন ২০১৮ মতে সঠিক বলে দাবি করেছেন তিনি।
এ দিকে প্রত্যাহার হওয়া এসিল্যান্ডের স্থানে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুফলচন্দ্র গোলদারকে। যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ শনিবার এই আদেশ দেন। সুফলচন্দ্র জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র কমিশনার ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (ভূমি ও হুকুম দখল শাখা) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান উল্লাহ শরিফী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার হোসেন হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, মনিরামপুরের এসিল্যান্ডকে কমিশনারের কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement