২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইংরেজি উচ্চারণে যারা বাংলা বলে তাদের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উন্মোচন করছেন হফোকাস বাংলা -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষা চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে যারা এ দেশে জন্মেও ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলে তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে থেকে যারা বাংলা ভাষা ভুলে গিয়ে বাংলা ভাষার মতো বাংলা বলতে পারে না, ইংরেজি অ্যাকসেন্টে কথা বলে, তাদের প্রতি করুণা করা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বরং তার নিজের দেশের নিজের গ্রামের মানুষের মতো কথা বলতেইতো বেশি স্বাচ্ছন্দ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক ছেলেমেয়ে বাংলা ভাষায় কথা বা নিজের এলাকার কথা বলাটা (আঞ্চলিক ভাষা) ভুলে গিয়ে কেমন যেন ইংরেজি অ্যাকসেন্টে বাংলা বলার চেষ্টা করে। মনে হচ্ছে বাংলা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। যারা এই দেশেই লেখাপড়া শিখেছে।’
তিনি এ সময় ’৭৫ সালে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডকে সমগ্র জাতির মতো তাদের ব্যক্তিজীবনের দুর্ভাগ্য উল্লেখ করে বলেন, জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পর দেশে আসতে না পারায় তাদের ছেলেমেয়েদের বিদেশে থেকে বিদেশের স্কুলে পড়তে হলেও তারা দুই বোন (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) সবসময় চেষ্টা করেছেন তাদের ছেলেমেয়েরা যেন সঠিকভাবে বাংলা বলতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ও রেহানা সবসময়ই ছেলেমেয়েদের বাংলা শেখাবার চেষ্টা করেছি এবং ঘরে বাংলায় কথা বলেছি। কারণ বাংলা ভাষাটা শিখতে হবে।’
নিজেও ভালোভাবে কথা বলার ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ এবং ঢাকার ভাষা মিলিয়েই কথা বলে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ছোটবেলায় ঢাকায় চলে এসেছি সেই ভাষার একটা প্রভাব, আর টুঙ্গিপাড়ায় জন্মেছি তার একটা প্রভাবÑ সব মিলিয়েই বলি, যার মধ্যে কোনো লজ্জা নেই।’
বন্ধবন্ধুকন্যা জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘জাতির পিতা সেই ভাষণে গোপালগঞ্জের শব্দ বলে গেছেন অকাতরে যা মানুষের ভেতর একটা আবেদন সৃষ্টি করেছিল।’
‘জাতির পিতা দ্রুত মানুষের হৃদয়ে, মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। মানুষের কথা বলতে পেরেছিলেন। সেটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষ সেটা কিন্তু গ্রহণ করেছে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে সেখান থেকে ফেলোশিপ প্রদানেও তার সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান। যাতে সরকার পরিবর্তন হলেও এটি আর কেউ বন্ধ করতে না পারে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং হেড অব দ্য অফিস অ্যান্ড ইউনেস্কো রিপ্রেজেন্টেটিভ মিজ বিয়ট্রিজ কালডুন বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বিশ্বের সব মাতৃভাষা সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করায় বিভিন্ন দেশের কোমলমতি শিশুরা নিজস্ব মাতৃভাষায় অনুভূতি ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন এবং প্রধানমন্ত্রীর কন্যা অটিজম আন্দোলনের অগ্রপথিক সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিদেশী কূটনীতিক এবং মিশন প্রধানসহ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, একুশে পদক বিজয়ী, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সমবেতকণ্ঠে সবার অংশগ্রহণে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয় এবং এরপরই অমর একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ বাজানো হয়। শহীদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে পৌঁছেই এর সম্মুখ দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর একটি ম্যুরাল উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার আরিফুজ্জামান নূরুন্নবী যার ভাস্কর।
এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালায় (ইন্টারন্যাশনাল ফোনেটিক অ্যালফাবেট-আইপিএ) লিপান্তর এবং ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ভাষণ ইশারা ভাষায় ও ব্রেইল লিখন-বিধিতে প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানের শেষে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ভবনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির কার্যালয় পরিদর্শন করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement