২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনায় বেশি ঝুঁকিতে বিশ্বের যুদ্ধকবলিত অঞ্চলগুলো

-

কোভিড নাইনটিনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বিশ্বের যুদ্ধকবলিত অঞ্চলগুলো। ভঙ্গুর রাজ্যে ধ্বংসযজ্ঞে এর সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়েছে। এর ফলে ব্যাপক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং আন্তর্জাতিক সঙ্কট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। একটি রিপোর্টে কোভিড -১৯ পরবর্তী এমন সাতটি ঝুঁকির কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, কয়েক মাস ধরে চলাচলকে সীমাবদ্ধ রাখার অর্থনৈতিক প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। ‘ করোনা সংক্রমণের কারণে অসময়ে বাধা ও নিষেধাজ্ঞাগুলো বিভিন্নক্ষেত্রে নতুন ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই রোগের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবকে আরো জটিল করে তুলতে পারে। বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো মুদ্রার তরলতা এবং রাজস্ব প্রণোদনার জন্য আরো ভর্তুকির প্রয়োজন হতে পারে’।
বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সংঘাতকে তুলে ধরে এই থিংক ট্যাংকটি উদ্বেগজনক সাতটি ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করেছে। লড়াই-সংঘাত চলছে এমন দেশগুলোর লোকেরা, যুদ্ধের কবলে পড়ে যারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এবং যুদ্ধের কুফল ভোগ করছেÑ করোনার প্রাদুর্ভাব সম্ভবত তাদের জন্য অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। লিবিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইরান ও গাজাকে অকেজো করে ফেলবে; মানুষদের জীবযাত্রাকে দুর্বিষহ করে ফেলছে। সঠিক সময়ে জনগণের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সহায়তা কর্মীদের জন্য অসুবিধাজনক হয়ে পড়ছে। সরকারের গভীর সন্দেহ-অবিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পরিষেবা পৌঁছানোকে অসম্ভব করে তুলছে।
‘লড়াই অব্যাহত রয়েছে এমন জায়গায় কোভিড নাইনটিনের সংক্রমণ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিগুলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাধাগুলোর কারণে কোভিড নাইনটিনের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। ফলে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়া, ইদলিব ও ইয়েমেনের অবরোধ আরোপিত এলাকাগুলো ও সঙ্ঘাত চলছে এমন এলাকার আশপাশের অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ’
আইসিজি বলছে, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে পরিষেবা দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সক্ষমতাও দুর্বল করে তুলতে পারে করোনা। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, এই রোগের সাথে জড়িত বিধিনিষেধ মানবিক ত্রাণ সরবরাহের বাধা সৃষ্টি করবে ’। উদাহরণস্বরূপ এই রোগটি আফগান শান্তি আলোচনার উপর এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানদের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে সম্পন্ন হওয়া শান্তি চুক্তি কার্যকর করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
আইসিজি পর্যবেক্ষণ করেছে, কোভিড নাইনটিন সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রচুর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং সহিংসতার নতুন প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ মহামারীটি হংকংয়ে বেইজিং বিরোধী বিক্ষোভের তীব্রতা হ্রাসকে ত্বরান্বিত করেছে।
‘ইতোমধ্যে সামাজিক বিশৃঙ্খলার প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা গেছে। কেউ কেউ করোনায় সংক্রমিত হওয়ার অভিযোগে চীনের উহান থেকে ফেরত ইউক্রেনীয়দের বহনকারী বাসে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনের বিক্ষোভকারীরা। ভেনেজুয়েলা, ব্রাজিল ও ইতালিতে কারাগারে বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে, বন্দীরা নতুন বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।’
রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, অনেক দেশের সরকারের চীনের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। উহানের প্রাদুর্ভাবের কারণে আফ্রিকার কিছু দেশের সরকারগুলো অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক উচ্চবিত্তরা তাদের নিজেদের শ্রেণীর সার্থের জন্য কাজে লাগাতে পারে। নিজ দেশে নিজেদের শক্তিকে আরো সুসংহত করতে বা বিদেশে তাদের স্বার্থ সন্ধানের জন্য একে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘করোনার প্রাথমিক প্রাদুর্ভাবের ধাক্কা সামাল দেয়ার পরে দায়িত্বজ্ঞানহীন ভুল তথ্য প্রচারের জন্য ও তথ্য গোপন করার জন্য চীনকে দোষারোপ করার চেষ্টা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। করোনা মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাজেহাল অবস্থায় স্বাস্থ্য সঙ্কটে অন্যান্য দেশের উপর প্রভাব বিস্তারের একটি সুযোগ দেখছে চীন’। তবে এই গ্রুপটি আশার আলোও দেখে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্কট চলাকালীন একত্রিত হওয়ায়। উদাহরণস্বরূপ সংযুক্ত আরব আমিরাত ইরানে ত্রাণ প্রেরণ করছে।


আরো সংবাদ



premium cement