২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মা রেফারি, ফুটবলে মেতেছে ভাইবোন

-

স্কুল ছুটি। ঘরের বাইরে যেতে দিচ্ছেন না মা। ঘুরাফেরাও বন্ধ। খেলার মাঠ, পার্ক কিংবা বিনোদনকেন্দ্রে যেতেও মানা। বলা চলে স্কুল- কলেজের শিক্ষার্থীসহ সবাই এখন ঘরকেন্দ্রিক। করোনা সতর্কতায় স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী দেশের সব পরিবার। স্কুল অথবা বাইরের হৈ হুল্লোড় আর খেলাধুলা থেকে সন্তানদের ঘরের ভেতর আটকিয়ে রাখতে প্রত্যেক মা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছেন না। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ! টিভি দেখতে দেখতেই বা আর কতক্ষণ স্কুলপড়–য়া সন্তানরা ঘরে বন্দী থাকতে চায়। ফলে বিকল্প পন্থায় ঘরের মধ্যেই সন্তানের বিনোদনের আয়োজন করছেন অনেক মা।
আশুলিয়ার ইয়াসমিন আক্তার তার তিন সন্তানকে নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে করোনাভাইরাসের সতর্কতাস্বরূপ নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। এক মেয়ে আর দুই ছেলে পড়াশোনা করে স্থানীয় স্কুলে। মেয়ে ক্লাস সিক্সে আর ছেলে দু’টি ক্লাস ফোর আর ওয়ানে। তাদের বাবা এবটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। করোনা সতর্কতায় তিনিও বাড়িতে থেকেই অনলাইনে অফিসিয়াল কাজ করছেন। অফিসের কাজ শেষে তিনিও অল্প বিস্তর সময় দিতে পারছেন তার সন্তানদের।
ইতোমধ্যে দুই দফায় সরকারের পক্ষ থেকে স্কুল বন্ধের ঘোষণায় লম্বা ছুটি পেয়েছে তারা। সরকারের নির্দেশনা মেনে নানাবাড়ি কিংবা অন্য কোথাও বেড়াতে না গিয়ে বাসাবাড়িতেই অবস্থান করছে তাদের পুরো পরিবার। শিশুদের একঘুয়েমি দূর করতে ইয়াসমিন আক্তার বাসায় কিনে নিয়ে এসেছেন ‘টেবিল টপ ফুটবল’।
‘টেবিল টপ ফুটবল’ দেখতে অনেকটাই যেন হুবহু একটি ফুটবল খেলার মাঠ। চৌপায়া বোর্ডের ওপরে অঙ্কিত খেলার মাঠে লাল আর হলুদ জার্সি পরুয়া প্লাস্টিকের তৈরি খেলোয়াড়দের মাঠের বাইরে বসে দু’জনে হাতে চালিত রোলারের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হয়। অনেকটাই যেন ঘরে বসে মাঠের ফুটবল খেলার আনন্দ।
সংসারের কাজের ফাঁকে খেলায় মশগুল হন ইয়াসমিনসহ পুরো পরিবার। মা ইয়াসমিন আক্তার রেফারির দায়িত্ব পালন করেন। মেয়ে রোদেলা আর ছেলে তাওহিদ দু’জনেই দু’পাশে বসে হাতের রোলারের মাধ্যমে ফুটবল গোল পোস্টে দেয়ার চেষ্টা করে। ছোট ছেলে রাইয়্যান খেলার আনন্দে নিজে নিজেই হাতে তালি বাজায়। ভুলত্রুটি হলে মা বাঁশি বাঁজিয়ে থামিয়ে দেন খেলা। সমঝোতা শেষে আবার মাঠে গড়ায় বল। খেলায় বিজয়ী হলে বাবার কাছ থেকে পুরস্কার হিসেবে হাতে আসে রঙ পেন্সিল, মজার ছড়া আর কার্টুনের বই।
অনেক অভিভাবক জানান, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়েই বেশি বিপাকে আছেন তারা। হাইস্কুল, কলেজ কিংবা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঘরে রাখতে মায়েদের কোনো বেগ পেতে হয় না। কেননা তারা নিজেরাই নিজেদের মতো করে সময় কাটাতে পারেন। কিন্তু ছোট ছোট শিশুদের একটানা দীর্ঘ সময় ঘরে রাখতে প্রত্যেক মায়েরই যেন গলদঘর্ম অবস্থা। ফলে কেউ ঘরে নিয়ে আসছেন দাবা কোর্ট আবার কেউবা নিয়ে এসেছেন লুডু। আর যারা কিছুই সংগ্রহ করতে পারছেন না তাদের ভরসা টিভির অন্ষ্ঠুান বা কার্টুন। তবুও প্রত্যেকেরই প্রাণপণ চেষ্টা শঙ্কা কেটে যাক। দূর হোক করেনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব।
এ দিকে প্রথম দফায় গত ১৬ মার্চ ঘোষণা করা হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত ২৪ মার্চ স্কুল বন্ধের এই সময়সীমা বাড়িয়ে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে একটি লম্বা ছুটিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে দেশে এখন মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক লাখ ৩৪ হাজার ১৪৭টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার। সরকারি বেসরকারি মিলে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা আড়াই কোটির কাছাকাছি। শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এক কোটি ৩৭ লাখ। অর্থাৎ একটি বিশাল সংখ্যায় শিশুরা এখন ঘরকেন্দ্রিক একরকম বন্দী। বাইরে যাতায়াতও সীমিত করেছে সরকার। অর্থাৎ মায়েরা সচেতন হলেই নিরাপদ থাকবে সন্তানরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement