২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘরের বাইরে করোনা ভেতরে মশার যন্ত্রণা

-

গত বছর দেশে ডেঙ্গুতে প্রায় দুই শ’ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ বছরও আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এবার তারও অনেক আগেই দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে মানুষ। বর্তমানে গত বছরের মার্চের তুলনায় চার গুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ দিকে সারা বিশ্বের সাথে এখন বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস আঘাত হেনেছে। অনেকজনের প্রাণহানির সাথে আক্রান্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক মানুষ। মহামারী আকারেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার সব সরকারি-বেসরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ, দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। মানুষ যাতে অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি না করতে পারে সে জন্য পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। কিন্তু ঘরে থেকেও শান্তি পাচ্ছে না মানুষ। সকাল-সন্ধ্যা মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হতে হচ্ছে।
কী শীত কী গ্রীষ্ম রাজধানীতে সব সময় মশার অত্যাচার চলতেই থাকে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সারা বছরই মশার ওষুধ প্রয়োগ করে থাকে; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। কোনো এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানোর পর এক দিন হয়তো মশার উপস্থিতি কম থাকে; কিন্তু তার পরদিন থেকেই আবার মশার অত্যাচার শুরু হয়। সিটি করপোরেশন থেকে কোনো এলাকায় সাত দিন পর ছাড়া আর ওষুধ প্রয়োগ করা হয় না। পরিবেশগত কারণে এটা করা হয় না বলে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আর এ ফাঁকফোকরে মানুষকে নিয়মিতই মশার কামড় সহ্য করতে হচ্ছে। গত বছর দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছিল। এডিস মশার কারণে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। স্বাস্থ্য অফিদফতরের তথ্য মতে, গত বছর দেশে এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরেন এক লাখ এক হাজার ৩৭ জন। এ সময়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ২৭৬টি ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর প্রতিবেদন পায়। তারা সব পর্যালোচনা করে ১৭৯ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করে। চলতি বছরেও দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে আগেভাগেই। এখন পর্যন্ত ২৫৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৫০ জন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন। এ কারণে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ঢাকার দুই সিটির ১১টি ওয়ার্ডকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে এসব এলাকায় বেশি বেশি মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সিটি করপোরেশনকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এসব ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছেÑ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২, ১৬, ২৮, ৩১ ও ১ নম্ব ওয়ার্ড এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫, ৬, ১১, ১৭, ৩৭ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ড। দুই সিটি থেকে বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে এসব ওয়ার্ডের মশা নিধনের উদ্যোগ নেয়া হয়; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ওষুধ প্রয়োগের সময় অল্প কয়েক দিন মশার যন্ত্রণা কমলেও কয়েক দিন না যেতেই আবার একই অবস্থা। এ দিকে করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে সিটি করপোরেশন থেকে সে দিকে বেশি নজর দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে মশার ওষুধ প্রয়োগ কমে গেছে আরো। এ কারণে বর্তমানে মশার অত্যাচার চলছে রাতদিন। বিভিন্ন এলাকার নগরবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনার কারণে বর্তমানে সব সময় বাসায় থাকতে হচ্ছে; কিন্তু বাইরে বের হলে যেমন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে তেমনি ঘরে থেকেও ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকতে হচ্ছে। তবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে তাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: শরীফ আহমেদ জানিয়েছেন, মশককর্মীরা নিয়মিত ওষুধ ছিটাচ্ছেন। নতুন করে আরো সাড়ে ৭০০ কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। ওষুধের কোনো সঙ্কট নেই। ভারত ও চীন থেকে সরাসরি ওষুধ আনা হয়েছে। ওষুধের মানও পরীক্ষা করেই প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে নাগরিকদের শুধু সিটি করপোরেশনের ওপর নির্ভর করলে হবে না, নিজেদের পক্ষ থেকেও কিছু উদ্যোগ নিতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও এডিস মশার প্রভাবযুক্ত এলাকাসহ ১০টি অঞ্চলে বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রামের পাশাপাশি অ্যাডভোকেসি সভা করা হয়েছে। এসব সভা থেকে জনগণকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। উত্তরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মমিনুর রহমান মামুন জানিয়েছেন, গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার ডেঙ্গু রোধে আগে থেকেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওষুধ প্রয়োগের বিভিন্ন আধুনিক সারঞ্জাম কেনা হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সহযোগিতায় আমরা এবারো ডেঙ্গু রোধ করতে পারব বলে আশা করছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement